সু চি’র সঙ্গে বরিস জনসনের আলোচনা, রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ
রাখাইনে রোহিঙ্গা সংকট এবং সংঘাত নিয়ে যুক্তরাজ্যের উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি'র সঙ্গে কথা বলেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।
শুক্রবার টেলিফোনে কথোপকথনের সময় মিয়ানমারের সামনে থাকা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ও সু চি।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক সাধারণ নির্বাচনে সু চি'র দলের জয়ের জন্য তাকে অভিনন্দন জানিয়ে আলোচনা শুরু করেন বরিস।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ নির্বাচন মিয়ানমারের গণতন্ত্রের পথে পরিবর্তনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় দেশগুলো কীভাবে একসাথে কাজ করতে পারে তা নিয়েও আলোচনা করেন দুই নেতা।
আগামী বছর জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের (কপ-২৬) আয়োজক দেশ যুক্তরাজ্য জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের গুরুত্বের বিষয়ে মিয়ানমারের সাথে একমত হয়।
বিস্তৃত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রতি যুক্তরাজ্যের প্রতিশ্রুতি এবং আসিয়ানের সাথে ঘনিষ্ঠ অংশীদারিত্ব বজায় রাখার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।
শুক্রবার যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও) এক বিবৃতিতে জানায়, মিয়ানমারে বিশেষত দেশটির রাখাইন এবং চিন রাজ্যে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে এবং বেসামরিক লোকেরা ক্রমবর্ধমান সংঘাতের কবলে পড়ছে।
যুক্তরাজ্য মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিক আদালতের অস্থায়ী ব্যবস্থা সংক্রান্ত রায় মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে; যদিও রোহিঙ্গারা এখনও তাদের মৌলিক অধিকার এবং মর্যাদা থেকে বঞ্চিত। এক লাখ ২৮ হাজার রোহিঙ্গা এখনও নিজ দেশে শিবিরের মধ্যে সীমাবদ্ধ এবং অবাধে চলাচল এমনকি চিকিৎসাসেবা গ্রহণের সুযোগও তাদের নেই।
যুক্তরাজ্যের বিবৃতিতে বলা হয়, মিয়ানমারের সামরিক এবং জাতিগত সশস্ত্র উভয় গ্রুপ দ্বারা সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলগুলোতে নির্বিচারে গ্রেপ্তার, নির্যাতন, হেফাজতে মৃত্যু, গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া, যৌন সহিংসতা এবং 'ক্লিয়ারেন্স অপারেশন্স' পরিচালনার খবর পাওয়া গেছে।
এর আগে, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াং হি লি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে মিয়ানমারে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল।
গত জুলাইয়ে, রোহিঙ্গা জনগণ এবং অন্যান্য জাতিগত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় জড়িত থাকার জন্য মিয়ানমারের দুই উচ্চ পদস্থ সামরিক কর্মকর্তাকে চিহ্নিত করেছিল যুক্তরাজ্য।
কোভিড-১৯ মোকাবিলায় মিয়ানমারে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর বিধিনিষেধ আরও বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে কিছু নিষেধাজ্ঞা ন্যায়সঙ্গত হলেও, অন্যগুলো অসতর্কভাবে রোহিঙ্গাদের প্রভাবিত করেছে।
এপ্রিলে ২৬ জন রাজনৈতিক বন্দী এবং ৮০০ রোহিঙ্গাসহ ২৪ হাজার ৮৯৬ বন্দীকে মিয়ানমারের রাষ্ট্রপতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। তা সত্ত্বেও সরকার এবং সেনাবাহিনী মত প্রকাশের স্বাধীনতা সীমাবদ্ধ করতে দমনমূলক আইন ব্যবহার করে চলেছে।
রাখাইন এবং চিন রাজ্যে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সময় ইন্টারনেট বন্ধ রাখার বার্ষিকী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে ২১ জুন। এ শাটডাউনের মধ্য দিয়ে কোভিড-১৯, মানবাধিকার এবং ১০ লাখেরও বেশি মানুষের সংঘাত সম্পর্কিত তথ্য জানা নিষিদ্ধ হয়।
চলতি বছরের জুলাইয়ে, ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিস (এফসিও) ২০১৯ সালের মানবাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার পরিস্থিতির একটি মূল্যায়ন সরবরাহ করা হয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারকে এগিয়ে নেয়ার জন্য যুক্তরাজ্য সরকারের থিম্যাটিক, কনস্যুলার এবং প্রোগ্রামের কাজ নির্ধারণ করা হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে যুক্তরাজ্য।
শুক্রবারের সর্বশেষ বিবৃতিতে ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশসহ ৩০ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত দেশের হালনাগাদ মূল্যায়ন তুলে ধরা হয়।
যুক্তরাজ্য বলছে, বৈশ্বিক মানবাধিকারের ওপর বিশাল প্রভাবসহ এক প্রজন্মের মধ্যে সবচেয়ে বড় জনস্বাস্থ্য বিষয়ক জরুরি অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে পুরো বিশ্ব।