পুঁজিবাজারে দরপতন, অ্যাপলের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও দীর্ঘমেয়াদি সম্ভাবনায় আস্থা রাখছেন ফেসবুকে বিনিয়োগকারীরা
তৃতীয় প্রান্তিকের আয় সংক্রান্ত ফলাফল প্রকাশ করেছে ফেসবুক ইনকর্পোরেশন। সেখানে তাদের আয় বৃদ্ধি ছিল মাঝারি ধরনের। আগের বছরের শেয়ারপ্রতি প্রদত্ত লভ্যাংশের চাইতে যা বেড়েছে ১৮ দশমিক ৮ শতাংশ।
কিন্তু ঘৃণামূলক ও মিথ্যে তথ্য প্রচার-সংক্রান্ত নথি প্রকাশের ফলে ভবিষ্যতে এই ধারাবাহিকতার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তার কথাও স্বীকার করা হয়েছে। তবে তা সত্ত্বেও দীর্ঘমেয়াদি সম্ভাবনার বিচারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম জায়ান্টটির ওপর আস্থা রেখেছে এর বিনিয়োগকারী ও বাজার বিশ্লেষকরা।
বিশ্লেষকদের মতামত নিয়ে জরিপ চালায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বাণিজ্যিক তথ্য ও সংবাদ পরিবেশক ব্লুমবার্গ। জরিপে অংশ নেওয়া ৮০ শতাংশ বিশ্লেষক ফেসবুকের শেয়ার কেনার পরামর্শ দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার ইতিবাচক আভাসদাতাদের কাতারে যোগ দেয় মার্কিন পুঁজিবাজারে বৃহৎ বিনিয়োগ ব্যবস্থাপক সংস্থা রোজেনব্লাট সিকিউরিটিজ।
এদিকে আইফোনে ফেসবুকের তথ্য সংগ্রহ সীমিত করার ঘোষণা দিয়েছে অ্যাপল। এ নিয়ে রোজেনব্লাট স্বল্পমেয়াদি প্রতিকূলতা দেখলেও, দীর্ঘমেয়াদে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির আভাস দিয়েছে।
ফেসবুক শেয়ারের সাম্প্রতিক দরপতনের পরও তাদের দেওয়া আভাস বিনিয়োগকারীদের জন্য বেশ আকর্ষণীয় সম্ভাবনার কথা বলছে।
স্বল্পমেয়াদে অতিরিক্ত দুর্বলতার ঝুঁকি সীমিত—এমন কথা জানিয়ে রোজেনব্লাট বিশ্লেষক মার্ক জেগেটোভিচ বলেন, 'স্বল্পমেয়াদে অতিরিক্ত শেয়ার কিনেছিলেন বিনিয়োগকারীরা। গতরাতে সামান্য মূল্য পরিবর্তন সূচক লেনদেন শেষে এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।'
অর্থাৎ স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগকারীদের উৎকণ্ঠার কারণেই সাম্প্রতিক দরপতন বলে মনে করছেন তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার ৩ দশমিক ৯ শতাংশ মূল্য হারায় ফেসবুক ইনকর্পোরেশনের শেয়ার, যা গত মে মাসের পর সর্বনিম্ন অবস্থানে আসে। একইসঙ্গে, গত ২০০ দিনের লেনদেনে যে গড়মূল্য বজায় ছিল, গত মার্চের পর তা প্রথমবারের মতো কমেছে।
ফেসবুক ইঙ্কের নানান পরিষেবা—হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের নেতিবাচক কন্টেট ও ব্যবসায়িক কৌশল নিয়ে গণমাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রভাবে গত সেপ্টেম্বরের সর্বোচ্চ অবস্থান থেকে ১৭ শতাংশ কমেছে ফেসবুকের বাজারদর। তারপরও ২০২১ সালের বাকি সময়জুড়ে ১৬ শতাংশ দরবৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে তৃতীয় প্রান্তিকের আয় বিবরণীতে বিনিয়োগকারীদের অনেক প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি ফেসবুক। পূর্বধারণার চেয়ে কম আয়ের আভাস দেওয়া হয়েছে সেখানে। অ্যাপলের নীতি কোম্পানিটির বাণিজ্যিক প্রবৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলবে বলেও উল্লেখ করা হয়।
মার্কিন পুঁজিবাজারের প্রাণকেন্দ্র নিউইয়র্কের ওয়ালস্ট্রিটে অবস্থিত বিনিয়োগ ব্যবস্থাপক সংস্থাগুলোও এর ভিত্তিতে তাদের দেওয়া আয় পূর্বাভাস সংশোধন করেছে, তবে তারা দীর্ঘমেয়াদে বেশকিছু ইতিবাচক দিকও উল্লেখ করে। বিশেষ করে, সামাজিক প্লাটফর্ম হিসেবে ফেসবুক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, কোম্পানির আওতাধীন অন্যান্য অ্যাপগুলোর চাঙা বাজার সম্পর্কে আশা প্রকাশ করা হয়। সংস্থাগুলো আরও মনে করছে, অ্যাপলের নিষেধাজ্ঞার প্রভাব কাটিয়ে ওঠার সক্ষমতা ফেসবুকের রয়েছে।
তবে গত দুই মাসের কম সময়ের বাজার লেনদেনে ২০ হাজার কোটি ডলার সামগ্রিক মূল্য হারিয়েছে ফেসবুক। হারিয়েছে ট্রিলিয়ন ডলার কোম্পানির শিরোপা। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ মূল্যায়িত কোম্পানির কাতার থেকে ছিটকে পড়ে। তবে একইসময় কোম্পানিটি প্রযুক্তি খাতের শীর্ষ কোম্পানিগুলোর মধ্যে নিজেদের শেয়ারকে সবচেয়ে সুলভ করে তুলতে পেরেছে ।
বর্তমান বাজার মূল্যায়ন এবং তার সাথে শেয়ারপ্রতি আয় আগামী কয়েক প্রান্তিক পর্যন্ত ডাবল ডিজিট আকারে বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান বিশ্লেষকরা। এমন আভাস বিনিয়োগকারীদের ইতিবাচক রেখেছে।
ফেসবুকে অন্যতম বিনিয়োগকারী এসিএম ফান্ডসের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা জর্ডান কান বলেন, 'ফেসবুক ইঙ্কের উচ্চ সম্ভাবনাই দেখছি আমরা। সমতুল্য অন্যান্য প্রতিযোগী কোম্পানির চেয়ে এর মূল্য এখনও সবচেয়ে সস্তা। দীর্ঘমেয়াদে যতগুণ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, বর্তমানে বলতে গেলে সে তুলনায় ছাড়কৃত মূল্যেই শেয়ার বিক্রি করছে।'
কান আরও মনে করেন, নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশের ফলে নয় বরং বাজারের মৌলভিত্তিগুলোর কারণেই শেয়ার বিক্রি বেড়েছে।
তার মতে, 'সময়ে সময়ে সমালোচনার জোয়ারে ভাসে ফেসবুক। কিন্তু প্রতিকূলতার স্রোত পাড়ি দিয়ে প্রতিবারই তারা মুনাফা দিয়েছে। এক্ষেত্রে তাদের পারফরম্যান্স অসামান্য।'
- সূত্র: আল জাজিরা