রোদের ঘ্রাণ আর বাতাসের রঙ
০১৭. পরোটাকাহন
ঘুম থেকে যদি তাড়াহুড়ো করে উঠতে নাহয় তাহলে সম্ভবত কান সবার আগে সজ্ঞানে আসে, তারপর নাক, সবার শেষে চোখ খুলে আমরা আলো দেখি। যখন শনিবারে সপ্তাহান্ত হতো, মানে 'শনিবারে হাফ, রবিবারে মাফ, সোমবারে বাপরে বাপ!' তখন রবিবার সকালে আমাদের বাসায় আটার হাত-রুটির বদলে ময়দার পরোটা ভাজা হতো।
ঘুম ভাঙতে ঘুলঘুলিতে বাসা বাঁধা চড়ুইয়ের কিচিরমিচির বা সানশেডে বসা সুরমারঙা জালালী কবুতরের অদ্ভুত 'ঘুরুরঘুরুর' ডাকের সাথে পরোটা ভাজার সুবাস নাকে লাগতো। খুব ছোট বেলায় পরোটা ভাজা হতো ঘি দিয়ে। ঘি আস্তে আস্তে দুর্মূল্য হয়ে উঠলে ঘিয়ের জায়গা দখল করে ঢাকা ভেজিটেবল অয়েল মিলের 'পোস্টম্যান' বনস্পতি ঘি ওরফে 'ডালডা', সয়াবিন তেল বা পাম অয়েলের পরোটা তারও বহু পরে আসে। সুতরাং আমার নাকে পরোটার যে সুবাসটা এখনো লেগে আছে সেটা ডালডার পরোটা, যার রঙটা লালচে সোনালী, আকারে চারকোনা, কোনগুলো একটু গোলানো, এবং পাতলা পাতলা পাঁচটা পরতের। সেই পরোটা খাস্তা নয়, নরম, মোলায়েম।
আম্মুর বানানো এই পরোটার কোনো বিশেষ নাম নেই। তবে আমার কাছে কেবল ঐটাই পরোটা–বাকি সব পরোটা নামের অন্য কিছু। ভূতলে আমার নিজস্ব স্বর্গের সকাল শুরু হবে আম্মুর বানানো পরোটা সাথে আলুর ছক্কা আর ডিম অমলেট দিয়ে। সপ্তাহের বাকি দিনের হাত-রুটির সাথে যে আলুভাজি করা হতো সেখানে আলুটা মিহি কুঁচি করে কেটে ভাজা হতো–শুকনো, একটু গায়ে গায়ে লাগা, তাতে কেবল অল্প পেঁয়াজ, ফালি করে কাটা কাঁচামরিচ আর ধনেপাতা দেয়া। তখন শীতকাল ছাড়া ধনেপাতা পাওয়া যেতো না বলে অন্য সময়ে আলু ভাজিতে সুগন্ধের জন্য ভাজা শুকনো মরিচ ছাড়া অন্য কিছু দেয়া হতো না। তখনকার শীতকাল স্পেশাল ধনেপাতা, টমেটো, ফুলকপি এখন সারা বছর পাওয়া যায় বটে, তবে আগের সব সুবাস হারিয়ে ঘাসের মতো গন্ধহীন, স্বাদহীন হয়ে গেছে।
রবিবারের আলুভাজির আলু কাটা হতো লুডুর ডাইসের মতো করে। একারণে এই ভাজির নাম আলুর ছক্কা। এতে পাঁচ ফোড়ন দেয়া হয় বলে এর স্বাদ, গন্ধ অন্য আলুভাজির চেয়ে আলাদা।'ফার্মের মুরগী' নামক বস্তুটা তখনো আবিষ্কৃত হয়নি বলে লালচে রঙকরা 'ফার্মের ডিম' বলেও কিছু ছিল না। সুতরাং তখন ডিম মানে হয় দেশী মুরগীর অথবা দেশী হাঁসের। সেই ডিম ভাঙলে তার কুসুমের রঙ, আকার এবং ভাজলে তার সুবাস, স্বাদ থেকে পর্যন্ত আলাদা করে বলা যেত কোনটা কীসের ডিম। এখন ডিম বা মুরগীর মাংস দুর্গন্ধযুক্ত, বিস্বাদ হয়ে গেছে। যারা উৎপাদন বাড়ানোর গবেষণা করেন তাদের কাছে সম্ভবত স্বাদ, গন্ধ খুব একটা গুরুত্ব পায় না, নয়তো উচ্চ ফলনশীল ফসল, হাইব্রিড পশু, পাখির মাংসের ক্ষেত্রে ফলাফলগুলো এমন হয় কেন!
এখন যেমন লোকে হুটহাট করে রেস্তোরাঁ থেকে খাবার কিনে আনেন বা সপরিবারে রেস্তোরাঁতে খেতে চলে যান আগে সেটার হার বেশিরভাগ পরিবারে খুব কম ছিল।সকালে রেস্তোরাঁর পরোটা-ভাজি খেতে আমার তাই অনেকটা সময় লেগে গিয়েছিল। তখন সকালে বাইরের নাস্তা মানে পরোটা-ভাজি-ডাল-হালুয়া'র জন্য লোকে মূলত মিষ্টির দোকানগুলোতে যেতেন। আদর্শ-জগদ্বন্ধু-লোকনাথ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার অথবা মরণচাঁদ-মহনচাঁদ-অমরচাঁদ-যাদব ঘোষ-জলখাবার-মধুমিতা-দেশবন্ধু।
এদের প্রত্যেকের পরোটা আর ভাজির নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের চেহারা ও স্বাদ ছিল। আমি কলাবাগান-ফার্মগেট-পল্টন-নবাবপুর-রথখোলা'র মরণচাঁদ, হাতিরপুল-শান্তিনগর-রামপুরা-মহাখালী'র জলখাবার, মগবাজার-রামপুরা-আরামবাগ-শাহজাহানপুরের মধুমিতা, রামকৃষ্ণ মিশন রোডের দেশবন্ধু, মিরপুর রোডের যাদব ঘোষ-মহনচাঁদ, শাহবাগের কোহিনূর, সারা ঢাকায় ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য বিক্রমপুর সুইটসের অনেকগুলো, চারার গোপ-সান্ত্বনা মার্কেটের আদর্শ, উকিলপাড়ার জগদ্বন্ধু আর চাষাড়ার লোকনা থেকে কতবার পরোটা-ভাজি-ডাল-হালুয়া খেয়েছি তার ইয়ত্ত্বা নেই।শাঁখারীবাজারের অমূল্য বা কোতওয়ালী থানার পাশের দোকানগুলোতে কালেভদ্রে খাওয়া হয়েছে।
এখন এসব দোকানের কোন কোনটা উঠে গেছে, কোথাও কারিগর পালটে খাবারের মান পড়ে গেছে, আর কোথাও দোকানের ক্ষমতায় অপোগণ্ড উত্তরাধিকাররা এসে ঐতিহ্যকে ধ্বসিয়ে দিয়েছে। মিষ্টির দোকানগুলোতে রান্নার ব্যবস্থাটা পেছন দিকে কোথাও থাকত। ভাজি, ডাল, হালুয়াভর্তি বিশাল বিশাল স্টিলের গামলাগুলো কোন এক ভোরে এনে সামনের দেয়ালে কাচ লাগিয়ে বানানো শোকেসে রাখা মিষ্টির গামলা আর ট্রেগুলোর সাথে রাখা হতো। একজন মানুষ একটু পরপর পেছনের রান্নাঘর থেকে বাঁশের টুকরি বোঝাই সদ্য বানানো গরম পরোটা নিয়ে আসতেন। পরোটাগুলো ভাজার পরে দশ-বারটা পরোটা একটা কলামের মতো করে সাজিয়ে দু'পাশ থেকে প্রবল বেগে দুই হাতে বাড়িমারা হতো। এতে নাকি পরোটা দীর্ঘক্ষণ নরম থাকে। তাদের কারো ভাজিতে পাঁচফোড়ণ, কারোটাতে মেথি, কারোটাতে গরম মশলা আর কারোটাতে কালিজিরার সুবাস থাকতো।
কোনটা ঝাল ঝাল, কোনটা মাখা মাখা–একেকটা একেক বিস্ময়! একটা কথা প্রচলিত ছিল যে, মিষ্টির দোকানের সুজির হালুয়া আসলে আগের দিনের বাসি মিষ্টি চটকে তার সাথে সুজি মিলিয়ে বানানো। কথাটার সত্যতা কতোটুকু জানি না, তবে অনেক দোকানেই সুজির সাথে বাসি মিষ্টির সিরা যে মেশানো হতো সেটা হলফ করে বলতে পারি। মিষ্টির দোকানের নাস্তায় ডিম ঢুকেছে অনেক পরে, তাও সব দোকানে নয়। কোন অজ্ঞাত কারণে নাস্তায় ডিম বিক্রি করা এবং বিশেষ করে চা বিক্রি করাকে মিষ্টির দোকানদারেরা তাঁদের জন্য অবমাননাকর বলে মনে করতেন।
সবার জানা নামের বাইরে কিছু দোকানে ব্যতিক্রমী পরোটা খাবার সুযোগ হয়েছে। যেমন, নিউ ইস্কাটনের পেট্রোলপাম্পের গলির ভেতরে 'মিরপুর কাবাব' নামে একটা দোকান ছিল যেখানে বাসার মতো চারকোনা, লালচে-সোনালী, পাঁচ পরতের মোলায়েম পরোটা বানানো হতো। দোকানটা উঠে যাবার কয়েক বছর পরে মতিঝিল-আরামবাগ এলাকার ফুটপাতের পাশের 'ছালাদিয়া' হোটেলগুলোতে তার কাছাকাছি চেহারার পরোটা বানাতে দেখেছি। দিলু রোডের মুখে না ঢুকে মগবাজারের দিকে শ'খানেক গজ এগিয়ে গেলে একটা নাম ছাড়া দোকান ছিল যেখানে প্রতিদিন সকালে ডুবো তেলে বড় আকারের গোল, খাস্তাপরোটা ভাজা হতো। আমি আর কোন রেস্তোরাঁতে এভাবে ডুবো তেলে পরোটা ভাজতে দেখিনি। রামপুরার ওয়াপদা রোডে ঢোকার মুখে 'মিষ্টি ভবন' বলে একটা মিষ্টির দোকানে সকালে ছোট, নরম পরোটার সাথে যে ভাজি পাওয়া যেত তাতে শীত-গ্রীষ্ম বারোমাস পটল দেয়া হতো–কেন, কে জানে?
