যুক্তরাষ্ট্রে জুনেই মেয়াদোত্তীর্ণ হতে যাচ্ছে জনসন অ্যান্ড জনসন ভ্যাকসিনের লাখো ডোজ
চলতি মাসেই মেয়াদোত্তীর্ণ হতে যাওয়া লাখ লাখ জনসন অ্যান্ড জনসন এর কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন কীভাবে কাজে লাগানো যায় তা নিয়ে রীতিমতো গলদঘর্ম হতে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বিভাগ ও ফেডারেল সরকারকে।
উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যখন ভ্যাকসিন পাওয়ার জন্য হাহাকার চলছে, ঠিক সেই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের এই বিপুল পরিমাণ ভ্যাকসিন মজুদ করা ও তা অন্যদের না দেওয়া নিয়ে নিঃসন্দেহে চাপের মুখে পড়তে হবে বাইডেন প্রশাসনকে। রক্ত জমাট বাধার সমস্যা হতে পারে, এই আশঙ্কায় গত এপ্রিলে মার্কিন প্রশাসন হঠাৎ করেই জনসন অ্যান্ড জনসনের ভ্যাকসিন প্রদান সাময়িকভাবে স্থগিত করে। ফলে এই ভ্যাকসিনগুলো অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এসব ভ্যাকসিন কীভাবে কাজে লাগাতে হবে সে ব্যাপারে কোনো পরিকল্পনাই করেনি তারা।
কিছু হাসপাতাল ও রাষ্ট্রীয় সূত্র জানিয়েছে, ফাইজার ও তাদের অংশীদার বায়োটেক এসই এবং মডার্নার কিছু ভ্যাকসিনও এই গ্রীষ্মেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাবে। কিন্তু জনসন অ্যান্ড জনসনের মজুদই বেশি। ফাইজার ভ্যাকসিন উৎপাদনের পর পাঁচ মাস পর্যন্ত মেয়াদ থাকে এবং মডার্না ভ্যাকসিন ছয় মাস পর্যন্ত হিমায়িত অবস্থায় রাখা যায়।
শুধু ফিলাডেলফিয়াতেই জনসন অ্যান্ড জনসন ভ্যাকসিনের ৪২ হাজার ডোজের মেয়াদ শেষের পথে। এছাড়াও পেনসিলভানিয়া, ওকলাহোমা, ওহিও এবং আরকানসাসেও চলতি মাসে হাজার হাজার জনসন অ্যান্ড জনসন ভ্যাকসিন মেয়াদোত্তীর্ণ হতে পারে।
যদিও চাহিদা অনুযায়ী ভ্যাকসিন ডোজ সরবরাহ ও বিতরণ করা রাষ্ট্র এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে, কিন্তু তাদের দাবি এই যে হঠাৎ করে জনসনের ভ্যাকসিন জনসাধারণকে না দেওয়ার ঘোষণা আসায় তাদের পরিকল্পনার চাইতে অনেক বেশি ডোজ অব্যবহৃত রয়ে গেছে। এই মুহূর্তে এসব ভ্যাকসিন পুণরায় বিতরণ করতে তারা ফেডারেল কর্তৃপক্ষের কাছে পরামর্শ চাইছেন। স্বাস্থ্যকর্মীদের কেউ কেউ তাদের পরিচিত বা অপরিচিতদের মধ্যে কিছু ডোজ বিতরণ করেছেন, আবার রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে কিছু ফার্মেসিতেও ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু সরকার আগেই জনসন অ্যান্ড জনসনের ভ্যাকসিন প্রদান স্থগিত করায় এবং জনমনে নানা ধরনের দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি হওয়ায় এসকল উদ্যোগে তেমন কোনো সফলতা পাওয়া যাচ্ছে না। দেশটিতে জনসন অ্যান্ড জনসনের ২ কোটি ১৪ লাখ ডোজের মাত্র অর্ধেক ডোজ জনগণকে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে মডার্না ও ফাইজার-বায়োএনটেক ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে ৮৩ শতাংশ।
তবে ইয়েল ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল হেলথ এর পরিচালক সাদ ওমার মনে করেন, জনসনের ভ্যাকসিন দেওয়া স্থগিত করার পরও সরকার চাইলে ভ্যাকসিনের উপকারিতা সম্পর্কে আরও কার্যকরী বার্তা ছড়াতে পারতো এবং মেয়াদ শেষের আগেই ভ্যাকসিন বিতরণের সমস্যা সমাধান করতে পারতো।
মার্কিন সরকার জনসন অ্যান্ড জনসনের ভ্যাকসিন আনার সময় পর্যন্ত ডোজগুলো হিমায়িত অবস্থায় ছিল এবং রেফ্রিজারেটরে রাখা হয়েছিল। ভ্যাকসিন ডোজ তিন মাস পর্যন্ত রেফ্রিজারেটরে রাখা যায়। প্রতিষ্ঠানটির একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, ভ্যাকসিনের শেলফ লাইফ আরও বাড়ানো যায় কিনা তা নিয়ে তারা গবেষণা করছেন।
বেশিরভাগ ড্রাগ ও ভ্যাকসিনেরই কয়েক বছর পর্যন্ত মেয়াদ থাকে, কিন্তু ধীরে ধীরে তাদের কার্যকারিতা হারিয়ে যায়। পরীক্ষামূলক ডেটার উপর ভিত্তি করে কোভিড ভ্যাকসিনের মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ নির্ধারণ করে উৎপাদনকারীরা। কিছু ভ্যাকসিন হয়তো মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও কার্যকরী হতে পারে, কিন্তু ভ্যাকসিনটি তৈরির সময় ডেটার পরিমাণ সীমিত ছিল বিধায় মেয়াদও থাকে কম।
এদিকে হোয়াইট হাউজের করোনাভাইরাস বিষয়ক উপদেষ্টা অ্যান্ডি স্লাভিট গণমাধ্যমের সামনে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, 'শুধুমাত্র অল্প কিছু জনসন অ্যান্ড জনসনের ভ্যাকসিন ডোজ অব্যবহৃত থেকে যাবে। আর একটি টিকাদান ক্যাম্পেইনে কোনো ডোজ নষ্ট হবেনা, এমনটা আশা করা অবাস্তব চিন্তা।'
স্টেট হেলথ ডিপার্টমেন্ট ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সিডিসি এবং রাজ্যগুলো থেকে তারা মেয়াদোত্তীর্ণ ভ্যাকসিন ডোজ নষ্ট করার বা ফেলে দেওয়ার পরামর্শ পেয়েছেন। এ ব্যাপারে সিডিসি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
কিছু অঙ্গরাজ্য অবশ্য উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এসব ডোজ পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে তা করতে গেলে আমেরিকাকে রসদ যোগানো ও আইনি জটিলতায় পড়তে হবে। তাছাড়া, উন্নয়নশীল দেশগুলোও মেয়াদোত্তীর্ণ ভ্যাকসিন নিতে সতর্কতা অবলম্বন করবে এবং এই মাসের মধ্যেই হয়তো ভ্যাকসিন দিয়ে শেষ করতে পারবে না।
গত এপ্রিলের শুরুতে মার্কিন নীতি-নির্ধারকরা জনসন অ্যান্ড জনসনের ভ্যাকসিন প্রদান স্থগিত করেন। এর ফলে আমেরিকা জুড়ে হাজার হাজার স্বাস্থ্যকেন্দ্র জনসাধারণকে এই টিকা না দিয়েই ফিরিয়ে দেয়। ১০ দিন পর জনসন কর্তৃপক্ষ ভ্যাকসিনের গায়ে 'রক্ত জমাট বাধার' সতর্কবার্তা দিয়ে দেওয়ার পর নীতি-নির্ধারকরা এই স্থগিতাদেশ সরিয়ে নেন। কিন্তু ততদিনে সাধারণ মানুষের মনে রক্ত জমাট বাধা বা এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া নিয়ে ভীতি তৈরি হয় এবং গণ টিকাদান থেকে ছোট ছোট গোষ্ঠী আকারে টিকাদান শুরু হয়।
- সূত্র: দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল