কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা: সত্য এবং কল্পনা
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে লক্ষণীয় অগগ্রতি এমন কিছু উদ্ভাবনের পথ খুলে দিয়েছে, যা কখনও সম্ভব হবে বলে ভাবিনি আমরা। কম্পিউটার এবং রোবট এখন আমাদের কাজ আরও উন্নত করে তোলার উপায় নিয়ে চিন্তা করার ক্ষমতার পাশাপাশি সিদ্ধান্তও নিতে পারছে।এ কাজটি অবশ্যই অ্যালগোরিদমের সাহায্যে স্বতন্ত্র সচেতনতা ছাড়াই করা হচ্ছে। তাসত্ত্বেও কিছু প্রশ্ন না তুলে পারছি না আমরা। যন্ত্র কি ভাবতে পারে? বিবর্তনের এই পর্যায়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি করতে পারে? কোন মাত্রায় এটি স্বাধীন? এর ফলে মানুষের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কি অবস্থা দাঁড়াবে?
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দুয়ার খুলে দেওয়ার চেয়েও বেশি করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সাংষ্কৃতিক বিপ্লবের উস্কানি দিচ্ছে। অনিবার্যভাবে এটা আমাদের ভবিষ্যৎ পাল্টে দেবে, কিন্তু ঠিক কিভাবে, আমরা এখনও জানি না। সেকারণেই এটি যুগপৎ বিস্ময় আর ভীতি তৈরি করছে।
বর্তমান সংখ্যায় কম্পিউটার বিজ্ঞান, প্রকৌশল এবং দর্শনের আধুনিক প্রযুক্তির বেশ কিছু দিক তুলে ধরে কিছু বিষয় ব্যাখ্যার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। এই প্রসঙ্গে বেশ কিছু বিষয় স্পষ্ট করা হয়েছে। কারণ, এটা স্পষ্ট থাকা দরকার যে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভাবতে পারে না।
এছাড়া মানুষের সমস্ত উপাদান কম্পিউটারে ডাউনলোড করার মতো অবস্থায় পৌঁছানো এখনও বহু দুরস্ত। মানুষের সাথে কাজ করার ক্ষেত্রে রোবট কিছু রুটিন মেনে চলে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট কর্মধারার বাইরে এর সত্যিকার অর্থে সামাজিক সম্পর্ক তৈরির ক্ষমতা নেই।
তবু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কিছু কিছু প্রয়োগ ইতিমধ্যেই প্রশ্নের মুখে পড়েছে -- ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় হামলা চালানো ডেটা সংগ্রহ, সহিংস আচরণ শন্ক্তাকরণ বা বর্ণবাদী সংস্কার সংশ্লিষ্ট ফেসিয়াল অ্যালগোরিদম, মিলিটারি ড্রোন এবং স্বয়ংক্রিয় মারাত্মক অস্ত্র, ইত্যাদি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে দেখা দেওয়া গুরুতর নৈতিক সমস্যার সংখ্যা বিপুল। এ সবসমস্যা নিঃসন্দেহে আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।
কুত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারিগরি দিকে গবেষণা পুর্ণ উদ্যোমে চলছে যখন, নৈতিক ক্ষেত্রে তেমন একটা অগ্রগতি ঘটেনি। বহু গবেষক এব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও এবং কিছু দেশ গুরুত্বের সাথে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে শুরু করলেও এখনও অবধি বৈশ্বিক দিক থেকে নৈতিকতার বিষয়ে আগামী দিনের গবেষণাকে পথ দেখানোর মতো কোনও আইনি কাঠামো নেই।
১৯৫৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ারে ডারমুথ কলেজে চারজন আমেরিকান গবেষক জন ম্যাকার্থি, মার্ভিন মিনস্কি, নাথানিয়েল রচেস্টার এবং ক্লদ শ্যানন আয়োজিত এক গ্রীষ্মকালীন ওয়ার্কশপে বিজ্ঞানের বিষয় হিসাবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আনুষ্ঠানিক সূচনা ঘটে। সেই থেকে 'আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স' বা 'কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা' বুলিটি এত বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যে আজকের দিনে সবাই এর কথা জানে। সম্ভবত চটক তৈরির জন্যেই প্রথমে বুলির উদ্ভাবন করা হয়েছিল।কম্পিউটার বিজ্ঞানের এই প্রয়োগ বছর পরিক্রমায় বিস্তৃতি লাভ করেছে এবং এর সুবাদে সূচিত প্রযুক্তিগত ষাট বছরের পৃথিবীকে বদলে দেওয়ার পেছনে ব্যাপক অবদান রেখেছে।
