মানুষ একটু বাঁচুক
এইসব দিন কী করে যায়?
অবসাদগ্রস্থ।
এইসব দিন কী করে কাটে?
শব দিনের মতো।
এই শব দিন কাটে কোন ডোম?
লাশকাটা ঘরে বেজন্মার বেজন্মা ধর্ষণ করে শব দিনকে?
ধর্ষণ আদিম। প্লেগের সময় কি ধর্ষণের হার এরকম বেড়ে গিয়েছিল? কলেরার সময়? স্পেনিশ ফ্লুর সময়? তেমন নথিপত্রের সুলুক সন্ধান আছে কিছু?
চাঁদে গিয়ে পায়ের ছাপ রেখে ফিরেছে। চন্দ্রবিজয়। জড়পিন্ড এই বোকা বিজয়ে কার যে গোষ্ঠীর পিন্ডি হয়েছে? হিরোশিমা নাগাসাকি ভুলে গেছে মানুষ? আর কিছু মানুষ, তারা লেননের ইমাজিন ভুলে যাবে?
ফাল্গুনী রায়চৌধুরী। অন্ধকারের তরুণ মাস্টারমশাই। কিছু নিরাকার অন্ধকারের মুসাবিদা করে রেখে গেছেন। আরবান অন্ধকার। রক্ত হিম হয়ে আসে। এখন যার যা মনে হয় বলছে। টক শো বলে এক ব্যাপার হয়েছে! টিভি চ্যানেলে, অনলাইনে। চব্বিশ ঘন্টা, যখন তখন হয়। কথা যে কী নিয়ে হয় না? করোনা পরিস্থিতি আছে যতদিন, নিশ্চিত টক শো অলারা। জীবন মৃত্যু পায়ের মোস্ট অবিডিয়েন্ট সার্ভেন্ট মানুষের। বলা যাবে। তবে এই সময়ও ধর্ষণ ঘটে। ঘটে, ঘটছে। এই না হলে মানুষ। এই সময় ধর্ষণ ঘটে মর্গেও। অপঘাতে মৃত মেয়েদের লাশ, মায়াও লাগে না একটা বেজন্মার! কি না, অসুস্থ সে। মানসিক অসুখে আক্রান্ত। কুৎসিত সে অসুখের নাম নেক্রোফিলিয়া। নাম কী হারামজাদার! মুক্তা ভক্ত। সরকারী হাসপাতালের মর্গের ডোম। ধরা পড়ে ৬৪ ধারায় বিকারহীন জবানবন্দী দিয়েছে!
নিউজ হয়েছে মিডিয়ায় হাসপাতালের মর্গে মৃত কিশোরীদের সঙ্গে সংসর্গ : ডোম মুন্না ভক্ত ধরা পড়েছে।
আমরা কোথায় আছি? আমরা এখানে কেন?
কোভিড-১৯ সংক্রমণের পর চার মাস মতো লকডাউন ছিল পৃথিবী। ক্যালিফোর্নিয়ার পাহাড়ে পাহাড়ে অবাধে রূপবতী পপি ফুল ফুটেছে। পৃথিবীর সব ঘাস সবুজ হতে পেরেছে আর একটু। তাতে কী হয়েছে?
মধ্যযুগ, উপনিবেশ যুগ সব যে হুড়মুড় করে ফিরল! আজ্ঞাবহ মহা সৃষ্টিশীল যুগ। হান্ডুল বান্ডুল যুগ।
কী মনে হয়?
কোভিড-১৯ ভাইরাস মানুষ বানায় নি?
না বানাল, ব্যবসা তো হলো। বিলিয়ন-ট্রিলিয়ন ডলারের ব্যবসা। এক টাকা চল্লিশ পয়সা দামের একটা মাস্কের দাম লক ডাউনের সময় একশ আশি টাকা হয়ে গিয়েছিল। দুষ্প্রাপ্য জিনিস। এখন সুষ্প্রাপ্য। পঞ্চাশটার প্যাকেট একশ টাকা এখন। ষাট পয়সা করে দাম বেড়ে গেছে। বিক্রিও ষাট গুণন ষাট গুণ বেড়েছে। দেদার বিকোচ্ছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, গ্লাভস, মোবাইল ফোন, ট্যাব। বিজ্ঞাপন ছাড়া বিকোচ্ছে। ঘরে থাকো, অনলাইনে থাকো। বাঁচো। কোভিড-১৯ কি টি-ভাইরাস? কিছু মানুষকে মেরে দিচ্ছে আর কিছু মানুষকে জিম্মি করে দিচ্ছে!
অহংকার পতনের মূল বলছি আবার সৃষ্টির সেরা জীব বলছি নিজেদের। আমরা মানুষ। কেন, একটা পিঁপড়েও আমাদের কখনও বলেছে, তোরা শ্রেষ্ঠ! নয়ানজুলির একটা ডানকানা মাছ কি একটা কুর্চি বলেছে!
সব দিন শব দিন। যায়। বিষাদে যায়, বিস্বাদে যায়। কোভিড-১৯ এর তরাস কিছুদিন ধরে কিছু ফিকে হয়ে আসছিল। আবার ফিরেছে। তিন দিন আগে যে মানুষটার সামান্য জ্বর হয়েছে শুনলাম, আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে টেক্সট মেসেজ দেখি, অমুক ইজ নো মোর। রুটিন হয়ে গেছে এটা রোজকার।
ভালো লাগে না মৃত্যুর সংবাদদাতাদের। দায়িত্ব মনে করে অহর্নিশ তারা এর-ওর মৃত্যু সংবাদ ডেলিভারি দিয়েই যাচ্ছে, দিয়েই যাচ্ছে। আরে! করোনায় তুই মরবি না? লিস্টে তোর নাম নেই?
এই শব বাস্তবতার নাম নতুন বাস্তবতা। নতুন বাস্তব! নিউ রিয়েল। সবকিছুর একটা নাম রেখে দিতে কেন যে এত পছন্দ আমাদের। বটগাছ বলেনি আমি বট, স্বাতী নক্ষত্র বলেনি আমি স্বাতী, জবা ফুল বলেনি আমি জবা, আমরা নাম রেখে বসে আছি সকলের। মা-বাপের দায়িত্ব নিয়ে। কোভিড-১৯ তরাস আমাদের অধিক দায়িত্বশীল করে দিয়েছে। বাস্তবতার মা-বাপ হয়ে গেছি আমরা। আকিকা করে নাম রেখেছি বাস্তবের। নিউ রিয়েল। নতুন বাস্তব। ইতরামির একটা পর্যায় থাকা দরকার।
মারাত্মক কোভিড-১৯। এ আর কী জন্ম দিয়েছে?
মুক্তা ভক্তর মতো কত নেক্রেকে?
সব ঠিক আছে।
শব ঠিক আছে।
মস্তিষ্ক বিকলন ঘটছে কেবল অতি নগণ্য সংখ্যক মানুষের। তারা এক অদ্ভুত কলহাস্য শুনছে। অযুত-নিযুত বছরের জমাট এক হা হা। মাটি থেকে নক্ষত্রের দিকে ছুটছে, হা হা হা হা!
থাক এই শব রিপোর্টিং। দোষঘাট হয়ে গেছে ঢের, ইতরামি যথেষ্ট। এই সব শব দিনরাত্রি বিজ্ঞানসম্মত মহাবিশ্বের সীমানার দিকে যাক। মানুষ একটু বাঁচুক।