যেভাবে প্রাণে বাঁচলেন তালেবানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতৃত্বদানকারী গভর্নর সালিমা
আফগানিস্তানের ইতিহাসে তিন নারী গভর্নরের একজন সালিমা মাজারি। বলখ প্রদেশের চারকিন্তের গভর্নর ছিলেন সালিমা। শুধু তাই নয়, বলখ প্রদেশকে রক্ষা করতে তালেবানের বিরুদ্ধে হাতে বন্দুক তুলে নেন তিনি। সালিমা মাজারির তীব্র প্রতিরোধের মুখে দীর্ঘদিন পর্যন্ত তালেবানের নাগালের বাইরে ছিল চারকিন্ত।
তুমুল সংঘর্ষের পর শেষ পর্যন্ত তালেবানের দখলে যায় বলখ। চারকিন্ত জেলাও নিয়ন্ত্রণে নেয় তালেবান যোদ্ধারা।
বলখের পতনের পর থেকেই সালিমার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। কেউ বলেছিলেন তিনি তালেবানের হাতে ধরা পড়েছেন। আবার অনেকে দাবি করে যে, সালিমা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। বেশ কয়েকদিন চরম উৎকণ্ঠায় কাটানোর পর অবশেষে জানা গেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রে নিরাপদে রয়েছেন সালিমা। তবে তিনি ঠিক কোথায় আছেন, তা গোপন রাখা হয়েছে।
জানা গেছে, মার্কিন সংবাদমাধ্যম টাইমসের দুই সাংবাদিকের সহায়তায় আফগানিস্তান ছাড়েন সালিমা। কিন্তু, তার দেশত্যাগের যে বিবরণ জানা গেছে, তা রীতিমতো রোমহর্ষক বলা চলে।
বলখ প্রদেশের পতনের পর পরিস্থিতি বুঝে যুদ্ধ বন্ধের সিদ্ধান্ত নেন সালিমা। স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে তিনি আফগানিস্তান-উজবেকিস্তান সীমান্তের হয়রতনের দিকে রওনা হন। কিন্তু, উজবেকিস্তান সালিমাকে আশ্রয় দিতে আপত্তি জানালে পুনরায় বিপাকে পড়েন তিনি। আফগানিস্তানের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্দুল রশিদ দোস্তম, বলখ এর প্রাক্তন গভর্নর ও মুজাহিদিন কমান্ডার আতা মোহাম্মদ নূর উজবেকিস্তানে আশ্রয় পেলেও সালিমাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
পরিবার নিয়ে অবশেষে কাবুল আসেন তিনি। বিপদ তখন চারদিকে। তালেবান যোদ্ধারা সালিমাকে হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে। নজর এড়াতে বোরখা পরতে শুরু করেন সালিমা। অসংখ্য তালেবান চেকপোস্ট পার হয়ে বিপজ্জনক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গাড়ি নিয়ে কাবুল আসেন তিনি। পথে বারবার চেকপোস্টে গাড়ি তল্লাশ করা হলেও সালিমাকে কেউ চিনতে পারেনি।
কাবুলের অজ্ঞাত জায়গায় এসে সালিমা বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
সেই সময় মার্কিন টাইমস পত্রিকার দুই সাংবাদিকের সঙ্গেও তার যোগাযোগ হয়। সালিমাকে আফগানিস্তান থেকে বের করে আনতে সচেষ্ট হন তারা।
গত ২৩ আগস্ট অচেনা একটি নাম্বার থেকে সালিমা বার্তা পান। আমেরিকান রেসকিউ অপারেশন সেলের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে বলে জানানো হয় সেই বার্তায়। নিজের অবস্থান ও পরিবারের সদস্যদের সকল তথ্য সেই নাম্বারে পাঠিয়ে দেন সালিমা। কিন্তু তার শঙ্কা তখনো দূর হয়নি।
আমেরিকান উদ্ধারকারী দল স্থানীয় দাড়ি ভাষায় কেন ম্যাসেজ দিবে সেই চিন্তাতেও পড়েন তিনি। দাড়ি মূলত সীমান্তবর্তী আফগানিস্তানের প্রচলিত ভাষা। তাহলে কি উদ্ধারকারী দলের ছদ্মবেশে অন্য কেউ তথ্য হাতিয়ে নিল?
পরবর্তীতে একজন সাংবাদিকের খোঁজ নেওয়ার পর জানা যায় বার্তাটি প্রকৃতপক্ষেই আমেরিকার উদ্ধারকারী দলের পাঠানো।
২৪ আগস্ট গোপন আস্তানা থেকে সালিমা ও তার পরিবারকে হেলিকপ্টারে করে কাবুল বিমানবন্দরে আনার পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু, নির্দিষ্ট দিনে কোনো বার্তা না পেয়ে পরিবার নিয়ে সালিমা হেঁটেই কাবুল বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
বিপজ্জনক এক যাত্রা শেষে পায়ে হেঁটে হামিদ কারজাই বিমানবন্দরে পৌঁছান তারা। অবশেষে ২৫ আগস্ট সালিমা ও তার পরিবারকে নিয়ে আফগানিস্তান ছাড়ে মার্কিন উদ্ধারকারী বিমান।
সালিমা মাজারি আফগানিস্তানের হাজারা সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। সালিমার পুরো পরিবারকে প্রথমে কাতারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে আমেরিকায় যান সালিমা ও তার পরিবার। বর্তমানে তারা নিরাপদে রয়েছেন বলেই জানা গেছে।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা