শুধু অনলাইনে পাঠদান হলে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়তে হবে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি তাদের একাডেমিক সব কোর্সের ক্লাস অনলাইনের মাধ্যমে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তবে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের দেশটি ছাড়তে হবে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট।
ট্রাম্প প্রশাসনের এমন পদক্ষেপের কারণে বিপাকে পড়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করতে আসা হাজার হাজার শিক্ষার্থী।
মহামারি করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইতোমধ্যেই অনলাইনের মাধ্যমে পাঠদান শুরু করেছে। বিশ্ব র্যাংকিংয়ের এক নম্বর বিশ্ববিদ্যালয় হার্ভাডও জানিয়েছে, সব বিষয়ের সব ক্লাস তারা অনলাইনেই নেবে। এমনকি যারা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান করছে তাদের ক্লাসও অনলাইনে হবে। কিন্তু সরকারের এমন সিদ্ধান্তের কারণে এখন যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করতে হবে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের।
হার্ভাডের কেনেডি স্কুল অব গভর্নমেন্টের শিক্ষার্থী ভ্যালেরিয়া মেন্ডিওলা বলেন, "এখানে অনেক বেশি অনিশ্চয়তা। এটা সত্যিই হতাশাজনক। আমার দেশ মেক্সিকো, আমি চাইলেই সেখানে ফিরে যেতে পারি। কিন্তু ইন্টারন্যাশনাল অনেক স্টুডেন্টের পক্ষেই এটা সম্ভব না।"
সোমবার ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) এক বিবৃতিতে জানায়, "ফল (শরৎকালীন) সিমেস্টারের জন্য সম্পূর্ণ অনলাইনে থাকা স্কুল বা প্রোগ্রামগুলোতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের ভিসা দেবে না ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেট। মার্কিন শুল্ক ও সীমান্ত সুরক্ষা কর্তৃপক্ষও এই শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি দেবে না।"
যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আগেই জানিয়েছিল, ফল সিমেস্টারে তারা সব ক্লাস নেবে অনলাইনে। তবে সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের যে আমেরিকায় থাকতে দেওয়া হবে না, এই বিবৃতির মাধ্যমে সেটাই জানিয়ে দিল ট্রাম্প প্রশাসন। আইসিই'র এই ঘোষণার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক টুইটে জানান , ফল সিমেস্টারে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দরজা খুলতেই হবে। তার অভিযোগ,ডেমোক্র্যাটরা রাজনৈতিক কারণে বিশ্ববিদ্যালয় খুলুক তা চায় না।
সরকার ঘোষিত নতুন নিয়ম অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক ছাত্রদের কিছু ক্লাস অফলাইনে অর্থাৎ ক্যাম্পাসে গিয়ে করতে হবে। পুরোটাই অনলাইনে হলে তাদের ভিসা দেওয়া হবে না। যারা শুধু অনলাইন ক্লাস করছে, তাদের শীঘ্রই নিজ দেশে ফিরতে হবে এবং সেখানে গিয়ে ভার্চুয়াল ক্লাস করতে হবে বলে। নচেৎ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে ট্রাম্প প্রশাসন।
সরকারের এমন ঘোষণায় বিস্মিত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন আমেরিকান কাউন্সিল অন এডুকেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ব্র্যাড ফ্র্যান্সওর্থ।
তিনি বলেন, "আমরা মনে করি এর ফলে আরও দ্বিধা এবং আরও অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হবে।"
এই পদক্ষেপ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, যদি যুক্তরাষ্ট্রে এই শরৎকালে জনস্বাস্থ্যের অবস্থার আরও অবনমন হয় এবং সকলকে নিরাপদ রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শ্রেণি কক্ষে গিয়ে ক্লাস করার বিষয়টি বদলে ফের অনলাইনে ঝুঁকে পড়ে সেক্ষেত্রে কী হবে?
এ বিষয়ে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট ল্যারি ব্যাকাউ বলেন, "আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের বিষয়ে ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট-এর জারি করা নির্দেশনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। বিশেষত অনলাইন প্রোগ্রামগুলোর শিক্ষার্থীদের দেশ ছাড়ার ঘোষণার ব্যাপারে উদ্বেগ রয়েছে। এটি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য একটি জটিল সমস্যা।"