পেগাসাসের নজরদারিতে ছিলেন প্রিন্সেস হায়া ও লতিফাও
ইসরায়েলের মোবাইল ফোন হ্যাকিং পেগাসাস সফটওয়্যারের তালিকায় পাওয়া গেছে দুবাইয়ের দুজন রাজকন্যার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরও।
এদের একজন দুবাইয়ের বর্তমান শাসক শেখ মুহাম্মদ বিন রাশিদ আল-মাকতুমের মেয়ে প্রিন্সেস লতিফা ও সাবেক স্ত্রী হায়া বিনতে আল হোসাইন।
এ বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় বিবিসিতে প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায় প্রিন্সেস লতিফাকে জিম্মি করা হয়েছে, ভিডিওটিতে তিনি নিজের প্রাণনাশের আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন।
অন্যদিকে, ২০১৯ সালে প্রাণনাশের আশঙ্কায় দুবাই থেকে পালিয়ে যান প্রিন্সেস হায়া। যদিও সংযুক্ত আরব আমিরাত বরাবরই তাদের দুজনের অভিযোগই অস্বীকার করে এসেছে।
ইসরায়েল ভিত্তিক ফার্ম এনএসও গ্রুপের তৈরি পেগাসাসের তালিকায় বিশ্বের ৫০ হাজার প্রভাবশালী ব্যক্তির ফোন নাম্বারের তালিকায় ছিল তাদের নাম্বারও। বিশ্বের প্রধান প্রধান সংবাদমাধ্যমগুলোতে সম্প্রতি এই তালিকা প্রকাশিত হয়।
তাদের দুজনের নাম্বারও এ তালিকায় ছিল তা প্রকাশিত হওয়ার পর তারা এনএসও গ্রুপের সরকারি ক্লায়েন্টের টার্গেট ছিলেন কিনা এমন প্রশ্ন উঠছে।
এনএসও গ্রুপ এর মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে বলে বিবৃতি দিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। এ ধরনের অনিয়ন্ত্রিত নজরদারি খাতের লাগাম টেনে ধরার আহ্বান জানায় সংস্থাটি। তবে এর মাধ্যমে কোনো অনিয়ম হয়নি বা অপরাধ করেনি- এখন পর্যন্ত এমনটাই দাবি করছে এনএসও গ্রুপ।
গ্রুপটি জানিয়েছে অপরাধী ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্যই সফটওয়্যারটি তৈরি হয়েছে, শুধু কোনো দেশের সামরিক বাহিনী, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাকেই এটি ব্যবহার করতে দেওয়া হয়। মানবাধিকার রক্ষায় এটি ভূমিকা রেখেছে- এমনটাও দাবি করেছে গ্রুপটি।
মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের অনুসন্ধানের প্রথম এই খবর প্রকাশিত হয়। তাদের প্রতিবেদ শুধু অনুমান নির্ভর ও অনিশ্চিত তথ্যে ভরপুর এমন অভিযোগও এনেছে এনএসও গ্রুপ।
গ্রুপটির ব্যাপারে তোলা অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ইসরায়েল সরকার একটি দল গঠন করেছে বলে বিবিসিকে নিশ্চিত করেছে দেশটির একজন সিনিয়র কর্মকর্তা।
এ বছর প্রিন্সেস লতিফা বিবিসিকে জানিয়েছিলেন, তিনই ২০১৮ সালে দুবাই থেকে নৌকায় করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু পালিয়ে যাওয়ার সময় তাকে আটক করে আবার দুবাই নিয়ে যাওয়া হয়।
দুবাইতে নিয়ে তাকে নির্জন অঞ্চলের একটি ভিলায় জেলখানার মতো করে বন্দি করে রাখা হয় বলে জানান তিনি।
তার এই ঘটনা প্রচারের পর বিশ্বব্যাপী তার সাহায্যে এগিয়ে আসার জন্য মানবাধিকার কর্মীরা আর্তি জানায়। তিনি বেঁচে আছে, জাতিসংঘ তার প্রমাণ দেখাতে বলার পর দুবাইয়ের রাজপরিবার জানিয়েছিল 'ঘরে তিনই যত্নেই আছে'।
এরপর বহু মাস প্রিন্সেস লতিফার কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে, তার সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে অপহরণ, নির্যাতন ও ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ এনেছেন প্রিন্সেস হায়া। গত বছর যুক্তরাজ্যের এক আদালত এক রায়ে তার অভিযোগগুলো প্রকাশ করে।
নথি অনুযায়ী, তিনি প্রিন্সেস লতিফা ও ও তার সাবেক স্বামী আরেক মেয়ে শেখ শামসার সঙ্গে কী ঘটেছিল এ ব্যাপারে সন্দিহান হয়ে ওঠার পর থেকেই তাদের দাম্পত্য জীবনে ফাটল ধরতে শুরু করে।
২০১৯ সালে এপ্রিলে তিনি তার দুই সন্তানসহ যুক্তরাজ্যে পালিয়ে যান। শেখ মোহাম্মদের হুমকির কারণে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা ও তার সন্তানদেরও অপহরণ করে জোরপূর্বক দুবাইয়ে নিয়ে যাওয়া হতে পারে- তার এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন আদালত।