ধনী দেশগুলো বেশিরভাগ টিকা কিনে নেওয়ার পর অবশিষ্ট পেতে মরিয়া দরিদ্ররা
নানা রকম সঙ্গতি কাজে লাগিয়ে টিকা কেনার কাজে প্রথম থেকেই এগিয়েছিল ধনী দেশগুলো। শীত আসার আগে আগে তারা আরও বেশি চালান অগ্রিম কেনা শুরু করে। ফলে বাকি বিশ্বের জন্য রয়ে গেছে শূন্য পাত্রের তলানির মতো রয়ে যাওয়া অল্পকিছু চালান, যা হয়তো আগামী বছর দরিদ্র দেশগুলো পেতে পারে।
প্রাণদায়ী টিকার এই মহামূল্যবান চালান পেতেই এখন মরিয়া স্বল্প আয়ের দেশগুলো। উচ্ছিষ্টের মতো রয়ে যাওয়া সীমিত সংখ্যক টিকা কিনে নিজ জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষিত রাখতে তাদের মধ্যে এক গোপন লড়াই চলছে, বললেও ভুল বলা হবে না। অন্তত এমন বাস্তবতার কথাই জানিয়েছে একটি আন্তর্জাতিক অধিকার গোষ্ঠী।
বিশ্বের ধনী দেশগুলো এত পরিমাণ অগ্রিম কিনেছে, যা আসলে হয়ে উঠেছে তাদের জন্য এক মজুদ। সেখান থেকে তারা নিজেদের জনগোষ্ঠীকে বেশ কয়েকবার টিকা দিতে পারবে। উন্নত দেশেরা টিকাদান শুরুও করেছে।
তাছাড়া, আগেভাগে কেনার প্রক্রিয়ায় অর্ডার করা হয়েছে বিভিন্ন কোম্পানির প্রার্থী টিকা। গবেষণায় সফল হওয়ার আগে থেকেই এসব অর্ডার দিয়ে রাখা হয়েছিল। ফলে বেশকিছু টিকা বাজারে যদিওবা আসে, তাদের প্রথম চালানের দাবিদার হবে উন্নত বিশ্ব।
চলমান কোভিড টিকাদানের মধ্যেই আরও চালান তারা পাবে। স্বল্প ও অনুন্নত দেশগুলোকে তাই আস্তাকুড়ের উচ্ছিষ্টের মতো টিকার ভাগযোগ নিয়েও লড়তে হচ্ছে।
দরিদ্র দেশের টিকার লাইনে সঙ্গত কারণেই অনেক পিছিয়ে। কোন কোন দেশকে হয়তো গণটিকা চালুর জন্য আরও এক/দু'বছর অপেক্ষা করতে হবে।
দুর্নীতি, যুদ্ধ/সংঘাত কবলিত দেশ ও সেখানকার প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ কবে নাগাদ টিকার নাগাল পাবেন তা বলা দুষ্কর। কিন্তু, শেষে যারা পাবেন সেটা যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করবে, তা প্রায় নিশ্চিত।
গবেষক ও অধিকারকর্মীরা বলছেন, ধনী-দরিদ্রের মধ্যে এক্ষেত্রেও বৈষম্য হবে রাত ও দিনের মতোই স্পষ্ট। জনস হপকিনস ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথের এক পূর্বানুমানিক হিসাবে বলা হয়, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১৫ শতাংশ হলেও ধনী দেশেরা কিনে সংরক্ষিত রেখেছে ৫১ শতাংশ টিকার চালান।
চিকিৎসা সেবা অধিকার গোষ্ঠী মেদেসাঁ সান ফ্রতেঁ এবং ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস এই দুটি সংস্থার পরামর্শক রোজ স্কোরসে। তিনি বিজনেস ইনসাইডারকে বলেন, "সবচেয়ে খারাপ দশা তখন হবে, যখন উন্নত দেশে মহামারী নিয়ন্ত্রণে থাকবে। কারণ, তাদের অধিকাংশ নাগরিক টিকার আওতায় চলে আসবে। কিন্তু একইসঙ্গে আমরা আগামী বছরগুলোতে মধ্য ও স্বল্প আয়ের দেশে বহুজনের কোভিডে মৃত্যু প্রত্যক্ষ করব। ফলপ্রসূ টিকা ও চিকিৎসা আবিষ্কার হওয়ার অনেকটা সময় পরও মৃত্যুর সে মিছিল থামবে না।"
"জীবন-মৃত্যুর এই অসাম্যের চেয়ে বড় আর কোন ব্যবধান হতে পারে, তা আমার জানা নেই। রোগের টিকা আর চিকিৎসা আবিষ্কার হয়েছে জেনেও তার অভাবেই যারা মারা যাবেন –তাদের মানসিক দশাটা একবার কল্পনা করুন। এই আঘাত তাদের স্বজনেরাও কী ভুলে যাবেন!"
তিনি আরও জানান, বর্তমানে বাকি বিশ্ব টিকার চালান পেতে চরম এক লড়াইয়ে নেমেছে। গবেষক এবং শীর্ষ দাতব্য সংস্থাগুলো জানায়, খুব শিগগির এ প্রতিযোগিতা আরও লজ্জাজনক ও মানবেতর পরিস্থিতির জন্ম দেবে।
অক্সফামের স্বাস্থ্য নীতি ব্যবস্থাপক অ্যানা ম্যারিওট বলেন, "একদিকে টিকা কেনার অর্থ সঙ্কট আরেকদিকে টিকার চালান সঙ্কট, বহুদেশ পড়েছে এই দুই বিপদের মাঝখানে। ধণীদেশের কেনার পর অল্পকিছু যে চালান আছে, তা কিনতেও হয়তো এখন প্রতিযোগিতার কারণে চড়ামূল্য দিতে হবে। অধিকাংশ স্বল্প আয়ের দেশের পক্ষেই নিজ অর্থায়নে তখন টিকাদান শুরু করা সম্ভব হবে না।"
- সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার