আফগানিস্তান নির্বাচন কমিশনের কোনো প্রয়োজন নেই: তালেবান
আফগানিস্তানের পশ্চিমা-সমর্থিত সাবেক প্রশাসনের নির্বাচন কমিশনকে বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন তালেবান। তালেবানদের ভাষ্যে, আফগানিস্তান নির্বাচন কমিশনের কোনো প্রয়োজন নেই। গেল শনিবার (২৫ ডিসেম্বর) তালেবানদের এক মুখপাত্র গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
আফগানিস্তানের ইন্ডিপেনডেন্ট ইলেকশন কমিশন (আইইসি) এবং ইন্ডিপেনডেন্ট ইলেক্টোরাল কমপ্লেইন্টস কমিশনের দিকে ইঙ্গিত করে মুখপাত্র বিলাল কারিমি বলেন, "এসব নির্বাচন কমিশন টিকে থাকার বা এদের কার্যক্রমের কোনো প্রয়োজন নেই। পরে যদি কখনো আমরা এসবের প্রয়োজন বোধ করি, তাহলে ইসলামি আমিরাত এই কমিশনগুলো আবার ফিরিয়ে আনবে।"
আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গেই আফগানিস্তান সরকার দুর্বল হয়ে পড়ে এবং চলতি বছরের আগস্টে আরও একবার দেশের ক্ষমতা দখল করে তালেবান।
২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত আইইসি'র ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়, আফগানিস্তানে প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনসহ সব ধরনের নির্বাচন কার্যক্রম পরিচালনা ও তদারকি করার দায়িত্ব ছিল আইইসির।
আফগানিস্তান সরকারের পতনের আগপর্যন্ত নির্বাচন কমিশন প্যানেলের প্রধান ছিলেন আওরঙ্গজেব। বার্তা সংস্থা এএফপিকে তিনি বলেন, "তারা তাড়াহুড়া করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং নির্বাচন কমিশন বিলুপ্ত করে দিয়েছে যার পরিণাম হবে অনেক বড়।"
তিনি আরও বলেন, "এই কাঠামো যদি টিকে না থাকে, আমি শতভাগ নিশ্চিত যে আফগানিস্তানের সমস্যাগুলো আর কখনোই সমাধান করা যাবে না; কারণ এখানে আর কোনো নির্বাচনই হবে না।"
সাবেক প্রশাসনের এক সিনিয়র রাজনীতবিদ হালিম ফিদাই জানান, নির্বাচন কমিশন বিলুপ্ত ঘোষণার মাধ্যমে তালেবান দেখিয়ে দিয়েছে যে তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না।
গত ২০ বছর যাবত ৪টি প্রদেশের গভর্নরের দায়িত্ব পালন করা ফিদাই বলেন, "তারা সব ধরনের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। তারা শুধু বন্দুকের গুলির মাধ্যমে ক্ষমতা চায়, ব্যালট দিয়ে নয়।"
এছাড়া, তালেবানরা ক্ষমতা দখলের আগে একাধিক নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তাকে হত্যা করে সশস্ত্র বাহিনী।
কারিমি আরও জানান, চলতি সপ্তাহে আরও দুটি সরকারি বিভাগ, শান্তি মন্ত্রণালয় এবং সংসদীয় মন্ত্রণালয়কেও বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে তালেবান।
এরই মধ্যে আফগানিস্তানের প্রশাসনিক কার্যক্রমে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে তালেবান। আরও আগেই সাবেক প্রশাসনের নারী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে সরিয়ে দিয়ে সে জায়গায় পূণ্য কাজ প্রচার ও পাপ থেকে বিরত থাকার জন্য বিশেষ মন্ত্রণালয় চালু করেছে তারা। নব্বইয়ের দশকে যখন তালেবানরা প্রথম ক্ষমতা দখল করে, সে সময় কট্টর ধর্মীয় অনুশাসন আরোপের জন্য কুখ্যাতি লাভ করে এ মন্ত্রণালয়।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে এসব অনুশাসন কিছুটা শিথিল করেছে তালেবান সরকার। এই মুহূর্তে তারা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের সাহায্য পাওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে চাপ দিচ্ছে।
সূত্র: আল জাজিরা