একইভাবে ফকিরেরপুলের অমরচাঁদের ভাজিতে অবধারিতভাবে ভুঁই কুমড়ো দেয়া হতো–তাও আবার খোসা না ছাড়িয়ে। মতিঝিলের পিপলস ইন্স্যুরেন্সের প্রধান কার্য্যালয়ের পেছনের 'বন্ধুহোটেলে' হাত-রুটি আর পরোটার সাথে সাত-সকালেই উচ্ছে ভাজি, ঢ্যাঁড়শ ভাজি, লাউ-চিংড়ির ঝোল, বরবটি ভাজি, মিহি করে কাটা আলু ভাজি আর বারোয়ারী মিক্সড সবজি পাওয়া যেত। কয়েক দশক আগে দিনাজপুরে দেখেছিলাম পরোটার সাথে ডাল বা ভাজি ফ্রি। সেখানকার পরোটাও ঢাকার মতো না।
ঢাকা আর নারায়ণগঞ্জের বাইরে বাংলাদেশের অন্যান্য জেলায় তো বটেই এমনকি ভারতের কোন কোন জায়গায় আমার পরোটা খাবার অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। কিছু কিছু জায়গার পরোটা প্রসংশা পাবার যোগ্য বটে তবে কোথাও কোথাও সেটা এমন বস্তু যে বলে না দিলে বোঝা সম্ভব না যে এটা পরোটা। ভারতীয় প্যাঁচ বা লাচ্ছাপরোটা আমার কখনো ভালো লাগেনি। পরোটার মধ্যে এটা সেটা মিশিয়ে ফিউশন করার চেষ্টাও ভালো লাগে না। ভারতীয় উপমহাদেশের বাইরের কিছু দেশের 'ইন্ডিয়ান' রেস্তোরাঁতে পরোটা খাওয়ার দুর্ভাগ্য হয়েছে। সেগুলোর বর্ণনা দিয়ে প্রবাসী কর্মীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টাকে খাটো করবো না। একবার পূর্ব চীন সাগরের তীরের এক ছোট শহরের এক হোটেলে সকাল বেলা দেখি এক উত্তর প্রদেশীয় পাচক মোগলাই পরোটা ভাজছেন। অভারতীয় লোকজন সেটাকে 'ইন্ডিয়ান পিৎসা' নামে খাচ্ছেন।
আরেকবার দক্ষিণ চীন সাগরের তীরবর্তী এক শহরের স্ট্রীট ফুডের দোকানে দেখি ডিম-পেঁয়াজ-মরিচের বদলে পাকা কলা চটকানো দিয়ে মোগলাই পরোটা ভাজা হচ্ছে। এক গুজরাতী ছেলে মহাউৎসাহে সেই পরোটা মুখে দিয়ে যে বিকট মুখভঙ্গী করলো সেটা দেখে আমি হুঁশিয়ার হয়ে গেলাম।
এখন ছোট-মাঝারী আকারের রেস্তোরাঁগুলোতে অন্য সব খাবার ভেতরের রান্নাঘরে রান্না করা হলেও কী কারনে যেন পরোটা আর সিঙ্গারা রাস্তার পাশে বা রাস্তার ওপরে ভাজা হয়। আমি বিভিন্ন দোকানের পরোটা ভাজার কায়দা আর পরোটার চেহারা দেখে তার গুণগত মান বোঝার চেষ্টা করি।বহুকাল ধরে ভালো-মন্দ পরোটা খাবার অভিজ্ঞতা থেকে এখন চেহারা দেখে পরোটার মান বুঝতে পারি।ঢাকাতে কম করে হলেও হাজার পাঁচেক দোকানে প্রতিদিন প্রায় পঞ্চাশ-ষাট লাখ পরোটা ভাজা হয়। প্রতিদিন এই বিপুল পরিমাণ পরোটা ভাজা হলেও বিপুলসংখ্যক পাচক আটা বা ময়দা মাখানো, পরোটা বেলা, পরোটা ভাজার সঠিক কৌশল রপ্ত করার চেষ্টা না করায় খুব কম দোকানেই ঠিক ঠিক মানের পরোটা ভাজা হয়।
আরও আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে এর দাম, এখানে পাঁচ টাকা থেকে শুরু করে শ'টাকা দামের পরোটা পাওয়া যায়। দামের এই বিরাট হেরফেরের কারণ আমার কাছে বোধগম্য নয়। যেমন এই মহানগরে একটা ডিম ভাজার দাম পনের টাকা থেকে পনেরশ' টাকা পর্যন্ত হয়।
