নিজের প্রচারণায় সরকারি অর্থ ব্যবহারের অভিযোগে পদত্যাগ করেছেন অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর
সরকারপ্রধান কিংবা সরকারদলীয় অন্য কোনো শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্বের নামে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হবে, এর জন্য আবার টাকা খরচ করতে হয় নাকি? অন্তত আমাদের উপমহাদেশীয় প্রেক্ষাপটে চোখ কপালে ওঠার মতোই ঘটনা।
আমরা পৃথিবীর এমন একটি প্রান্তে বাস করি, যেখানে গণমাধ্যমের একটি অংশ নিজে থেকেই এক পায়ে খাড়া থাকে রাষ্ট্রের শীর্ষ নেতাদের সংবাদ প্রকাশ করতে। তাঁদের তুচ্ছাতিতুচ্ছ কোনো ঘটনা কিংবা উক্তিও বাদ পড়ে না গণমাধ্যমের রাডার থেকে। কেননা গণমাধ্যমের ওই অংশটির লক্ষ্যই থাকে ক্ষমতাসীন দলকে তুষ্ট রেখে নিজেদের আখের গুছিয়ে নেয়া!
অথচ পশ্চিম ইউরোপের রাষ্ট্র অস্ট্রিয়ায় এমন ঘটনাই ঘটেছে। আর শুধু তা-ই নয়, এমন ঘটনা ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর সে দেশের সরকারপ্রধান তথা চ্যান্সেলরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্তও শুরু হয়েছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া চ্যান্সেলর শেষ পর্যন্ত পদত্যাগই করে বসেছেন। কিংবা বলা ভালো, পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।
ঠিক কী অভিযোগ অস্ট্রিয়ান চ্যান্সেলর সেবাস্তিয়ান কুর্জের বিরুদ্ধে? তিনি নাকি একটি ট্যাবলয়েড সংবাদপত্রকে হাত করার জন্য সরকারি অর্থের 'অপব্যবহার' করেছেন, যেন সংবাদপত্রটি তার ব্যাপারে 'ইতিবাচক' খবর প্রকাশ করে।
তবে অভিযোদের ভাগীদার কুর্জ একা নন। তদন্ত হবে তিনি ছাড়াও আরও নয় ব্যক্তি এবং তিন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
কুর্জের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ থেকে জানা যাচ্ছে, ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে জনমত জরিপের কাজে রাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়ের টাকা ব্যবহার করা হয়। ওই জনমত জরিপ প্রভাবিত করে নির্বাচনের ফলাফলকে। এবং বলাই বাহুল্য, রাষ্ট্রের পুরো টাকাটাই ব্যবহার করা হয়েছে সম্পূর্ণ দলীয় স্বার্থে।
এছাড়া অভিযোগে আরও বলা হয়, একটি মিডিয়া কোম্পানি ওই জরিপ ছাপার জন্য অর্থ নিয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে টাকা গ্রহণকারী মিডিয়া কোম্পানির নাম বলা না হলেও অস্ট্রিয়ান প্রচার মাধ্যমে পরিস্কার ভাবেই অস্ট্রারাইখ ট্যাবলয়েডের নাম বলা হচ্ছে।
এ ধরনের ঘটনা বিশ্ব ইতিহাসে বিরলই বলা যায় যে নিজের প্রচারণার জন্য অর্থ ব্যায়ের অভিযোগে কোনো দেশের চ্যান্সেলর বা সরকারপ্রধানকে নিজের পদ ছাড়তে হয়েছে। সুতরাং বয়সে তরুণ কুর্জ নিজেকে 'দুর্ভাগা' ভাবতেই পারেন।
কুর্জ চেয়েছিলেন ইউরোপে নিজেকে একজন ক্যারিজমেটিক নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে। একইসঙ্গে রক্ষণশীল আবার প্রগতিশীল একজন ব্যক্তিত্ব হিসেবে ইতোমধ্যেই ইউরোপের অনেক দেশে, বিশেষত জার্মানিতে প্রশংসিত তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পচা শামুকে পা কাটল তাঁর। বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই কিনা যা অতি স্বাভাবিক কিংবা তুচ্ছ ঘটনা, সেরকম একটি ঘটনায় দ্বিতীয়বারের মতো পূর্ণ মেয়াদ শেষ না করেই চ্যান্সেলর পদ থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হলেন তিনি।
তবে পদত্যাগ করা মানেই কি কুর্জের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের সমাপ্তি? তা নয় মোটেই। একেবারে হারিয়ে যাবেন না তিনি। ধারণা করা হচ্ছে, এখনও অস্ট্রিয়ার রাজনীতিতে একজন প্রধান ব্যক্তিত্ব হিসেবেই এখনও থাকবেন।
দলের নেতা হিসেবে তাঁকে উপস্থিত থাকতে দেখা যাবে কেবিনেট মিটিংগুলোতে। বিরোধী দল সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটসের প্রধান বলছেন, চ্যান্সেলর পদ না থাকলেও আড়াল থেকে একজন 'শ্যাডো চ্যান্সেলর' হয়েই থাকবেন কুর্জ।
এদিকে অন্য পর্যবেক্ষকরা আঙ্গুল তুলছেন ক্যারিয়ার ডিপ্লোম্যাট আলেকজান্ডার শ্যালেনবার্গের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের ব্যাপারে। প্রথমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবে সরকারে যোগ দেয়ার পর কুর্জের সঙ্গে কাজ করেছিলেন তিনি।
এদিকে কুর্জের দলের অনেক সদস্যই এখনও আশায় বুক বেঁধে আছেন, কুর্জের পদত্যাগটি হবে সাময়িক ও ক্ষণস্থায়ী। খুব শীঘ্রই আবার নিজ পদে ফিরে আসবেন তিনি।
কুর্জ নিজে অবশ্য পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার সময় বলেন, "এখন প্রয়োজন স্থিতিশীলতা। এই অচলাবস্থা কাটিয়ে ওঠার জন্য আমি সরে দাঁড়াচ্ছি। এতে করে বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।"
তবে, নিজের দলের নেতা হিসেবে বহাল থাকা, এবং পার্লামেন্টে অংশগ্রহণের কথা জানিয়েছেন তিনি। তিনি আরও বলেন "আমি অবশ্যই নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার সুযোগ ব্যবহার করবো।"
এদিকে, কুর্জের পদত্যাগের বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন গ্রিন পার্টির নেতা এবং ভাইস চ্যান্সেলর ওয়ারনার কগলার। এছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী শ্যালেনবার্গের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন তিনি। তাদের মধ্যে "বেশ গঠনমূলক" সম্পর্ক রয়েছে বলে উল্লেখ করেন কগলার।