অবশ্য, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা সংক্ষেপে এআই-এর সাফল্যকে অনেক সময় বুদ্ধিমান কৃত্রিম সত্তার কথা বোঝাতে প্রয়োগ করা হলে, তা ভুল ধারণার ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়। এই সত্তা শেষমেশ খোদ মানুষের সাথে প্রতিযোগিতায় নামবে বলে ধরে নেওয়া হয় তখনই।এই ধারণাটি গোলেমের [ইহুদি লোককথার জীবন্ত প্রতিমা] মতো প্রাচীন মিথ ও কিংবদন্তীর কথা মনে করিয়ে দেয়। তবে প্রয়াত ব্রিটিশ পদার্থবিদ স্টিফেন হকিং (১৯৪২-২০১৮), আমেরিকান উদ্যোক্তা এলন মাস্ক, আমেরিকান ভাবিষ্যৎবাদী রে কার্যওয়েইল এবং আমরা এখন যাকে শক্তিশালী এআই বা অর্টিাফিশিয়াল জেনারেল ইন্টেলিজেন্স (এজিআই) বলছি, তার প্রবক্তাসহ সমসাময়িক ব্যক্তিদের হাতেই এটি আবার আরও উন্নত হয়েছে।
বিজ্ঞানের এই শাখটি মূলত জ্ঞানভিত্তিক প্রতিটি কাজ-বিশেষত শিক্ষা, যুক্তি প্রয়োগ, হিসাব নিকাশ, ধারণা, স্মৃতিশক্তি এবং এমনকি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার বা শৈল্পিক সৃজনশীলতা - নতুন করে সৃষ্টির লক্ষ্যে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং স্পষ্টভাবে বর্ণনা করার ধারণার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এআই-এর অস্তিত্বের ষাট বছরেরও বেশি সময়ে এই ধারণা বাতিল বা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করার মতো কিছু মেলেনি, ফলে এটা এখনও পুরোপুরি উন্মুক্ত এবং সম্ভাবনাময়ই রয়ে গেছে। এখনও চূড়ান্ত কোনো পরিণতি পায়নি বলাই যায়।
অসম অগ্রগতি: সংক্ষিপ্ত আয়ুষ্কালে এআই অসংখ্য পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে গেছে। ছয়টি পর্যায়ে এগুলোকে সারাংশায়িত করা যেতে পারে।
প্রবক্তাদের আমল: সবার আগে এআই-এর সূচনাকালের উল্লাস এবং প্রাথমিক সাফল্যের পটভূমিতে গবেষকরা কল্পনার লাগাম ছেড়ে দিয়ে বেশ কিছু বেপরোয়া বক্তব্য তুলে ধরেছিলেন। পরে সেজন্যে তাদের কড়া সামলোচনার মোকাবিলা করতে হয়। যেমন, ১৯৫৮ সালে আমেরিকান রাজনীতি বিজ্ঞানী এবং অর্থনীতিবিদ, ১৯৭৮ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী হার্বার্ট এ. সিমন, আন্তর্জাতিক ক্রীড়ায় অংশগ্রহণে বাদ সাধা না হলে দশ বছরের ভেতর মেশিনই বিশ্বদাবায় চ্যাম্পিয়ন হবে বলে ঘোষণা করেছিলেন।
অন্ধকার কাল: মধ্য ষাটের দশকে অগ্রগতি যেন শ্লথ হয়ে গেছে বলে মনে হয়েছে। ১৯৬৫ সালে দশ বছরের এক বালক দাবায় কম্পিউটারকে হারিয়ে দেয়। ১৯৬৬ সালে মার্কিন সিনেট নির্দেশিত এক প্রতিবেদনে যান্ত্রিক তরজমার সীমাবদ্ধতা তুলে ধরা হয়। প্রায় এক দশকের মতো এআই বিরূপ সংবাদের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
ভাষিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা: তবু কাজ এগিয়ে গেছে, তবে গবেষণা পরিচালিত হয়েছে ভিন্ন দিকে। কম্পিউটারে সক্রিয় করে তোলার প্রয়াসে স্মৃতিশক্তির মনস্তত্ত্ব ও উপলব্ধির প্রক্রিয়া এবং যুক্তি প্রয়োগের ক্ষেত্রে জ্ঞানের ভূমিকার দিকে নজর দিয়েছে।এতে করে জ্ঞানের ভাষাগত উপস্থাপনের কৌশল বা প্রযুক্তির আর্বিভাব ঘটে। মধ্য ১৯৭০-র দশকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লাভ করে বিশেষজ্ঞ ব্যবস্থার -দক্ষ ব্যক্তিদের জ্ঞান কাজে লাগিয়ে তাদের চিন্তা প্রক্রিয়ার পুনরাবৃত্তি ঘটানোর কারণেই এই নাম -- বিকাশের পথে নিয়ে গেছে। ১৯৮০-র দশকে রোগ শনাক্তকরণসহ ব্যাপক প্রয়োগের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ব্যবস্থা বিশাল আশাবাদের সূচনা ঘটিয়েছিল।
নব্য-যোগাযোগবাদ এবং যান্ত্রিক শিক্ষা: প্রযুক্তিগত বিকাশ যন্ত্রের অ্যালগরিদম শিক্ষার দিকে নিয়ে গেছে। ফলে নিজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কম্পিউটার বিভিন্ন জ্ঞান পুঞ্জীভূত করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজেদের রিপ্রোগ্রাম করতে পেরেছে।
এটা আবার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কম্পিউটার বিজ্ঞান, কৃত্রিম প্রাণ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রের কৌশলকে এক করে সঙ্কর পদ্ধতি গড়ে তোলা শিল্পক্ষেত্রে প্রয়োগের (আঙুলের ছাপ শনাক্তকরণ, কণ্ঠ শনাক্তকরণ, ইত্যাদি) বিকাশের দিকে নিয়ে গেছে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থেকে মানুষ-মেশিন সংযোগ: ১৯৯০-এর শতকের শেষদিক থেকে অনুভূতি এবং আবেগের অস্তিত্ব বোঝানোর মতো বুদ্ধিমান সত্তা তৈরির লক্ষ্যে রোবোটিক্স এবং মানুষ-মেশিন সংযোগের সাথে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে সম্পর্কিত করা হয়। এটা অন্যান্য জিনিসের ভেতর বিষয়বস্তুর অনুভূত আবেগ মূল্যায়ন শেষে মেশিনে নতুন করে সৃষ্টির লক্ষ্যে আবেগীয় হিসাব (এফেক্টিভ কম্পিউটিং) এবং বিশেষ করে বাকশক্তি সম্পন্ন সত্তার (চাটবটস) পথ খুলে দিয়েছে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রেনেসা: ২০১০ সালের পর থেকে আনুষ্ঠানিক নিউরাল নেটওয়ার্ক ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে যন্ত্রের শক্তি/ক্ষমতা গভীর শিক্ষা পদ্ধতিতে বিপুল পরিমাণ ডেটা (বিগ ডেটা) ব্যবহার সম্ভব করে তুলেছে। বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে অত্যন্ত সফল বেশ কিছু অ্যাপ্লিকেশন -- কণ্ঠ এবং ইমেজ শনাক্তকরণ, স্বাভাবিক ভাষা অনুভব এবং স্বয়ংক্রিয় গাড়িসহ -- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রেনেসাঁ সৃষ্টির দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
অ্যাপ্লিকেশনস: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারকারী বহু সাফল্য মানবীয় ক্ষমতাকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ১৯৯৭ সালে একটি কম্পিউটার প্রোগাম বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়নকে পরাজিত করে। ২০১৬ সালে অন্যান্য কম্পিউটার প্রোগ্রম সেগা গো [প্রাচীন চীনা বোর্ডের খেলা] খেলোয়াড় এবং বেশ কয়েকজন সেরা পোকার খেলোয়াড়কে হারিয়ে দিয়েছিল। কম্পিউটার এখন বিভিন্ন ধরনের গাণিতিক থিওরেম প্রমাণ করছে অথবা প্রমাণের ক্ষেত্রে সাহায্য করছে। যান্ত্রিক শিক্ষা কৌশল ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ ডেটা থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টেরাবাইটস (১০১২ বাইটস) বা এমনকি পিটাবাইটসে (১০১৫ বাইটস) জ্ঞান নির্মিত হচ্ছে। পরিণামে যন্ত্র এখন কথা শনাক্ত করে লিখিত রূপ দিচ্ছে -- ঠিক অতীতে টাইপিস্টরা যে কাজটি করতেন।
কম্পিউটার এখন নিখুঁতভাবে লক্ষ লক্ষ মানুষ বা হাতের ছাপ থেকে চেহারা বা আঙুলের ছাপ চিনতে পারে, কিংবা স্বাভাবিক ভাষায় লেখা টেক্সট পড়তে পারে। যান্ত্রিক শিক্ষা কৌশল কাজে লাগিয়ে গাড়ি আপনাআপনি চলে। মোবাইল ফোনে তোলা চামড়ার ফোঁড়ার ছবি ব্যবহার করে ফুসকুড়ি শনাক্তের ক্ষেত্রে মেশিন এখন চর্মবিদদের চেয়েও ভালো। রোবট এখন মানুষের বদলে যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে। কল কারখানায় উৎপাদন প্রক্রিয়া ক্রমবর্ধমানহারে স্বয়ংক্রিয় হয়ে উঠছে। মোবাইলেও ঢুকে পড়েছে এআই, আমার যারা স্মার্ট ফোন ব্যবহার করি তারা প্রত্যেকেই জানি, চোখের মণি, হাতের ছাপ কিংবা কণ্ঠ শুনে শনাক্তকরন-এগুলো সবই মামুলি পর্যায়ে নেমে এসেছে মোবাইলে।
বিজ্ঞানীরা গঠনের পর্যায়ক্রম থেকে বিশেষ ধরনের জৈবিক ম্যাক্রোমলিউকুল, বিশেষত প্রোটিন এবং জিনোমের কাজ নির্ধারণের লক্ষ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কৌশল ব্যবহার করছেন। আরও সাধারণভাবে সিলিকো পরীক্ষার কারণে বিজ্ঞানের সকল শাখা একটি প্রধান জ্ঞানতাত্ত্বিক উন্মাদনার কাল অতিক্রম করছে। বিপুল পরিমাণ ডেটা থেকে শক্তিশালী প্রসেসর, যার মূল অংশ সিলিকনের তৈরি, ব্যবহারকারী কম্পিউটারের মাধ্যমে পরীক্ষা চালানো হয় বলেই এই নামকরণ। এভাবে, এগুলো জীবিত বস্তু এবং কাঁচের টেস্টটিউবে চালানো ভিট্রো পরীক্ষা থেকে ভিন্ন হয়ে দাঁড়ায়। বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রায় সকল ক্ষেত্রকেই -- বিশেষ করে শিল্প, ব্যাংকিং, বীমা, স্বাস্থ্য এবং প্রতিরক্ষা -- প্রভাবিত করছে। বেশ কিছু নিত্যনৈমিত্তিক কাজ এখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে সারা হচ্ছে, তাতে বহু পেশা বদলে যাচ্ছে, বেশ কিছু পেশা বিলুপ্ত হচ্ছে।
নৈতিক ঝুঁকিগুলো কি: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে সম্ভবত রসিকতা ছাড়া বুদ্ধিমত্তার বেশিরভাগ দিকই কম্পিউটার ব্যবহারের মাধ্যমে যৌক্তিক বিশ্লেষণ এবং পুনর্নির্মাণের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এছাড়া, মেশিন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমাদের জ্ঞানতাত্ত্বিক ক্ষমতা ছাড়িয়ে গিয়ে নৈতিক ঝুঁকির ভীতি বাড়িয়ে তুলছে। তিনটি ভাগে এই ঝুঁকিকে ভাগ করা যায়: মানুষের বদলে মেশিন দিয়েই কাজ করা সম্ভব বলে কাজের অভাব; বিশেষ করে স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ব্যক্তির স্বাতন্ত্র্যবোধের অবনমন; এবং আরও 'বুদ্ধিমান' মেশিনের মানুষের স্থান অধিকার।
তবে বাস্তব ক্ষেত্রে মানুষের হাতে সারা কাজগুলো উধাও হতে দেখি না আমরা। বরং উল্টো, নতুন নতুন দক্ষতার প্রয়োজন দেখা দিচ্ছে। একইভাবে যতক্ষণ আমরা ব্যক্তিগত জীবনে যন্ত্রের অনুপ্রবেশের বেলায় সতর্ক থাকছি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশের ফলে কোনও ব্যক্তির স্বাধীনতা ও স্বাতন্ত্র্য বিঘ্নিত হচ্ছে না। সবশেষে, সাধারণভাবে মানুষ যাই দাবি করুক না কেন, মেশিন মানুষের অস্তিত্বের ক্ষেত্রে হুমকি নয়। এগুলোর স্বাধীনতা কেবলই প্রযুক্তিগত, এক্ষেত্রে মেশিন কেবল তথ্য গ্রহণ থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ পর্যন্ত বস্তুগত ধারার সাথেই সম্পর্কিত। অন্যদিকে, মেশিনের নৈতিক স্বাধীনতা নেই, কারণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় আমাদের বিভ্রান্ত এবং ভুল পথে নিলেও এদের নিজস্ব ইচ্ছা বলে কিছু নেই, চাপিয়ে দেওয়া উদ্দেশ্যের অধীনই থাকবে এগুলো।
সূত্র: জাঁ গাব্রিয়েল গানস্কালা, কুরিয়ার