ব্যর্থ রাষ্ট্র মেরামতের উপায় নিয়ে বই লিখেছিলেন আশরাফ ঘানি, ব্যর্থতা নিয়ে এখন নিজেই পালালেন!
আফগানিস্তানে দীর্ঘকাল ধরে চলমান সমস্যা সমাধানের উপায় আশরাফ ঘানির চেয়ে ভালো কারো জানার কথা নয়! অন্তত সদ্য সাবেক ও পলাতক এই প্রেসিডেন্টের লেখা বই সেই সাক্ষ্যই দেয়।
২০১৪ সালে দেশটির প্রেসিডেন্ট হন তিনি। দরিদ্র ও যুদ্ধবিধ্বস্ত এই জাতির ভাগ্য উন্নয়নের উপায় নিয়ে গবেষণা করেই জীবনের বেশির ভাগ সময় কেটেছে বর্তমানে ৭২ বছর বয়সী এই রাজনীতিক, শিক্ষাবিদ ও অর্থনীতিবিদের। বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের আগে কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জনের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু অভিজাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও পড়াশোনা করেছেন ঘানি। এমনকি ব্যর্থ রাষ্ট্র মেরামতের উপায় বিশ্লেষণ করে ব্রিটিশ লেখিকা ক্লেয়ার লকহার্টের সঙ্গে যৌথভাবে লিখেছেন 'ফিক্সিং ফেইলড স্টেটস: অ্যা ফ্রেমওয়ার্ক ফর রিবিল্ডিং অ্যা ফ্র্যাকচারড ওয়ার্ল্ড'।
অথচ ৭ বছর প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেও নিজের দেশকেই তিনি গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকি জাতির এক ক্রান্তিলগ্নে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন চোরের মতো!
বলে রাখা ভালো, তালেবানরা ক্ষমতা দখলের পরপর গত রোববার রাতে আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে যান আশরাফ ঘানি। কোথায় গেছেন- এমন জল্পনা-কল্পনা তিনদিন চলার পর জানা যায়, সপরিবারে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাড়ি জমিয়েছেন।
'ফিক্সিং ফেইলড স্টেটস: অ্যা ফ্রেমওয়ার্ক ফর রিবিল্ডিং অ্যা ফ্র্যাকচারড ওয়ার্ল্ড' বইয়ের ব্যাক-পেজ থেকে জানা যায়, 'আজকের দুনিয়ায় ১ বিলিয়নেরও বেশি মানুষের ৪০ থেকে ৬০টি জাতি হয় মুখ থুবড়ে পড়েছে, নয়তো ব্যর্থতার কিনারায় কাটাচ্ছে জীবন। পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ানক সমস্যাগুলো হলো- সন্ত্রাসবাদ, মাদক ও মানব পাচার, দারিদ্র্য, জাতিগত সংঘাত, রোগ ও গণহত্যা। এগুলো এমন চরম আকার ধারণ করেছে, যার সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিলিয়ন-বিলিয়ন ডলার খরচ করছে। অথচ এমন বড় ধরনের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও মিলছে না সাফল্য।'
আরও জানা যায়, আশরাফ ঘানি ও ক্লেয়ার লকহার্ট বহু বছর ধরেই সেই প্রচেষ্টায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন। বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তা, জাতিসংঘের উপদেষ্টা এবং আফগানিস্তানের নতুন (সদ্য ক্ষমতাচ্যূত) সরকারের উচ্চ পর্যায়ে দায়িত্ব সামলিয়েছেন।
দীর্ঘ সেই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই আশরাফ ঘানি ও ক্লেয়ার লকহার্ট যৌথভাবে লিখেছেন, 'ফিক্সিং ফেইলড স্টেটস: অ্যা ফ্রেমওয়ার্ক ফর রিবিল্ডিং অ্যা ফ্র্যাকচারড ওয়ার্ল্ড' বইটি। ২০০৮ সালে প্রকাশিত এ বই শুধু আফগানিস্তান নয়, বিপদগ্রস্ত অন্য দেশগুলোকেও উত্তরণের পথ দেখাবে বলে দাবি করা হয়েছে।
অথচ আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনের সময় তালেবানদের কাছে দেশ ও জাতিতে অরক্ষিত ছেড়ে দিয়ে, 'নিজে বাঁচলে বাপের নাম' মনোভাব নিয়ে ঘানির পলায়ন আসলে তার এক জীবনে অর্জন করা জ্ঞানবুদ্ধিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে!