ইউক্রেন সংকটের মধ্যেই রাশিয়া থেকে তেলের আমদানি বাড়ালো যুক্তরাষ্ট্র
চলমান ইউক্রেন সংকটের মাঝে রাশিয়ার তেল, গ্যাস তথা জ্বালনির ওপর থেকে নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে ইউরোপ। অথচ ইউরোপীয় মিত্রদের এমন চাপের বিপরীতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত সপ্তাহে রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেলের আমদানি ৪৩ শতাংশ বা প্রতিদিন ১ লাখ ব্যারেল বাড়িয়েছে। রোববার (৩ এপ্রিল) রাশিয়ার গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন দেশটির নিরাপত্তা পরিষদের উপসচিব মিখাইল পপভ।
সমালোচকদের ইঙ্গিত করে পপভ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র তার ইউরোপীয় মিত্রদের তোয়াক্কা না করেই নিজেদের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত।
"এছাড়াও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য হিসেবে অনুমোদন দিয়ে, ওয়াশিংটন তার কোম্পানিগুলোকে রাশিয়া থেকে খনিজ সার আমদানির অনুমতি দিয়েছে", যোগ করেন তিনি।
রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্ব শুরু হওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় মিত্ররা রাশিয়া থেকে তেল আমদানি নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাশিয়ার তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য আমেরিকা ও যুক্তরাজ্য উভয়ের কাছ থেকেই চাপের সম্মুখীন হচ্ছে ইউরোপ। যদিও ইউরোপ অঞ্চল তার মোট জ্বালানি তেলের প্রায় ৪০ শতাংশের জন্য রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল।
এ বছরের শেষ নাগাদ রাশিয়ার কাছ থেকে তেল আমদানি বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে ব্রিটেন। অন্যদিকে, মার্কিন ট্রেজারি অফিস রাশিয়ার কাছ থেকে তেল এবং কয়লা আমদানির চুক্তি শেষ করার সময়সীমা নির্ধারণ করেছে আগামী ২২ এপ্রিল।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রপ্তানি গত মাসে প্রায় ১৬ শতাংশ বেড়ে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে বলে উঠে এসেছে রিফিনিটিভের প্রাথমিক তথ্যে। ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর ইউরোপীয় দেশগুলো রাশিয়ার কাছ থেকে গ্যাস আমদানি কমানোর চেষ্টার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের এলএনজির চাহিদা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় মিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপ টানা চার মাস ধরে মার্কিন এলএনজির শীর্ষ আমদানিকারক। যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানির প্রায় ৬৫ শতাংশই এখন কিনে নিচ্ছে ইউরোপীয় দেশগুলো।
চলতি বছর ইউরোপে কমপক্ষে ১৫ বিলিয়ন ঘনমিটার অতিরিক্ত তরল প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়ার জ্বালানির ওপর থেকে ওই অঞ্চলের নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে ইউরোপের সঙ্গে এক যৌথ চুক্তির পর, গত ২৫ মার্চ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়া, হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, এলএনজির এই অতিরিক্ত পরিমাণ সামনের দিনগুলোতে আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
চলমান এই জ্বালানি ইস্যুতে বিশ্লেষকরা বলেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট এবং রাশিয়ার তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞার সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেটিজেনদের অনেকেই মার্কিন এই পদক্ষেপকে উপহাস করছেন। ইউরোপীয় মিত্রদের ফাঁদে ফেলে নিজের স্বার্থ সর্বোচ্চ পরিমাণে হাসিল করে নেওয়ার অভিযোগও আনা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ওপরে।
অনেকের ধারণা, রাশিয়ার কাছ থেকে সস্তায় তেল কিনে, সেই তেল আবার বেশি দামে ইউরোপের দেশগুলোতে পুনরায় বিক্রি করে মুনাফা করতে পারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
- সূত্র: গ্লোবাল টাইমস