২৫ গুণ দ্রুতগতিতে টিকা দিচ্ছে ধনী দেশগুলো
বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৫ শতাংশকে টিকা দেওয়া যাবে- এতো পরিমাণ কোভিড প্রতিষেধকের ডোজ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু বিতরণে চলছে চরম বৈষম্য। বেশিরভাগ ডোজই পেয়েছে ধনী দেশের নাগরিকরা। উৎপাদকদের থেকে চালান পাওয়ার ক্ষেত্রেও তারা দখল করছে সিংহভাগ অংশ।
পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার মাত্র ১১ শতাংশ হয়েও গত বৃহস্পতিবার নাগাদ বৈশ্বিকভাবে দেওয়া প্রতিষেধক ডোজের ৪০ শতাংশ পেয়েছে ২৭টি ধনী দেশের নাগরিকরা। সে তুলনায় অতি-দরিদ্র দেশগুলোর ১১ শতাংশ পেয়েছে ভ্যাকসিনের মাত্র ১.৬ শতাংশ ডোজ। ব্লুমবার্গ ভ্যাকসিন ট্র্যাকার অনুসারে এসব তথ্য জানা যায়।
এক কথায়, উচ্চ আয়ের দেশগুলো ২৫ গুণ দ্রুতগতিতে টিকাদান চালিয়ে যাচ্ছে গরিব রাষ্ট্রগুলোর তুলনায়।
ব্লুমবার্গের নিজস্ব তথ্যভাণ্ডারে ১৫৪টি দেশে প্রায় ৭৩ কোটি ডোজ দেওয়া অনুসরণ করা হয়েছে। মার্কিন গণমাধ্যমটি টিকা প্রাপ্তির আন্তর্জাতিক অবস্থা বিশ্লেষণে তাদের ভ্যাকসিন ট্র্যাকার চালু করে; যার মাধ্যমে সম্পদ, জনসংখ্যা এবং টিকা ডোজের চালান পাওয়ার অবস্থা তুলে ধরা হয়।
সেই অনুসারে দেখা যায়, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৪.৩ শতাংশ নিয়েও প্রদত্ত ভ্যাকসিনের ২৪ শতাংশ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে, বৈশ্বিক জনসংখ্যার ২.৭ শতাংশ অধিবাসী নিয়ে মাত্র শূন্য দশমিক ১ শতাংশ ডোজ দিয়েছে পাকিস্তান। এই চিত্র দুনিয়ার সর্বত্র দেখা যাচ্ছে। তার সঙ্গে ধনী দেশের শত শত কোটি ডোজ প্রতিষেধক কিনে রাখার আগাম চেষ্টা তো আছেই। বাড়তি এই চালান দিয়ে তারা নিজেদের সকল নাগরিককে বেশ কয়েকবার টিকা দিতে পারবে। ভ্যাকসিন ক্রয় চুক্তির পৃথক এক বিশ্লেষণ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্র যে গতিতে টিকাদান চালাচ্ছে তাতে আগামী তিন মাসের মধ্যেই ৭৫ শতাংশ জনগণকে টিকার আওতায় আনার পথে রয়েছে দেশটি। সেই তুলনায় বিশ্বের প্রায় অর্ধেক সংখ্যক দেশে এক ডোজ টিকাও পাননি তাদের মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশ নাগরিক। এছাড়া, ব্লুমবার্গের ভ্যাকসিন বৈষম্য নিয়ে করা হিসাবের বাইরে আছে ৪০টির বেশি অতি-দরিদ্র দেশ। এসব স্থানে টিকাদান এত সীমিত যে টিকাদানের সরকারি তথ্যসারণীও প্রস্তুত করা হয়নি। যদিও, হিসাবের বাইরে থাকা এই দেশগুলো বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৮ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করে।
বিশ্বের এক নম্বর অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন অঞ্চলের জনসংখ্যা অনুসারে কি পরিমাণ ভ্যাকসিনের ডোজ পাঠানো হবে তা নির্ধারণ করে। একারণে, বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে পার্শ্ববর্তী এলাকার তুলনায় কম বরাদ্দ পাওয়ার মতো বিভেদ। অবশ্য, জনসংখ্যা অনুসারে মাথাপিছু ডোজ সরবরাহে কোনো অঙ্গরাজ্যকেই বঞ্চিত করা হয়নি।
তবু বৈষম্যে ভরা পৃথিবী:
এই গোলকের সকল মানুষের কাছে সমতার ভিত্তিতে সরবরাহ নিশ্চিতে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেই। জনসংখ্যা অনুসারে বিশ্বের সব ভ্যাকসিন দেওয়া হলে, যুক্তরাষ্ট্র তার ন্যায্য হিস্যার চাইতেও ছয়গুণ বেশি টিকা দিতে পারতো, যুক্তরাজ্য পারতো ৭ বার। কিন্তু, সমতার এই পরিমাপক শুধুমাত্র তখনই বাস্তবে রূপ নিতো- যদি ধনী দেশগুলো বিশাল আকারে ডোজ মজুত ও অগ্রিম ক্রয় না করতো। কল্পিত এই সুষম বণ্টন ব্যবস্থায় শীর্ষে থাকতো সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইসরায়েল। দেশদুটি তাদের জনসংখ্যা অনুপাতে যথাক্রমে; ৯ ও ১২ গুণ বেশি ডোজ পেতো। অর্থাৎ, চাহিদার তুলনায় বিপুল সরবরাহের সুবিধা থাকার পরও ধনী দেশগুলোর কারণেই সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে।
বৈশ্বিক গড় হারের কাছাকাছি গতিতে নিজ জনসংখ্যাকে টিকা দিচ্ছে চীন। দুনিয়ার দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতিটি এপর্যন্ত প্রদত্ত বৈশ্বিক ভ্যাকসিনের ২০ শতাংশ দিয়েছে। জনসংখ্যা অনুসারেও আছে সমতা, কারণ চীনেই থাকেন বিশ্বের ১৮ শতাংশ মানুষ। এছাড়া, টিকা সরবরাহেও চীন সবার চাইতে উদার, দরিদ্র অনেক দেশেই ডোজের চালান পাঠিয়েছে বেইজিং, অনেকক্ষেত্রে দেওয়া হয়েছে বিনামূল্যে।
অন্যদিকে, বিশ্বের সবচেয়ে দারিদ্রপীরিত মহাদেশ আফ্রিকায় টিকাদানও সবচেয়ে কম। আফ্রিকার ৫৪টি রাষ্ট্রের মধ্যে মাত্র ৩টি তাদের মাত্র ১ শতাংশ জনসংখ্যাকে টিকা দিতে পেরেছে। আর ২০টির বেশি দেশ টিকাদান শুরুই করতে পারেনি।
- সূত্র: ব্লুমবার্গ