বয়স্কদের মধ্যে সিনোফার্মের ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কম: গবেষণা
নতুন একটি গবেষণায় উঠে এসেছে বয়স্ক জনগোষ্ঠীর মধ্যে সিনোফার্ম ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার হার অপেক্ষাকৃত কম। ফলে বিভিন্ন দেশে এই ভ্যাকসিনটি দিয়ে টিকাদান কর্মসূচি চালানোর ব্যাপারে প্রশ্ন উঠছে, জন্ম নিচ্ছে নানা আশঙ্কার।
সিনোফার্মের ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার অন্তত দুই সপ্তাহ পর হাঙ্গেরির ৪৫০ জনের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এই নমুনা পরীক্ষা ও বিশ্লেষণে দেখা যায় ৫০ বছরের কম বয়স্ক ৯০ শতাংশ মানুষের দেহে রোগ প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি সৃষ্টি হয়েছে। তবে বয়স্কদের মধ্যে এই হার কমে এসেছে লক্ষ্য করা যায়। ৮০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে ৫০ শতাংশের দেহেই কোনো অ্যান্টিবডির উপস্থিতি দেখা যায়নি।
এ সপ্তাহেই হাঙ্গেরির দুজন বিজ্ঞানীর করা গবেষণাটি অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে। তবে এটি এখনো অন্যান্য বিজ্ঞানীরা খতিয়ে দেখেনি। গবেষণাটির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না এমন তিনজন বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন ওই গবেষণার পদ্ধতিতে তারা কোনো সমস্যা খুঁজে পাননি।
"উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর মধ্যেই ভ্যাকসিনের কম কার্যকারিতার হারের ব্যাপারটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক," বলেন হংকং ইউনিভার্সিটির ভাইরোলজিস্ট জিন দং-ইয়ান।
অ্যান্টিবডির মাত্রা দিয়েই সরাসরি বলে দেওয়া যায় না একজন ব্যক্তি কোভিড-১৯ থেকে কতোটা সুরক্ষিত। তবে প্রতিনিয়তই প্রমাণ মিলছে এটি অত্যন্ত কার্যকর উপায়। তবে একজন বিশেষজ্ঞ সতর্ক করেছেন টেস্টিং কিটের ধরনের কারণে এই পরিমাপের হিসাবে তারতম্য দেখা যেতে পারে।
তবে তারপরও গবেষণাটির আলাদা গুরুত্ব আছে, বয়স্কদের মধ্যে সিনোফার্মের ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা বিশ্লেষণের এটি প্রথম বৈজ্ঞানিক পদক্ষেপ, বলেন পেকিং ইউনিয়ন মেডিক্যাল কলেজের সাবেক অধ্যাপক রোগ প্রতিরোধ বিদ্যা বিশারদ ড. ওয়াং চেংউয়াং।
এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন। সংস্থাটি জানিয়েছে তারা শুধু সরকারি কিংবা বড় কোনো গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণা নিয়েই মন্তব্য করবে।
গত মে মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পাওয়া ও ৫০টির বেশি দেশে ব্যবহৃত ভ্যাকসিনটির ব্যাপারে এর আগেও নানা প্রশ্ন উঠেছে। তবে অন্যান্য ভ্যাকসিন সরবরাহে সংকট সৃষ্টি হলে সেসব প্রশ্ন স্তিমিত হয়ে পড়ে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একজন মুখপাত্র গত বুধবার জানান, সংস্থাটির বিশেষজ্ঞরা গবেষণাটির ব্যাপারে অবগত আছে এবং তারা সব প্রমাণ খতিয়ে দেখছে। ভ্যাকসিনটি ষাটোর্ধ্ব বয়সীদের সুরক্ষা দিতে সক্ষম কিনা এ ব্যাপারে সংস্থাটির পরামর্শকরাও কয়েক মাস আগে প্রশ্ন তুলেছিল। তবে ভ্যাকসিনের অনুমোদন আসার পরই সংস্থাটির একজন বিশেষজ্ঞ বলেছিলেন, বয়স্কদের মধ্যে আলাদাভাবে কাজ করবে এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই।
রাষ্ট্রায়ত্ত চীনা কোম্পানির তৈরি ভ্যাকসিনটির গবেষণায় দেখা গেছে এর চূড়ান্ত পর্যায়ের ট্রায়ালের সব অংশগ্রহণকারীর বয়স ছিল ৬০ বছরের নিচে। ভ্যাকসিনটি প্রস্তুতকারক গবেষকরাই বলেছিলেন, এটি ষাটোর্ধ্ব বয়সীদের কিরকম সুরক্ষা দেয় এব্যাপারে যথেষ্ট প্রমাণ নেই। সার্বিকভাবে ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতার হার ৭৮ শতাংশ।
এই আশঙ্কার কারণে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে বয়স্কদের বিনামূল্যে অ্যান্টিবডি টেস্ট করানো হচ্ছে। অ্যান্টবডির কম উপস্থিতি সাপেক্ষে তাদেরকে বুস্টার শট দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনও ঘোষণা দিয়েছে দেশটিতে সিনোফার্মের ভ্যাকসিন নেওয়া বয়স্কদের তৃতীয় ডোজ দেওয়া হবে। সিনোফার্মের ভ্যাকসিন নেওয়া থাকলেও বয়স্ক ও ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে ফাইজারের ভ্যাকসিন দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বাহরাইনে।
তবে ভ্যাকসিনটি প্রস্তুতকারক কোম্পানি জানিয়েছে, ক্লিনিক্যাল গাইডলাইনে তৃতীয় ডোজের কথা উল্লেখ নেই।
বেইজিং ইন্সটিটিউটের সিনোফার্ম ভ্যাকসিনের ঠিক কতো ডোজ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়েছে এব্যাপারে এখনো নিশ্চিত তথ্য জানা যায়নি। সব মিলিয়ে চীন এ বছরের প্রথমার্ধে ৫০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন রপ্তানি করেছে।
অন্যদিকে, কোভ্যাক্স কর্মসূচির জন্য গ্যাভি সম্প্রতিই ৫৫ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন অর্ডার দিয়েছে।
সিনোফার্মের দুটি ভ্যাকসিনই চীনে ব্যবহৃত হচ্ছে। বয়স্কদেরও এই ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন গত এপ্রিলে জানিয়েছে, ভ্যাকসিনটি কোভিডের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়, তবে ষাটোর্ধ্ব বয়সীদের মধ্যে সুরক্ষার মাত্রা কম হতে পারে বলেও জানিয়েছিল কমিশন।
- সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস