রকেট সায়েন্টিস্ট এবং ব্রেইন সার্জনরা কি অতি আহামরি বুদ্ধিমান?
ব্যাপারটা রকেট সায়েন্স না। সহজ-সরল ইঙ্গিত দিতে প্রায় এমন তুলনা দেই আমরা। উপমাটি বিজ্ঞানের এ শাখার দুর্বোধ্যতা তুলে ধরে। একইভাবে, ব্রেইন সার্জারি বা মগজে শল্যপাচারকেও আমরা জটিল বলেই মানি।
তবে ব্রেইন সার্জন বা রকেট বিজ্ঞানীদের কথা শুনলেই ঘাবড়াবেন না। চাইলে আপনিও উচ্চ আয় আর সম্মানের এ দুই পেশায় নাম লেখাতে পারবেন।
ভাবছেন মশকরা! কিন্তু গবেষকরা হাসি-ঠাট্টার পাত্র নন মোটেও।
তারা বেশ গুরুগম্ভীর গবেষণার পর বলেছেন, এ দুই পেশাজীবীরা আর দশটা সাধারণ মানুষের চেয়ে বেশি চৌকষ নন।
গবেষণার জন্য তারা বেঁছে নেন ৩২৯ জন অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার এবং ৭২ জন নিউরোসার্জনকে। জ্ঞান সক্ষমতা বা ধীশক্তি যাচাইয়ে তাদের বেশকিছু পরীক্ষা নেওয়া হয়।
তারই ফলাফল প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল। গবেষণায় সাধারণ ব্রিটিশ নাগরিকদের সাথে তাদের বুদ্ধিমত্তার পার্থক্য উল্লেখযোগ্য ছিল না মোটেও।
বুদ্ধিবৃত্তিক দীপ্ততায় পেশা দুটির মধ্যে কোনটি এগিয়ে- তা জানতেই করা হয় এ গবেষণা। তাদের ব্যাপারে সাধারণ মানুষ যে উচ্চ ধারণা পোষণ করেন বাস্তবে তা কতটুকু সত্য- সেটিও বোঝার লক্ষ্য ছিল।
আগামী দশকগুলোয় এ দুটি পেশাতেই দেখা দেবে বিপুল জনবল সংকট। কিন্তু, সাধারণ মানুষের মনে পেশা দুটি সম্পর্কে ভুল ধারণা রয়েছে। আমরা ভাবি, অনন্য মেধাবি না হলে- হওয়া যাবে না অ্যারোস্পেস প্রকৌশলী বা ব্রেন সার্জন। এমন ধ্যানধারণার সৌধ ভাঙ্গাই ছিল গবেষকদের উদ্দেশ্য। তারা দেখাতে চেয়েছেন, চেষ্টা করলে মোটামুটি মেধাসম্পন্নরাও আসতে পারবেন বৈজ্ঞানিক এসব পেশায়।
মেধা বিচারের ছয়টি বিষয়ে অনলাইনে পেশাজীবীদের পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি হচ্ছে, ইম্পেরিয়াল কলেজ অব লন্ডনের তৈরি- 'গ্রেট ব্রিটিশ ইন্টেলিজেন্স টেস্ট।' অনলাইনে আলোচ্য পেশাজীবীরা এতে অংশ নেন। সেখানে জ্ঞান পরিমাপের ছয়টি শাখায় তারা পরীক্ষা দিয়েছেন।
কর্ম স্মৃতিশক্তি, সচেতনতা, আবেগ বিশ্লেষণের মতো নানান দিক এ পরীক্ষায় পরিমাপের চেষ্টা ছিল। পেশাজীবীদের বয়স, লিঙ্গ এবং নিজ শিল্পে কাজ করার অভিজ্ঞতাও জানাতে হয়েছে।
ফলাফল দুই পেশার মানুষের মধ্যেই তুলনা করা হয়। পাশাপাশি এর আগে যারা 'গ্রেট ব্রিটিশ ইন্টেলিজেন্স টেস্ট'- এ অংশ নিয়েছিলেন এমন ১৮ হাজার ব্রিটিশ নাগরিকের ফলও তার সাথে তুলনা করেন গবেষকরা।
ফলাফলে উঠে এসেছে মজার কিছু তথ্য। যেমন শব্দার্থগত সমস্যা সমাধানে রকেট বিজ্ঞানীদের চেয়ে বেশি স্কোর পেয়েছেন নিউরোসার্জনরা। বিরল শব্দ শনাক্তেও তারা এগিয়ে।
অন্যদিকে, অ্যারোস্পেস প্রকৌশলীরা (রকেট বিজ্ঞানীরা) সচেতনতার দিক থেকে তাদের প্রতিপক্ষ পেশাটির চেয়ে ভালো ফল দেখিয়েছেন। ঘূর্ণায়মান চিত্রের মতো মানসিক ধাঁধা সমাধানেও দেখান অধিক দক্ষতা। তবে সাধারণ মানুষের ফলাফলের সাথে তুলনার পর দেখা যায়, এসব দিকে তারা খুব একটা এগিয়ে নেই।
নিউরোসার্জনরা সমস্যা সমাধানে বেশ কম সময় নিলেও; তাদের স্মরণশক্তি ছিল বেশ ধীরগতির।
গবেষকরা মনে করছেন, মগজে অস্ত্রপাচার কাজ অত্যন্ত দ্রুত সাড়তে হয় বলেই তাদের তাৎক্ষণিক সমস্যা সমাধানের প্রতিক্রিয়া বেশ জোরালো।
গবেষণার উপসংহারে বলা হয়, "নিউরোসার্জন ও অ্যারোস্পেস প্রকৌশলীদের হয়তো আমরা অহেতুক ভাবনায় শীর্ষ আসনে বসিয়েছি। অন্যান্য পেশার মানুষও এমন মেধার অধিকারী হতে পারে।"
- সূত্র: বিবিসি