যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন: হোয়াইট হাউজ কার দখলে থাকবে?
আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরই যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরু হবে। নানা কারণে ঐতিহাসিক হয়ে উঠছে এবারের নির্বাচন। লোকজন আগাম ভোট দিয়ে দিয়েছেন অধিকাংশ এলাকায়। শতাব্দীর সবচেয়ে বিপর্যয়কর মহামারির মধ্যে এ নির্বাচন নিয়ে জটিলতা প্রকাশ্য হয়ে উঠেছে ইতোমধ্যেই।
এবার ভোটের মধ্য দিয়ে কোনও একজন প্রার্থী জয় ছিনিয়ে আনবেন, নাকি নতুন প্রেসিডেন্ট হওয়ার লড়াই শেষমেশ আদালত পর্যন্ত গড়াবে তা নিয়ে গভীর সংশয় আছে।
দুনিয়াজুড়ে বিভিন্ন দেশের সরকার এখন উৎকণ্ঠা নিয়ে তাকিয়ে আছে এ নির্বাচনের দিকে। তবে প্রতিবার যেমন করে নজর থাকে কে প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন তা দেখার জন্য, এবার তা হচ্ছে না। কারণ, হারলে পরাজয় মেনে নেবেন কিনা; নির্বাচনী প্রচারকালে তা নিয়ে ব্যাপক সংশয়ের জন্ম দিয়েছেন ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবার সবার চোখ তাই ভোট পরবর্তী অনিশ্চয়তায়। বিশ্লেষকরাও ট্রাম্পের শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়ে সন্দিহান।
জরিপ কী বলছে?
নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী জো বাইডেন ১০ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন বলে একটি জরিপে উঠে এসেছে৷
নির্বাচনের মাত্র দু'দিন আগে চালানো এনবিসি নিউজ এবং ওয়াল স্ট্রীট জার্নালের ওই জরিপে দেখা যায়, দেশের নিবন্ধিত ভোটারদের মধ্যে ৫২ শতাংশ বাইডেনকে এবং ৪২ শতাংশ ভোটার ট্রাম্পকে সমর্থন করেন।
নির্বাচন পূর্ব এই চূড়ান্ত জরিপে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ ১২ টি অঙ্গরাজ্য অ্যারিজোনা, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, আইওয়া, মইন, মিশিগান, মিনেসোটা, নর্থ ক্যারোলিনা, নিউ হাম্পশ্যায়ার, নেভাদা, পেনসিলভানিয়া ও উইসকনসিনে সমন্বিতভাবে বাইডেন ট্রাম্পের চেয়ে ৬ পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছেন। এ সব রাজ্যের ৫১ শতাংশ ভোটার বাইডেনকে এবং ৪৫ শতাংশ ভোটার ট্রাম্পকে সমর্থন দেয়ার কথা জানান।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে জরিপই শেষ কথা নয়। ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রায় সব জনমত জরিপে এগিয়ে থেকেও; এমনকি প্রায় ৩০ লাখ বেশি ভোট পেয়েও ট্রাম্পের কাছে হারতে হয় সেই সময়ের ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে। অর্থাৎ বেশি ভোট পেয়েও ইলেকটোরাল কলেজ ব্যবস্থার কারণে একজন প্রার্থীর জয়ী হওয়ার সুযোগ নেই।
ডাকযোগে ভোট
চলতি বছরের নির্বাচনে সাড়ে নয় কোটির বেশি আমেরিকান ভোটার ডাকযোগে আগাম ভোট দিয়েছেন, যা দেশটির ইতিহাসে নতুন রেকর্ড। করোনা মহামারির কারণে ভিড় এড়াতেই মূলত ডাকযোগে ভোটের সংখ্যা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারের শুরু থেকেই ডাকযোগে ভোটের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি এভাবে ভোটে বড় ধরনের প্রতারণা হতে পারে বলে অভিযোগ করেছেন। এমনকি, নিজের অভিযোগ প্রমাণ করতে তিনি মার্কিন পোস্টাল সার্ভিসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টাও করেছেন বলে শোনা গেছে।
ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী বাইডেন অবশ্য মহামারীর এ সময়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ডাকযোগে ভোটই উত্তম বলেছেন।
চূড়ান্ত ফল পেতে দেরি হতে পারে
এবার যেহেতু রেকর্ড সংখ্যায় মানুষ ডাকযোগে ভোট দিয়েছেন তাই সেসব ব্যাটল পেপার পৌঁছাতে এবং গণনা শেষ হতে ৩ নভেম্বর পেরিয়ে আরও কয়েকদিন সময় লেগে যেতে পারে। যে কারণে নির্বাচনের দিন ভোটের প্রাথমিক ফলাফলে পেনসিলভানিয়ার মত অঙ্গরাজ্যে এগিয়ে থাকতে পারেন রিপাবলিকানরা। নির্বাচনের ম্যাপে যাদের 'লাল রঙ' দিয়ে চিহ্নত করা হয়।
পেনসিলভানিয়ায় ভোটের দিনের পর আরও তিনদিন ডাকযোগে পাঠানো ব্যালটপেপার গ্রহণ করা হবে। আর যেহেতু ডেমোক্র্যাটিক সমর্থকরা ডাকযোগে বেশি ভোট দিয়েছেন তাই প্রথমদিন রিপাবলিকানদের 'লালে লাল' হয়ে যাওয়া নির্বাচনী ম্যাপ ধীরে ধীরে ডেমোক্র্যাটদের 'নীলে নীল' হয়ে যেতে পারে।
ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্যে এগিয়ে কে?
এই মুহূর্তে ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্যগুলোতে জরিপে ভালো অবস্থানে আছেন জো বাইডেন। যদিও বেশ কয়েকটি রাজ্যে দুই প্রার্থীর হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস রয়েছে।
ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্য মিশিগান, পেনসিলভানিয়া ও উইসকনসিনে জো বাইডেন শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছেন। যদিও গতবারের নির্বাচনে এই তিন শিল্পাঞ্চলীয় রাজ্যে এক শতাংশেরও কম ভোটের ব্যবধানে জয় পেয়েছিলেন ট্রাম্প।
২০১৬ সালের নির্বাচনে কিছু ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প বড় জয় পেলেও এবারে সেই চিন্তায় ভাঁজ ফেলেছেন জো বাইডেন। ওই বছর আইওয়া, ওহাইও ও টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থীর সঙ্গে ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ব্যবধান ছিল আট থেকে দশ শতাংশ। কিন্তু চলতি বছরে এই তিন রাজ্যে ট্রাম্প-বাইডেন কাছাকাছি অবস্থানে আছেন।
এসব হিসাব-নিকেশের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু রাজনৈতিক বিশ্লেষক ট্রাম্পের পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ খুবই কম বলে মন্তব্য করেন।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রভাবশালী সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট বলছে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জো বাইডেনের হারানোর সম্ভাবনা খুবই কম। রাজনৈতিক বিশ্লেষণী ওয়েবসাইট ফাইভথার্টিএইট এবারের নির্বাচনে জো বাইডেনের জয়ের পক্ষেই বাজি ধরছে। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প যেকোনও মুহূর্তে ঘুরে দাঁড়াতে পারেন বলেও প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেছে ফাইভথার্টিএইট।