৬ বছরের মধ্যে বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম সর্বোচ্চ
জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থা (ফাও) জানিয়েছে, গত নভেম্বর নাগাদ বিশ্ববাজারে খাদ্য পণ্যের দর ছয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছেছে।
গত বৃহস্পতিবার ফাও প্রকাশিত এক সূচক তালিকায় উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেড়েছে এমন খাদ্য পণ্যের বিবরণ দেওয়া হয়। তালিকাটি গড় ১০৫ পয়েন্টের ভিত্তিতে মূল্যবৃদ্ধি তুলে ধরে। অক্টোবরে যা ছিল ১০১ পয়েন্ট।
এটি ২০১২ সালের জুলাইয়ের পর সবচেয়ে দ্রুত গতির দর বৃদ্ধির ঘটনা। রোম ভিত্তিক সংস্থাটি জানায়, এর ফলে ২০১৪ সালের পর ইনডেক্সটি সর্বোচ্চ অবস্থান অর্জন করেছে।
যেসব পণ্যের দর বেশি বেড়েছে:
সার্বিক সূচকে দরবৃদ্ধির নেপথ্যে সবচেয়ে বড় প্রভাব ফেলেছে ভেজিটেবল ওয়েলের দর প্রবৃদ্ধি। পাম ওয়েলের দাম বাড়ায় এটি পূর্ববর্তী মাসের তুলনায় ১৪.৫% বাড়ে। ফাও এই মূল্যস্ফীতিকে 'চমকে দেওয়ার মতো ঘটনা' বলে উল্লেখ করে।
সিরিয়াল বা ঘাস জাতীয় উদ্ভিদের দানাদার খাদ্যশস্য, চিনি, মাংস এবং ডেইরি পণ্যের মূল্যও উঠতির দিকে।
গত মাসের তুলনায় চিনির দর বেড়েছে ৩.৩ শতাংশ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া এবং থাইল্যান্ডে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে শস্যের ফলন ভালো না হওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। একারণেই চিনির মূল্য বাড়ে।
অক্টোবরের তুলনায় সিরিয়ালের মূল্য বাড়ে ২.৫ শতাংশ। তবে গত বছরের তুলনায় এজাতীয় খাদ্যের ভিত্তিমূল্য থেকে এবছরের নভেম্বরে বেড়েছে ২০ শতাংশ ।
মাংস ও ডেইরি পণ্যে অবশ্য দরবৃদ্ধি খুব একটা বেশি নয়। উভয় জাতীয় খাদ্যপন্যে দশমিক ৯ শতাংশের সামান্য স্ফীতি লক্ষ্য করা গেছে অক্টোবরের তুলনায়। তবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তা ১৩.৭ শতাংশ কম।
বভিন জাতীয় মহিষ-গরু এবং শুকরের মাংস সরবরাহ বাড়ায় দরপতনের ঘটনা ঘটে। পোল্ট্রি শিল্পে উৎপাদিত পাখির মাংসেও একই প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে।
মহামারিতে খাদ্য নিয়ে দুর্দশা বেড়েছে:
কর্মসংস্থান হারানো এবং আয় কমে যাওয়া জনগোষ্ঠী খাদ্যপণ্যের দর বৃদ্ধিতে বাড়তি চাপের মুখে পড়েছেন বলে জানায় ফাও। সংস্থাটির মতে, বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার পেছনে বাড়তি দর প্রধান চালিকাশক্তির ভূমিকা নিয়েছে।
সূচক তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, ''যুদ্ধ-বিগ্রহ, জাতিগত সংঘাত, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ইত্যাদি নানাবিধ কারণে পৃথিবীর নানা অঞ্চলে শস্যের বিপুল ক্ষতি হয়েছে। দাম বেড়েছে খাদ্যের। দর বৃদ্ধিকে আরো উস্কে দিচ্ছে এবং তীব্রতর করে তুলেছে চলমান মহামারি।''
ফাও আরো জানায়, মোট ৪৫টি দেশ এখন নিজেদের প্রয়োজন মাফিক খাদ্য উৎপাদন করতে পারছে না। এর মধ্যে ৩৪টি আফ্রিকা মহাদেশের। অচিরেই এসব দেশে বৈদেশিক সহায়তার প্রয়োজন হবে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং আফ্রিকার দক্ষিণ প্রান্তে অতিবৃষ্টির কারণে আরো বিপর্যয়ের শঙ্কা করছে সংস্থাটি। অন্যদিকে পূর্ব এশিয়া এবং পূর্ব আফ্রিকার কিছু অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের অভাবে কৃষিকাজ ব্যাহত হতে পারে। ফাও জানায়, ''উভয় কারণেই আমরা উৎপাদনে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছি।''
- সূত্র: ডয়েচে ভেলে