নিয়ন্ত্রণে না আসা পানশির উপত্যকা দখলে নিতে ‘শত শত’ যোদ্ধা রওনা দিয়েছে: তালেবান
আফগানিস্তানে এখনো তালেবানের নিয়ন্ত্রণে না আসা অল্প কিছু অঞ্চলের একটি পানশির উপত্যকা। রোববার এই উপত্যকা দখলের জন্য 'শত শত' তালেবান যোদ্ধা পানশিরের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে বলে জানিয়েছে কট্টরপন্থী সংঘটনটি।
তালেবান কর্তৃক কাবুল দখলের পর কিছু সাবেক সরকারী সৈন্য জড়ো হয়ে রাজধানীর উত্তরে তালেবান বিরোধী ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত পানশিরে ছোটখাটো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে।
রোববার টুইটারে দেওয়া এক আরবি বিবৃতিতে তালেবান লিখেছে, "স্থানীয় রাজ্য কর্মকর্তারা শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানানোয় ইসলামিক আমিরাতের শত শত মুজাহিদিন এখন পানশিরের নিয়ন্ত্রণ নিতে সেদিকে এগিয়ে যাচ্ছে।"
এদিকে সর্বশেষ উল্লেখযোগ্য তালেবান-বিরোধী ঘাটি নিয়ন্ত্রণকারীদের প্রধান আহমদ মাসুদ বলেন, তিনি এক সপ্তাহ আগে কাবুলে ক্ষমতা দখলকারী গোষ্ঠীটির সাথে শান্তিপূর্ণভাবে আলোচনায় বসার প্রত্যাশা রাখছিলেন। কিন্তু তার বাহিনী যুদ্ধের জন্যও প্রস্তুত।
রোববার পানশির উপত্যকা থেকে টেলিফোনে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে মাসুদ বলেন, "আমরা তালেবানকে বুঝাতে চাই যে, সামনে আগানোর একমাত্র রাস্তা হচ্ছে আলোচনা।"
তিনি আরও জানান, সেখানে তিনি নিয়মিত সেনাদের এবং বিশেষ বাহিনীর অবশিষ্টাংশকে একত্র করেছেন। এছাড়া তার বাহিনীতে স্থানীয় মিলিশিয়া যোদ্ধারাও অংশগ্রহণ করছে।
"আমরা চাই না যে যুদ্ধ শুরু হোক," তিনি যোগ করেন।
৮০'র দশকে আফগানিস্তানের সোভিয়েত-বিরোধী প্রতিরোধের অন্যতম প্রধান মুজাহেদিন নেতা আহমদ শাহ মাসুদের পুত্র আহমদ মাসুদ আরও বলেন, যদি তালেবান বাহিনী উপত্যকা আক্রমণ করার চেষ্টা করে তাহলে তার সমর্থকরা যুদ্ধ করতে প্রস্তুত থাকবে।
"তারা (এই অঞ্চলকে) রক্ষা করতে চায়, তারা যুদ্ধ করতে চায়। যেকোনো সর্বগ্রাসী শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধেই প্রতিরোধ গড়ে তুলবে তারা।"
তবে তালেবান বাহিনী আদৌ তাদের অভিযান শুরু করেছে কি না তা এখনো নিশ্চিত না। একজন তালেবান কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, পানশিরে আক্রমণ শুরু হয়েছে। কিন্তু মাসুদের একজন সহযোগী জানান, উপত্যকার সরু পথ দিয়ে কোন বাহিনীকে প্রবেশ করতে দেখা যায়নি, এবং যুদ্ধেরও কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
১৫ আগস্ট কাবুলের পতনের পর একমাত্র সশস্ত্র লড়াইয়ে তালেবান-বিরোধী বাহিনী গত সপ্তাহে পানশিরের সীমান্তবর্তী উত্তরাঞ্চলীয় বাগলান প্রদেশের তিনটি জেলা পুনরুদ্ধার করেছে।
মাসুদ জানান, স্থানীয় মিলিশিয়াদের নিয়ে এই অঞ্চলে 'রক্তক্ষয়ী' কোন অভিযান চালাননি তিনি।
আফগানিস্তানের বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বকারী একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়ে মাসুদ বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কখনোই উচিত না একটি "সর্বগ্রাসী শাসন ব্যবস্থা"-কে স্বীকৃতি দেওয়া।
এদিকে কাবুলের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা শীর্ষস্থানীয় তালেবান নেতা খালিল উর-রহমান হাক্কানি গোষ্ঠীটির পূর্ব-প্রতিশ্রুতি পুনব্যক্ত করে বলেছেন, সকল আফগানদের ইসলামিক আমিরাতের অধীনে নিরাপদ বোধ করা উচিত, এবং দেশের ৩৪টি প্রদেশেই 'সাধারণ ক্ষমা' ঘোষণা করা হয়েছে।
রোববার আল জাজিরাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে হাক্কানি আরও বলেন, চার দশকেরও বেশি সময় ধরে যুদ্ধরত একটি জাতির শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করছে তালেবান।
আফগান-সোভিয়েত যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী হাক্কানি বলেন, "আমরা পরাশক্তিগুলোকে হারাতে পেরেছি, আমরা আফগান জনগণকে নিরাপত্তাও দিতে পারবো।"
কিন্তু তালেবানের সাথে যুক্ত সবচেয়ে নৃশংস এবং হিংস্র গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত হাক্কানি নেটওয়ার্কের নেতা, এবং যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের কাছে "সন্ত্রাসী" হিসেবে চিহ্নিত হাক্কানি দেশে শান্তি ও নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনবেন, এটা বিশ্বাস করতে পারছেন না অনেক আফগানই।
আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব আফগানিস্তানের শান্তি অধ্যয়নের অধ্যাপক ভিক্টোরিয়া ফন্টান আল জাজিরাকে বলেন, তিনি কাবুলের কর্মচারী এবং ছাত্রদের কাছ থেকে শুনেছেন তারা তাদের আশেপাশে তালেবানের তল্লাশি নিয়ে চিন্তিত।
প্যারিস থেকে তিনি বলেন, "সরাসরি কোনো হুমকি আসেনি, কিন্তু কে কার জন্য কাজ করছে এবং জোট বাহিনীর সঙ্গে কাদের সম্পর্ক ছিল তা খুঁজে বের করার জন্য বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালানো হয়েছে।"
"এবং তারপর এসব লোকদের একটি লিস্টে রাখা হয়েছে। যখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চোখ অন্যদিকে চলে যাবে, তখন এদের সবার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়া হবে বলে ভয় পাচ্ছে তারা।"
- সূত্র: আল জাজিরা