৫৩ বছর পর প্যারোলে মুক্তি পেতে যাচ্ছেন রবার্ট এফ কেনেডির ঘাতক
১৯৬৮ সালে মার্কিন সিনেটর রবার্ট এফ কেনেডিকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত অপরাধী সিরহান সিরহানের প্যারোলের সুপারিশ করা হয়েছে শুক্রবার। জীবনের ৫৩টি বছর জেলে কাটানোর পর তার ভাগ্য এখন ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নরের হাতে।
ক্যালিফোর্নিয়া বোর্ড অফ প্যারোলের দুই কমিশনার সিরহানের জেলে থাকাকালীন রেকর্ড রিভিউ করেন এবং কেনেডির দুই ছেলের বক্তব্য নেওয়ার পর তারা এই সুপারিশ করেন।
এই নিয়ে ১৬তম বারের মতো প্যারোল বোর্ডের সামনে হাজির হয়েছেন সিরহান। এবারই প্রথমবারের মতো প্রসিকিউটররা তার মুক্তির বিরোধীতা করেননি। কেনেডির দুই ছেলে তাদের বাবার হত্যাকারীর প্যারোলে মুক্তি দেওয়া সমর্থন করলেও, কেনেডি পরিবারের বাকি সন্তানরা এর বিরোধিতা করেছেন।
সিরহানের বয়স এখন ৭৭ বছর। কেনেডিকে হত্যার দায়ে ১৯৬৯ সালে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। কিন্তু ১৯৭২ সালে ক্যালিফোর্নিয়া সুপ্রিম কোর্ট মৃত্যুদণ্ড দেওয়াকে অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করে এবং সিরহানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে সাজা ঘোষণার সময়ই ভবিষ্যতে প্যারোলে মুক্তির সম্ভাবনার কথা উল্লেখ ছিল।
লস অ্যাঞ্জেলস এর অ্যাম্বাসেডর হোটেলের কিচেন এরিয়ায় রবার্ট এফ কেনেডিকে হত্যা করা হয়। হত্যাকান্ডের কিছুক্ষণ আগে, ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্সিয়াল প্রাইমারি বিজয় উপলক্ষে বিজয়ী বক্তৃতা দেওয়া শেষ করেন তিনি। কেনেডি ছিলেন দলের সবচেয়ে জনপ্রিয় একজন প্রার্থী এবং মনোনয়ন পাওয়াও প্রায় নিশ্চিত ছিল তার। হোটেলের রান্নাঘরের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় কেনেডিসহ আরও ৫ ব্যক্তিকে গুলি করা হয়।
কেনেডিকে গুলি করার পরপরই সিরহান ঘটনাস্থলে থাকা অন্যদের হাতে পরাস্ত হন, এসময় তার হাতে একটি বন্দুক পাওয়া যায়। কিন্তু এযাবত বহু মানুষই সেই রাতের ঘটনাকে ভিন্ন ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছেন।
আততায়ী সিরহান সম্পর্কে একটি তত্ত্ব হলো- তাকে সেদিন সম্মোহিত করা হয়েছিল এবং কেনেডিকে গুলি করতে বাধ্য করা হয়েছিল। আবার অনেকের ধারণা, সেদিন সিরহান ছাড়াও আরও কয়েকজন বন্দুকধারী ছিলেন।
তবে চমকপ্রদ তথ্য হলো, কেনেডির ছেলে রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র মনে করেন, সিরহান তার বাবাকে হত্যা করেননি।
লেবার পার্টির একজন নেতা ও কেনেডির সহকর্মী, পল শ্রাডকেও সেদিন গুলি করেছিলেন সিরহান। তবে সৌভাগ্যবশত, শ্রাড সেদিন বেঁচে যান। বর্তমানে ৯৬ বছর বয়সী শ্রাডও মনে করেন, সিরহানের মুক্তি পাওয়া উচিত।
তিনি বলেন, "সিরহান সেদিন রবার্ট কেনেডিকে গুলি করেনি। তার প্রথম গুলিটা আমার গায়ে লেগেছিল, কিন্তু দ্বিতীয় গুলি কেনেডির গায়ে লাগেনি।"
শ্রাড আরও মনে করেন, অনির্ভরযোগ্য সূত্র ও প্রমাণের উপর ভিত্তি করে লস অ্যাঞ্জেলস পুলিশ এই মামলাকে জটিল করে তুলেছে। তাই সিরহান যতদিন জেলে বন্দী থাকবে, ততদিন পর্যন্ত রবার্ট কেনেডির আসল হত্যাকারীকে খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে।
"সিরহানকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া মানে আমাদের হাতে এই মামলা আরও পরিষ্কারভাবে সমাধানের সুযোগ তৈরি হবে। দ্বিতীয় বন্দুকধারীকে আমরা তখন খুঁজে বের করে সাজা দিতে পারবো", বলেন শ্রাড।
কিন্তু ক্যালিফোর্নিয়া প্যারোল বোর্ড আপাতত এই 'দ্বিতীয় বন্দুকধারী' তত্ত্ব মানতে রাজি নয়।
এদিকে এপি সূত্র জানিয়েছে, কেনেডির আরেক ছেলে ডগলাস কেনেডি জানিয়েছেন, সিরহানের সঙ্গে দেখা করার পর তার অনুশোচনা দেখে তিনি অত্যন্ত আবেগতাড়িত হয়েছেন।
সিনেটর রবার্ট এফ কেনেডিকে হত্যার সময় সিরহানের বয়স ছিল ২৪ বছর। সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়ার আইনে কিছু পরিবর্তন আসায়, তরুণ বয়সে সংঘটিত অপরাধের ক্ষেত্রে প্যারোলে মুক্তি পাওয়া আগের চাইতে সহজ হয়েছে।
সিরহান যদি প্যারোলে মুক্তি পান, তাহলে তাকে জর্ডানে নির্বাসন দেওয়া হতে পারে। একজন ফিলিস্তিনি শরণার্থী হিসেবে শিশু বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন সিরহান; কিন্তু তাকে কখনোই আমেরিকার নাগরিকত্ব দেওয়া হয়নি।
- সূত্র: এনপিআর