বড় ধরনের ব্যবসার প্রতি চীনের কঠোর দৃষ্টি বহাল থাকবে কয়েক বছর
ব্যবসা খাতে কঠোর ব্যবস্থা আরোপ করেছে চীন। গত বছর বেইজিংয়ের বেসরকারি উদ্যোগগুলোর ওপর নির্ধারিত নিয়ন্ত্রণ আরও কিছুদিন চলবে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। আগামী পাঁচ বছর চীনের প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ জোরদার করার জন্য নতুন পরিকল্পনা করছেন ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ নেতারা।
পঞ্চবার্ষিক এ পরিকল্পনায় একচেটিয়া ব্যবসার ওপর নিয়ন্ত্রণ এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন বাড়ানোর কথা উল্লেখ করা হয়। এছাড়াও, আর্থিক সেবা, শিক্ষা এবং শিক্ষাদানের মতো খাতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে আইন প্রয়োগকারীদের। পার্টিং কেন্দ্রীয় কমিটি ও স্টেট কাউন্সিল যৌথভাবে এ নীতিমালা প্রকাশ করে। তবে নিয়ন্ত্রকদের ঠিক কি কি পদক্ষেপ নিতে হবে তা এই নীতিমালায় স্পষ্ট করেনি কর্তৃপক্ষ।
চীনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক নীতির ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয় এ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। পরিকল্পনাটি ২০২৫ সাল পর্যন্ত বহাল থাকবে। নীতিমালায় বলা হয়, জনস্বার্থ বা 'সামাজিক ন্যায্যতার' বিষয়টি মাথায় রেখে কিছু অর্থনৈতিক খাত নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। এছাড়াও, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা সৃষ্টির জন্য বেসরকারি খাতকে ব্যাপকভাবে দায়ী করেছে নীতি-নির্ধারকরা। তাদের মতে এসকল সমস্যা সমাজকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে এবং ক্ষমতা ধরে রাখার ক্ষেত্রে পার্টির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
দেশটিতে প্রযুক্তি এবং আর্থিক পরিষেবা থেকে শুরু করে প্রাইভেট টিউটরিংয়ের মত শিল্পগুলোর ব্যাপক উত্থানের সময়ই এই নির্দেশনা আসে। বেসরকারি ব্যবসার ওপর বিধিনিষেধ আরোপের কারণে বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীরা ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। এমনকি, এর ফলে পুঁজিবাজারে কোম্পানিগুলোর ব্যবসা করার বিষয়টিও রয়েছে ঝুঁকির মধ্যে।
সম্প্রতি রাইড শেয়ারিং কোম্পানি ডিডির বিরুদ্ধে তাদের ব্যবহারকারীদের সংবেদনশীল তথ্য অসৎভাবে ব্যবহারের অভিযোগ আনা হয়। এছাড়া, অন্যান্য মার্কিন- তালিকাভুক্ত চীনা প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো জাতীয় সাইবার সিকিউরিটি নিয়ম অমান্য করায় সমালোচনায় উঠে আসে। সেই সাথে আর্থিক ঝুঁকি বাড়ানোর অভিযোগে শাস্তি দেওয়া হয়েছে আলিবাবা অধিভুক্ত অ্যান্ট গ্রুপকে। গত বছর বিশ্বের সর্ববৃহৎ ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিংয়ে (আইপিও) অংশগ্রহণের কথা ছিলো অ্যান্ট গ্রুপের। এসকল কোম্পানির পাশাপাশি বেশ কয়েকটি বেসরকারি টিউটরিং ফার্মকেও সতর্ক করা হয় গত মাসে।
এদিকে নতুন নির্ধারিত নিয়মগুলোর কারণে অনেক চীনা কোম্পানি তাদের বাজারমূল্যের ১ ট্রিলিয়নেরও বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এতে করে চীনে বিনিয়োগকারী বড় প্রবক্তারা রয়েছেন দুশ্চিন্তায়।
সফটব্যাঙ্কের (এসএফটিবিএফ) সিইও মাসায়োশি সন বলেছেন যে, নতুন এসকল নিয়মের প্রভাব সুস্পষ্ট হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি চীনে বিনিয়োগের ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন। এছাড়া, ডিডি ও টিকটকের মালিক বাইটড্যান্স ও আলিবাবার অংশীদারও তিনি। সন বলেন, "এটা কি ছয় মাস বহাল থাকবে নাকি ১২ মাস? তবে নতুন নিয়ম ও আদেশের অধীনে এক থেকে দুই বছরের মধ্যে বিষয়গুলো আরও পরিষ্কার হবে বলে আশা করি আমি। এরপরই মূলত আমরা এ দেশে বিনিয়োগ সক্রিয় করতে পারবো।"
এদিকে গত বৃহস্পতিবার চীনের স্টক কিছুটা কম ছিল। হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক (এইচএসআই) ০.৭ শতাংশ কমার পাশাপাশি সাংহাই কম্পোজিট সূচক (এসএইচসিওএমপি) কমে ০.২ শতাংশ।
তবে, বিনিয়োগকারীরা চীনে ব্যবসার জন্য নতুন নিয়ম মেনেই কাজ করবেন বলে লিখেছেন ওয়ান্দায় এশিয়া প্যাসিফিকের সিনিয়র মার্কেট বিশ্লেষক জেফ্রি হ্যালি। "আপাতদৃষ্টিতে কয়েক বছরের জন্য তৈরি করা" এ নীতিমালার প্রতি নিঃশব্দ প্রতিক্রিয়া এ অবস্থারই আভাস দেয় বলেন তিনি।
সূত্র: সিএনএন