৭৪ বছরে প্রথম মিস আয়ারল্যান্ডের খেতাব জিতলেন কৃষ্ণাঙ্গ নারী
প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসেবে মিস আয়ারল্যান্ডের খেতাব জিতলেন পামেলা উবা। ২৬ বছর বয়সী পামেলা পেশায় একজন মেডিকেল সায়েন্টিস্ট।
আয়ারল্যান্ডে এ প্রতিযোগিতাটি ১৯৪৭ সাল থেকেই চলে আসছে। কিন্তু এ ৭৪ বছরে কোনো কৃষ্ণাঙ্গ নারী বিজয়ীর খেতাব পান নি।
পামেলা বলেন, "কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে বিজয়ী হওয়া আমিই প্রথম ব্যক্তি। এটি আশ্চর্যজনক মনে হচ্ছে আমার। আমি কখনোই ভাবি নি যে আমি এ অবস্থানে থাকবো।"
"এটি একটি অসাধারণ অনুভূতি। আমি এমন একজন হয়ে উঠলাম, যাকে দেখে কৃষ্ণাঙ্গ তরুণীরা বলবে, 'সে এটা করতে পারলে আমরাও পারবো'," যোগ করেন তিনি।
পামেলা সাত বছর বয়সে, তার মা ও তিন ভাইবোনের সাথে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আয়ারল্যান্ড প্রজাতন্ত্রে চলে আসেন।
আয়ারল্যান্ডের কাউন্টি মায়োতে স্থানান্তরিত হওয়ার আগে একটি ডিরেক্ট প্রভিশন সেন্টারে (আশ্রয় প্রার্থীর থাকার ব্যবস্থা) বসবাস করতেন তারা।
সেই সময়, দেশটির সরকার তার মাকে প্রতিটি সন্তানের জন্য সপ্তাহে ৯ ইউরো করে দিত।
"কেন্দ্রে বেশ অদ্ভুত জীবন ছিল আমাদের। আমরা সরকারের উপর বেশ নির্ভরশীল ছিলাম। আমাদের কাজ করার কোনো অনুমতি না থাকায় ঐ সময়টি আমার মায়ের জন্য বেশ কঠিন সময় ছিল। আমি আমার বন্ধুদেরকে নিজের বাড়িতে আনা পছন্দ করতাম না। আমি চাইনি তারা আমাকে আলাদা হিসেবে দেখুক," বলছিলেন পামেলা।
পামেলা বর্তমানে গ্যালওয়ের একটি হাসপাতালে কর্মরত আছেন।
রেডিও ওয়ান নিউজবিটকে তিনি বলেন, "মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে আমি ফ্রন্টলাইনের কর্মী হিসেবে ছিলাম। করোনার নতুন এ ঢেউ মোকাবেলায় আমাদের অনেক কিছু করতে হয়েছিল"।
'মিস গ্যালওয়ে প্রতিযোগিতা'য় বারে কাজ করার সময় 'দুর্ঘটনাক্রমে' নিজেই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে নেন পামেলা।
তিনি বলেন, "একজন বিচারক ভেবেছিলেন আমিও প্রতিযোগী। কিন্তু আমি আসলে তা ছিলাম না। তখন তিনিই আমাকে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করেন।"
মডেলিংয়ের পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকার পরেও মিস গ্যালওয়ে- ২০২০ এর খেতাব অর্জন করেন তিনি।
মিস আয়ারল্যান্ডের মুকুটজয়ী এ নারী জানান, তার বিজয়ের পর তিনি দর্শকদের কাছ থেকে যেসব প্রতিক্রিয়া লাভ করেন তার বেশিরভাগই ছিল ইতিবাচক।
"আমি এটি জেনে ধন্য যে, অল্পবয়সী মেয়েরাও আমার মধ্যে নিজেদের প্রতিচ্ছবি খুঁজে পাচ্ছে। তারা আমাকে এমন কিছু করতে দেখছে, যা নিয়ে ছোটবেলায় আমি স্বপ্ন দেখতাম"।
তবে, পামেলাকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য এবং ইন্টারনেটে ট্রোলিংও হয়েছে।
"আমি তাদেরকে গুরুত্ব দিতে পছন্দ করি না। এসব কিছু উপেক্ষা করি আমি। আমার জন্য সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হল আমার সম্প্রদায়কে সাহায্য করা। সেই সাথে এমন সব বাচ্চাদের সাহায্য করা যাদের অবস্থা ছিল আমার মতোই," বলেন তিনি।
আগামী বছর ক্যারিবিয়ানের পুয়ের্তো রিকোতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ২০২২ মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতা তার পরবর্তী লক্ষ্য।
তরুণ কৃষ্ণাঙ্গ মেয়েদের উৎসাহিত করতে তিনি বলেন, "নিজেকে একটি বাক্সে আটকে রাখবেন না। দয়া করে অন্যদের গৎবাঁধা চিন্তাভাবনা ভেঙে দিন এবং তাদেরকে দেখান আমরা কী দিয়ে তৈরি।"
- সূত্র- বিবিসি