আম্মু যে পরোটা ভাজতেন সেটা চারকোনা, লালচে-সোনালী হলেও দোকানের গুলো হয় গোল, সাদা রঙের। এটা কী করে হয় জানি না। আলোকচিত্র শিল্পী মুস্তাফিজ ভাই বলেছিলেন, দোকানে এক কেজি ময়দা থেকে দোকানে চব্বিশটি পরোটা বানানো হয় বলে সবগুলোর আকার মোটামুটি এক রকমের হয়। দোকানগুলোতে বাসায় বানানো পরোটার মানের পরোটা কেন মেলে না সেটা বুঝতে পারি না।
রেস্তোরাঁর তেলের মান নিয়ে ভোক্তাদের সন্দেহ থাকায় আজকাল 'তেলছাড়া পরোটা' নামের এক বস্তু বেশ চলে, এর নাম শুনলে আমার অন্য গল্প মনে পড়ে।একবার এক চিত্র প্রদর্শনীতে কোনো এক শিল্পীর আঁকা একটা ছবি দেখেছিলাম যার নাম 'স্পর্শহীন স্পর্শ', ছবিটা দেখে আমি এর বিষয়বস্তু কিছু বুঝতে পারিনি। নিউ বেইলিরোডে একটা রেস্তোরাঁ ছিল যেখানে 'চিকেন ভেজিটেবল' নামক খাবারে মুরগীর মাংসের বদলে ডিম দেয়া হতো। আমরা বলতাম 'চিকেন ভেজিটেবল উইদাউট চিকেন'। রেস্তোরাঁটিতে মূলত অল্প বয়সী ছেলেমেয়েরা আধো অন্ধকারে প্রেম করতে যেতেন।
খাবার তাঁদের মূল লক্ষ্য না হওয়ায় রেস্তোরাঁটিতে ডিমকে অনায়াসে মুরগী হিসাবে চালিয়ে দেয়া হতো।'তেলছাড়া পরোটা'র কথা শুনলে আমার কেবল সেই 'স্পর্শহীন স্পর্শ' অথবা 'চিকেন ভেজিটেবল উইদাউট চিকেন'-এর কথা মনে পড়ে।আমরা যারা পরোটার ভোক্তা তারা পরোটার আকার-অবয়ব, গুণ-মান, মূল্য ইত্যাদিতে হেরফের নির্দ্বিধায় স্বাভাবিক বলে মেনে নেই। আমাদের মেনে নেয়ার এই সহজাত আচরণ অসাধু বিক্রেতাদেরকে ভেজাল করতে, খাবারের মান ঠিক না রাখতে উৎসাহিত করে। তবে তারা উৎসাহিত হোক বা না হোক, খাদ্যে ভেজাল করার যে সর্বনাশা সংস্কৃতি দেশে গড়ে উঠেছে সেটা প্রমাণ করে মানুষ হিসেবে আমাদের মধ্যে কেউ কেউ কতোটা নির্বোধ এবং নীচ।
পরোটার বাইরে রেস্তোরাঁগুলোতে এখন চাপাতি বা রুমালী রুটি, তন্দুর রুটি পাওয়া যায়। কী কারণে যেন তন্দুর রুটিকে এখন প্রায় সবাই নান রুটি বলেন। অথচ নান রুটি মোটেও এমনটা নয়। কেউ কেউ এটাকে পাতলা নান বলে নামকরণকে সার্থক করে তোলার চেষ্টা করেন। অথচ নান রুটি আকারে ছোট, বনরুটির মতো পুরু, উঁচু পিঠের, ভেতরটা পাউরুটি আর কেকের মাঝামাঝি টেক্সচারের, বেশ নরম, আর স্বাদে একটু মিষ্টি মিষ্টি হয়। সর্বশেষ নান রুটি দেখেছিলাম চানখাঁরপুলের 'সোহাগ'-এ, তাও প্রায় তিন দশক আগে। রুমালী রুটি বানানোর দৃশ্য আমাকে সবসময়ই মুগ্ধ করে।একজন মানুষ জাগলারদের মতো করে স্রেফ শূন্যে ঘুরিয়ে ছুঁড়ে মেরে বিশাল আকারের, অতি পাতলা রুটি বানিয়ে ফেলতে পারেন তাও আবার না ছিঁড়ে সেটা কি বিস্ময়কর নয়, যেটা আবার উপুর করে রাখা কড়াইয়ে ভাজা হয়! স্কুল জীবনে যখন পুরাতন কোর্ট রোডে নূর হোসেন স্যারের কাছে ইংলিশ পড়তাম তখন স্যারের কোচিং-এর উল্টো দিকে একটা দোকানে আমাদের বয়সী একটা ছেলেকে দক্ষ হাতে ক্রমাগত রুমালী রুটি বানাতে দেখতাম। আমরা দীর্ঘ সময় ধরে কোচিং-এর দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্য দেখতাম। একবার কালো ক্যাসিও ইলেকট্রনিক হাতঘড়িতে স্টপওয়াচ ধরে হিসেব করে দেখেছিলাম ময়দার গোল্লা হাতে নেয়া থেকে শুরু করে কাড়াইয়ের তলা থেকে ভাজা রুটি তুলতে ছেলেটার এক মিনিটের চেয়ে কম সময় লাগছে।
