ব্যর্থ হলো চীন ও ভারতের সেনাবাহিনীর মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনা নিরসনের আলোচনা
সীমান্ত অঞ্চলের বিরোধপূর্ণ এলাকা থেকে সেনাদের সরিয়ে নিতে চীন ও ভারতের সামরিক কমান্ডারদের আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে। কোন পক্ষই ছাড় না দেওয়ায়, গত ১৭ মাস ধরে চলমান অচলাবস্থার নিরসন হয়নি- দেশ দুটির সেনাসূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
প্রায় দুই মাস বিরতির পর গত রোববার লাদাখের চীন নিয়ন্ত্রিত মলদো অংশে দুই দেশের সেনা কমান্ডাররা বৈঠক করেন।
আজ সোমবার (১১ অক্টোবর) ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, "আমাদের পক্ষ থেকে গঠনমূলক পরামর্শ দেওয়া হলেও, চীনা প্রতিপক্ষ তাতে সায় দেয়নি। চীনা প্রতিপক্ষ অগ্রগতির জন্য নিজস্ব প্রস্তাব তুলে ধরতেও ব্যর্থ হয়।" ''
চীনা সামরিক বাহিনীর একজন মুখপাত্র বলেন, "ভারতীয় পক্ষ অযৌক্তিক ও অবাস্তব দাবীতে অনড় থাকায়, তা আলোচনায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।"
সীমান্ত রেখার বিরোধপূর্ণ অঞ্চলে থেকে থেকেই ঘটছে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ও সংঘাতের ঘটনা, এর আগে গত বছরের ১৬ জুন লাদাখ সীমান্তে চীন-ভারত সেনাবাহিনীর হাতাহাতি সংঘর্ষে ২০ ভারতীয় সেনা নিহত হয়। তারপর থেকে উভয় দেশই বিপুল সেনা মোতায়েন রেখেছে।
সাম্প্রতিক আলোচনা ছিল, সংঘাতের ঝুঁকি কমিয়ে যুদ্ধ পরিস্থিতি এড়ানোর সর্বশেষ উদ্যোগ। কিন্তু, তা ব্যর্থ হওয়ায় এবছরের শীতকালেও হিমালয়ে মোতায়েন থাকবে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সেনা ও সরঞ্জাম। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এ পর্বতমালায় হিমশীতল ঠান্ডা অনেক সময় সেনাদের জন্যও প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে।
দুই দেশই কয়েক লাখ সেনা, বিপুল সংখ্যক ট্যাংক, দূরপাল্লার কামান ও জঙ্গিবিমান 'প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা' বলে পরিচিত পার্বত্য সীমান্ত বরাবর মোতায়েন রেখেছে।
এর আগে অবশ্য গত ফেব্রুয়ারিতে কিছুটা অগ্রগতি হয়। এসময় আলোচনার ভিত্তিতেই প্যাংগং সো নামক হিমবাহ হ্রদের উত্তর ও দক্ষিণ পাড় থেকে সেনা প্রত্যাহার করে ভারত ও চীন। তবে কয়েক ধাপের সুরক্ষার অংশ হিসেবে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন অব্যাহত থাকে।
ভারতীয় গণমাধ্যম জানায়, ডেমচক ও ডেমসাং সমভূমিতে বাড়তি সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
এর আগে চীন বিপুল পরিমাণ সেনা ও সমরাস্ত্র মোতায়েন করছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ভারতীয় সেনাপ্রধান। তারপরই রোববারের আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
শনিবার ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল এম এম নারভানে বলেন, "সীমান্তে প্রতিপক্ষ বিপুল শক্তি নিয়োজিত করছে, যা অবশ্যই গভীর উদ্বেগের বিষয়। এ ধরনের মোতায়েন অব্যাহত রাখতে চীনের অংশে সম-পরিমাণ অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে।"
"যার অর্থ, তারা (চীনা সেনারা) এখানে দীর্ঘমেয়াদে থাকতে এসেছে। আমরা এসব অগ্রগতির ওপর ঘনিষ্ঠভাবে নজর রাখছি, তারা যদি এখানে স্থায়ী আস্তানা গড়ে, তাহলে আমরাও স্থায়ীভাবে থাকব," যোগ করেন নারভানে।
এব্যাপারে চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় কমান্ডের জ্যেষ্ঠ কর্ণেল লং শাওহুয়া এক বিবৃতিতে বলেন, "নিজ সার্বভৌমত্ব রক্ষায় গণচীনের প্রতিশ্রুতি অনড় ও অটুট। আমরা আশা করি, ভারত পরিস্থিতি নিয়ে কোন ভ্রান্ত ধারণা রাখবে না।"
এদিকে হিমালয়ের উচ্চভূমিতে জানুয়ারি মাস নাগাদ, তাপমাত্রা হিমাঙ্কের ৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াস নিচে নেমে যায়। এসময় দুই দেশের সেনারা পিছু হটে গ্রীষ্মকালীন অবস্থানে ফিরে যেতো। কিন্তু, ২০২০ সালের মে মাস থেকে তারা শীতকালীন অবস্থানেই রয়েছে।
প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পশ্চিমে লাদাখ ও পূর্বে ভারতের অরূণাচল প্রদেশকে চীন থেকে পৃথক করেছে। তবে দুটি অঞ্চলকেই নিজেদের বলে দাবী করে আসছে চীন।
প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কিলোমিটার সীমান্ত দ্বারা পৃথক দুই বড় প্রতিবেশী ভারত ও চীন ১৯৬২ সালে সীমান্ত বিরোধের ঘটনায় রক্তক্ষয়ী এক যুদ্ধও করে।
গত বছর সীমান্ত বিরোধ শুরু হওয়ার পর থেকেই পূর্ব লাদাখের নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর আবহাওয়ার প্রভাবরোধী কয়েক ডজন অবকাঠামো নির্মাণ করেছেন চীনের সেনা প্রকৌশলীরা। রসদ সরবরাহ ও চিকিৎসা সেবায় গতি আনতে নির্মাণ করা হয়েছে নতুন কিছু হেলিপ্যাড, বাড়ানো হয়েছে বিমান অবতরণ ঘাটির আয়তন।
একইসঙ্গে, রাডার স্থাপনা ও আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন বৃদ্ধি করা হয়েছে। উদ্বেগের সঙ্গে এসব সংবাদ ভারতীয় গণমাধ্যমই জানায়।
- সূত্র: আল জাজিরা