আমাদের বাসায় আর দশটা বাসার মতো লোহার তাওয়ায় রুটি ভাজা হলেও আমার নানা বাড়িতে রুটি ভাজা হতো কাঠের চুলার দাউদাউ আগুনের ভেতরে লোহার সরু শিক দিয়ে বানানো ব্যাডমিন্টন র্যাকেটের মতো একটা জিনিস দিয়ে। সে এক অপূর্ব দৃশ্য!আমার এক খালা পিঁড়িতে রুটি বেলছেন, আরেক খালা ঐ র্যাকেটের ওপর রুটি রেখে আগুনে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে রুটি ব্যাঙের মতো ফুলে উঠছে। ঠিক তক্ষুণি দক্ষ হাতে র্যাকেট নাড়িয়ে রুটিটা টস করে দুপাশ সমান মাপে ঝলসানো হচ্ছে। সেই রুটির সুবাসও অন্যরকমের। আমি আর কখনো এমন কায়দায় কাউকে রুটি ভাজতে দেখিনি। বাসায় কোন কোন দিন রুটি বা পরোটার বদলে পাতলা গোলা দিয়ে চাপটি বানানো হতো। চাপটি হতো দুই প্রকারের–আটার আর চালের গুড়ির। আটার চাপটি একটু মোটা, লাল রঙের আর নরম। সেটা খাওয়া হতো গুড় বা চিনি দিয়ে।
চালের গুড়ির চাপটিতে হলুদ বাটা, কাঁচামরিচ, পেঁয়াজ, ধনেপাতা, পুদিনাপাতা দেয়া হতো বলে মূলত হলুদরঙা, বেশ পাতলা, শক্ত মুচমুচে। এটা এমনিতেই খাওয়া হতো অথবা শুঁটকি বা শুকনো মরিচ-রশুন পোড়া ভর্তা দিয়ে। তখন দোকানে চাপটি বানানো হতো না। গত কয়েক বছর ধরে দেখছি রাস্তার পাশের চিতই পিঠা বানানোর দোকানগুলোতে চাপটি বানিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে।এক সময় নারিন্দা, সুত্রাপুরের রাস্তায় চালের গুঁড়ির কাঁইয়ের ভেতরে খেসারী ডালের ভর্তার পুর দিয়ে সেঁকে বানানো ডাল-রুটি বিক্রি করতে দেখেছি। একইভাবে চ্যাপা শুঁটকির ভর্তারপুর দিয়ে বানানো শুঁটকি-রুটি বিক্রি করতে দেখেছি আলুবাজার আর কসাইটুলির রাস্তায়। ডাল-রুটিবা শুঁটকি-রুটি বানানোর কায়দা এবং পরিবেশনের পরিবেশ এতো অস্বাস্থ্যকর ছিল যে দেখে কখনো খাওয়ার সাহস হয়নি।
এখন যেমন প্যাকেটে ভরা সেঁকা রুটি বা ফ্রোজেন রুটি-পরোটা পাওয়া যায় এক কালে সেটা কারো ধারণাতেও ছিল না। ফলে আটাশির বন্যার সময় অনেক মানুষকে যখন নিকটস্থ স্কুল-কলেজগুলোতে আশ্রয় নিতে হলো তখন আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলতাম পরের দিন যেন শরণার্থীদের জন্য কিছু রুটি বানিয়ে রাখা হয়। লোকজন নির্দ্বিধায় যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী পাঁচটা, দশটা, বিশটা রুটি বানিয়ে রাখতেন, আমরা সেগুলো সংগ্রহ করে সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে বিলিয়ে দিয়ে আসতাম।
আটাশির বন্যাটা হুড়মুড় করে আমাদের ঘাড়ে এসে পড়ে। সেপ্টেম্বরের এক সকালে ক্লাসে যাবার সময় গেণ্ডারিয়ার কাছে রেললাইন দেখি ডোবে ডোবে অবস্থা। দুপুরে ক্লাস শেষে ফেরার সময় দেখি ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। পাড়ায় ঢোকার আগে দেখি সরকারি বালিকা বিদ্যালয় শরণার্থীতে ভরে গেছে।সবচে' আশঙ্কা ছিল ডিএনডি বাঁধ নিয়ে। প্রতিদিন গুজব শোনা যেত বাঁধেফাটল দেখা দিয়েছে বা বাঁধ ধ্বসে গেছে। একটু বড়রা রাতে লাঠি হাতে বাঁধ পাহারা দিতেন।নাশকতা করে ফায়দা লোটার মানুষ বোধকরি কোন আমলেই কম ছিল না।
আমরা প্রতিদিন ডুবন্ত গাছেবা সীমানা পিলারে দাগ দিয়ে বাঁধের অপর পাশের পানির উচ্চতা মাপতাম। বন্যার পরে অনেকদিন পর্যন্ত অনেক বাড়ি বা সীমানা প্রাচীরের গায়ে রঙ দিয়ে আড়াআড়ি একটা দাগ দিয়ে HFL 1988, মানে Highest Flood Level 1988, লেখা দেখা যেত। বন্যার পানি বাড়তে বাড়তে অচিরেই শহরের অনেক জায়গায় মূল রাজপথ বড় নৌকা চলার উপযুক্ত হয়ে যায়, এবং নিয়মিত নৌকাডুবির ঘটনা ঘটতে থাকে।
একদিন আব্বুর সাথে বাজারে যাচ্ছিলাম, মূল উদ্দেশ্য চাল কেনা। দেখি এক জায়গায় বুড়িগঙ্গা থেকে ধেয়ে আসা ঢেউ বাঁধে সজোরে আঘাত করছে বলে সড়ক বিভাগের এক প্রকৌশলী বাঁধ থেকে বাইরের দিকে একটা নির্দিষ্ট কোণে দশ ইঞ্চি ইট দিয়ে বানানো পঁচিশ-ত্রিশ ফুট লম্বা, তিন-চার সারির একটা অনুচ্চ দেয়াল তুলে দিলেন। আশ্চর্যজনকভাবে ঐ সাময়িক দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে বুড়িগঙ্গা থেকে আসা স্রোতের অভিমুখ পালটে গেল। ফলে বাঁধ সমূহ ক্ষতি থেকে রক্ষা পেলো। ঐ সময়ে পোস্তগোলায় বুড়িগঙ্গার উপর দিয়ে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু নির্মাণ চলছিল। সেতুর চীনা প্রকৌশলীরা চটের ব্যাগে বালি-মাটি ভরে সারি সারি করে সাজিয়ে দেয়াল তুলে সেতুর কাছের অনেকটা জায়গা জুড়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবহমান নদীর বাড়তি ঢেউ শাসন করে ফেললেন।
সেদিন বাজারে গিয়ে আরেক হতভম্ব করা দৃশ্য দেখতে পেলাম। আমরা বাজারে যে ঘন্টাখানেক সময় ছিলাম সেই সময়ের মধ্যে আমাদের চোখের সামনে আট আনা (পঞ্চাশ পয়সা), এক টাকা করে চালের দাম কেজি প্রতি পাঁচ টাকা বেড়ে গেল। জাতীয় দুর্যোগে কেবল যে সহৃদয়বান মানুষের সন্ধান মেলে অমনটা নয়, তার সাথে দুর্গত মানুষের বিপদকে পুঁজি করে রাতারাতি বিপুল লাভের আশায় থাকা সুযোগসন্ধানী, নীচ মানুষেরও দেখা মেলে।
বাজার থেকে ফেরার পথে আমাদের রিক্শা যখন পাড়াতে ঢুকবে তখন দেখি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে জহির রায়হানের বানানো তথ্যচিত্রগুলোতে যেমন যার যা কিছু বহনযোগ্য আছে তা নিয়ে প্রাণভয়ে পালানোর দৃশ্য দেখা যায় মোটামুটি অমন একটা দৃশ্য। লোকে কোলে-কাঁখে বাচ্চা, কাঁধে ঝোলা, মাথায় বস্তা নিয়ে প্রাণভয়ে ছুটছেন। কারণ কী? জানা গেল কেউ একজন খবর এনেছেন কয়েক কিলোমিটার দূরে ডিএনডি বাঁধে নাকি ফাটল দেখা দিয়েছে যা দিয়ে হুহু করে পানি ঢুকছে।
সাধারণের ধারণাতে বাঁধ ধ্বসে পড়ছে আর তা দিয়ে সিনেমাতে দেখানোর মতো করে বা জলোচ্ছ্বাসের মতো করে পানি ঢুকে মুহূর্তের মধ্যে সব ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। তাই সবার এভাবে পলায়ন। বাস্তবে ষাট বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত জায়গা ঘিরে থাকা বাঁধ আর তার ভেতরে থাকা মিলিয়ন খানেক স্থাপনা্র কারণে একটা ছোট ফাটল দিয়ে ঢোকা পানি দিয়ে এমন সিনেমাটিক কিছু হতে পারে না। কিন্তু ভীত মানুষের দলকে সেটা বোঝাবে কে! নেতৃস্থানীয়গণ স্থানীয় মসজিদগুলোর মাইকে অভয়বাণী প্রচার করে মানুষকে নিজের ঘরে ফেরান। পরে জানা যায় বাড়িঘর লুটের উদ্দেশ্যে কেউ কেউ এমন গুজব ছড়িয়েছিল। দুয়েকটা পাড়ায় চুরি বা লুটের ঘটনা ঘটেনি এমনটা নয়। তবে মোটের ওপর এমন খারাপ ঘটনার সংখ্যা বেশ কম ছিল।
বন্যাতে চালের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেলেও কিছু জিনিসের দাম অস্বাভাবিক হারে কমে গেল। সারা দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ায় পণ্য পরিবহন ঠিকভাবে হতে পারছিল না। একদিন দেখি পাড়া থেকে বের হবার মুখে পাঁচ টাকা করে পঁচা ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে। পঁচা হোক আর তাজা হোক সম্ভবত আর কোনদিন আমরা পাঁচ টাকা করে ইলিশ মাছ বিক্রি হতে দেখব না। এভাবে প্রায় প্রতিদিন পঁচা সবজি বিক্রি হতে দেখতাম। বিষয়টা ক্রেতা বা বিক্রেতা কারো জন্য ভালো ছিলো না। আসলে খুব অল্প কিছু মানুষ ছাড়া দিনগুলো কা্রো জন্যই ভালো যাচ্ছিল না। বন্যার্তদের সবাই আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে পারেননি, বিশেষত পানিবন্দী মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণীর লোকজন। বন্যার পানি সরতে দীর্ঘ সময় লাগায় মধ্যবিত্ত শ্রেণী বেশি বিপদে পড়ে যান। তারা না পারেন দিন চালাতে, না পারেন রিলিফ নিতে।
কিছু কিছু জায়গায় দোতলা তিনতলায় আশ্রয় নেয়া পরিবারের একক বাড়ির চারপাশে কচুরিপানা জমাট বেঁধে তাদেরকে বাইরের দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। এক ত্রাণকর্মীর কাছ থেকে পরে জানতে পারি এভাবে আটকা পরা এক পরিবার প্রায় সাত দিন ধরে কেবল চিঁড়ে খেয়েছিলেন। বন্যা উপলক্ষে নানা দেশ থেকে খাদ্য ও অন্যান্য সাহায্য এসেছিল, তবে তার কী পরিমাণ বন্যার্তদের হাতে পৌঁছেছিল সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে। বন্যা শেষ হবার অনেক মাস পরে পর্যন্ত গুলিস্থান, পুরানা পল্টন এলাকার ফুটপাতে ত্রাণের মেয়াদোত্তীর্ণ ফলের রস, ফল, কৌটাবন্দী খাবার বিক্রি হতে দেখেছি।
বন্যার পানি নেমে যাবার পরে যখন নানারোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিল তখন একটা মেডিক্যাল টিমের সাথে ত্রিমোহিনীতে গিয়েছিলাম।এত কাছের একটা জায়গায় কিছুটা রিকশা করে, কিছুটা নৌকায় করে যেতে অনেক সময় লেগে গিয়েছিল।আমরা একটা স্কুলে সারা দিনের জন্য মেডিক্যাল ক্যাম্প করেছিলাম। স্থানীয় উদ্যোক্তা্রা আগে থেকে মাইকিং করেছিলেন। আমরা গিয়ে দেখি প্রচুর মানুষ লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। বেশিরভাগের হয় জ্বর, নয়তো পেটের অসুখ, নয়তো হাতে-পায়ে বন্যার পানি ঘাঁটার ফলে সৃষ্ট চর্মরোগ। আমার আর সুমনের দায়িত্ব ছিল প্রেসক্রিপশন দেখে ওষুধ প্যাক করে রোগীকে সেবন বা ব্যবহারবিধি বুঝিয়ে দেয়া। সুমন বলল, দেখবে কিছুক্ষণ পর কেউ কেউ ফিরে এসে গায়ে মাখার ওষুধটা খাবে কিনা আর খাবার ওষুধটা গায়ে মাখবে কিনা সেটা জিজ্ঞেস করতে আসবে। আমরা দুপুরের খাবার খেয়ে সারতে না সারতে সুমনের ভবিষ্যতবাণী অক্ষরে অক্ষরে ফলে গেল। দেখা গেল দশ-পনের জন রোগী সব কিছু আবার বুঝে নিতে এসেছেন। কয়েকজনের হাতে দেখি খাবার ট্যাবলেট, ঘায়ে মাখার মলম সব বিস্ময়কর ভাবে এক সাথে লেপ্টে আছে। আমরা ধৈর্য্য ধরে আগের ওষুধ ফেলে দিয়ে আবার নতুন করে ওষুধ প্যাক করে বুঝিয়ে দিলাম। সেদিন সারা দিনে একটাও বাজে ঘটনা ঘটেনি, কেউ লাইন ভাঙেননি বা ধাক্কাধাক্কি করেননি, কেউ অসঙ্গত সুবিধা নেবার চেষ্টা করেননি। মেডিক্যাল ক্যাম্পের কোন কোন দায়িত্বে আমাদের মতো কিশোরদের পেয়েও কেউ মাতব্বরী ফলানোর চেষ্টা করেননি।
বেশ কিছু কারণে আটাশির বন্যা প্রত্যক্ষদর্শীদের মনে স্থায়ী হয়ে থাকবে। প্রথমত, এটা তখনকার মানুষদের স্মরণকালের সবচে'ভয়াবহ বন্যা ছিল। দেশের শতকরা ষাট ভাগ জায়গা বন্যার পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল। অবশ্য ১৯৯৮ সালের বন্যায় দেশের শতকরা পঁচাত্তর ভাগ জায়গা তলিয়ে গিয়ে আগের রেকর্ড ভেঙে যায়।
দ্বিতীয়ত, আটাশির বন্যায় নূন্যতম সময়ের মধ্যে সর্বস্তরের মানুষ নিজেদের উদ্যোগে খাবার, পানীয় জল, খাবার স্যালাইন, কাপড়, নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী জোগাড় করে দুর্গত মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন।
তৃতীয়ত, সাধারণ মানুষের চালানো এই ত্রাণ কার্যক্রমে দুর্ঘটনায় ঢাকা ও তার আশে পাশে বেশ কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী ত্রাণকর্মীর প্রাণহানি। আঠারোই সেপ্টেম্বর সিঙ্গাইরে ত্রাণ কার্যক্রম চালিয়ে ঢাকা ফেরার পথে সাভারের বলিয়ারপুরে ধানমণ্ডির ডাক্তার শাহ্রিয়ার, আবাহনী ক্লাবের সদস্য হাফিজুল ইসলাম খান উট্টু, কলাবাগানের শিক্ষার্থী জিকরুল হাসান যীশু জিকো নৌকাডুবিতে মারা যান। ত্রাণ কার্যক্রম চালানোর সময় নৌ দুর্ঘটনায় মোহাম্মদপুরে অভিনেতা শওকত আকবরের পুত্র লিংকন আকবর ও জগলুল হোসেন আলো নামের দুই কিশোর, পুরনো ঢাকায় হাজী ওসমান গণি রোডের গোপাল ও ইসরাফিল ময়না, এবং শ্রীনগরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিন আশীষ দত্ত প্রাণ হারান। এর মধ্যে জিকো, লিংকন আর আলো'র বয়স আমার তখনকার বয়সের চেয়ে কম ছিল। এই মানুষগুলোর কথা আমরা ভুলে গেছি। মানুষের জন্য তাঁদের অকাতরে আত্মদান আমরা মনে রাখিনি। আমরা কেবল টেলিভিশন ক্যামেরাসহ পানিতে নেমে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার নামে নয় বছরের স্বৈর শাসনকে ভুলিয়ে দিয়ে জনগণের সহানুভূতি আদায়ের জন্য চালানো কুৎসিত নাটকের কথা মনে রেখেছি।
-
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১