রোদের ঘ্রাণ আর বাতাসের রঙ
স্কুলের দিন
জানুয়ারি মাস আসলে মানে নতুন ক্লাসে উঠলে শুরুতে যে বিষয়টা উত্তেজনাকর মনে হতো সেটা হচ্ছে নতুন বই পাওয়া। উঁচু ক্লাস, আগের চেয়ে ভারভারিক্কী বই, ভাবই আলাদা। আমাদের সময়ে ক্লাসের বইগুলো খুব সহসা পাল্টাতো না বলে যাদের বড় ভাইবোন থাকতো তাদের কপালে সাধারণত পুরনো বই জুটতো। দুয়েকটা বই ছিঁড়ে যাওয়ায়, বা হারিয়ে যাওয়ায়, বা পালটে যাওয়ায় সেগুলো কেবল নতুন কেনা হতো আর বাকি সব পুরনো বই দিয়ে চালাতে হতো। আমি আর ছোট আপা পিঠেপিঠি ভাইবোন হওয়ায় আমাকে স্কুল জীবনে মূলত ছোট আপার পুরনো বই পড়তে হয়েছে। ভাগ্যিস আমরা দুজন দুই স্কুলে পড়তাম তাই বাংলা ও ইংলিশ দ্রুতপঠন, ব্যাকরণ ও রচনা এসব বইয়ে মিল ছিল না। তাছাড়া আমাকে গার্হস্থ্য বিজ্ঞান বই পড়তে হতো না। ফলে আমি ত্রিশ-চল্লিশ ভাগের মতো নতুন বই পেতাম, বাকি বইগুলোর প্রথম পৃষ্ঠায় বলপয়েন্ট পেন আর সিগনেচার পেনের সাহায্যে বইয়ের মালিকের নাম পরিবর্তন করতে হতো।
এককালে অন্তত প্রাথমিক পর্যায়ের সব ক্লাসের বাংলা বইয়ের নাম ছিল 'সবুজ সাথী', ইংলিশ বইয়ের নাম মনে নেই। আমার শিক্ষা জীবন 'সবুজ সাথী' দিয়েই শুরু হয়েছিল। ১৯৭৮ সাল থেকে ধাপে ধাপে পাঠ্যপুস্তক পরিবর্তন হওয়া শুরু হলে আমরা 'সবুজ সাথী'র বদলে হাসান-নাসিমাদের গল্পওয়ালা 'আমার বই' আর পুরাতন ইংলিশ বইয়ের বদলে হাসান-সাবিনা-তারেক-সামিরাদের গল্পওয়ালা 'English for Today' পাই। আমি তখন এই ভেবে আনন্দিত হই যে, এখন থেকে আমি প্রতি ক্লাসে নতুন বই পড়তে পাবো। আমার আনন্দে জল ঢেলে দিয়ে পরের বছর দেখা গেলো আমার উপরে আরও তিন ক্লাসের বই পালটে দেয়া হয়েছে। ফলে নতুন বই প্রাপ্তির ক্ষেত্রে আমার 'পুনর্মুষিক ভব' অবস্থা হয়। আমরা প্রথম 'সমাজ পাঠ' ও 'সাধারণ বিজ্ঞান' বইয়ের বদলে 'পরিবেশ পরিচিতি : সমাজ' ও 'পরিবেশ পরিচিতি : বিজ্ঞান' বই পড়তে পাই। বাংলা দ্রুত পঠনের বই 'চয়নিকা' দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠ্য ছিল। চয়নিকার এই চারটি বই সম্ভবত আমার দেখা শিশুদের জন্য সবচে' সেরা বাংলা গদ্য ও পদ্য সংকলন। সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ গড়ে তোলা, প্রখ্যাত সাহিত্যিকদের সাহিত্যকর্মের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য এই বইগুলো ছিল অতুলনীয়। সাথে ছিল হাশেম খান বা আইনুল হক মুন্না'র অসাধারণ সব ইলাস্ট্রেশন। কোন কোন স্কুলে এর সাথে 'আনন্দপাঠ' নামের একটা বই পড়ানো হতো যেটার ইলাস্ট্রেশনগুলো আরও আকর্ষণীয় ছিল। ইংলিশ দ্রুতপঠন হিসাবে ডি এইচ হো বা জে পি রোজের 'Active English'-এর বাইরে কোন কোন স্কুলে পল গুদা'র 'Popular Stories' পড়ানো হতো।
ইংলিশ গ্রামারের ক্ষেত্রে রেন এন্ড মার্টিন বা নেসফিল্ডের গ্রামারের বাইরে কোন কোন স্কুলে এ ডব্লিউ খান চৌধুরী বা কলিমদাদ খানের 'A Way to English' পড়ানো হতো। বাংলা ব্যাকরণের ক্ষেত্রে গোলাম সামদানীর 'একের ভিতর পাঁচ', আফতাব আহমেদের ব্যাকরণের চেয়েও জনপ্রিয় ছিল হরলাল রায়ের 'ব্যাকরণ ও রচনা' বইটি। হরলাল রায়ের বইয়ের বিভিন্ন রচনায় ছোট ছোট কবিতা থাকতো, যেমন —
"দুষ্টের শিরোমণি লঙ্কার রাজা
চুপি চুপি খাও তুমি চানাচুর ভাজা"
(স্কুল জীবনের স্মৃতি)
"তোমার খাতার প্রথম পাতায় এঁকে দিলাম আলপনা
আমার ছবি কইবে কথা যখন আমি থাকবো না"
(একটি স্মরণীয় ঘটনা)
"পাহাড়পুর, পানতি
রাজমেহার, ধামতী
কুড়াখাল, করণ্ডি
বাপ-বেটায় অরণ্ডি"
(আমাদের গ্রাম)
যারা পঞ্চম বা অষ্টম শ্রেণীতে বৃত্তি পরীক্ষা দিতো তারা 'ছাত্র সখা', 'ছাত্র সহচর', বা 'ছাত্র বন্ধু' নামের গাইড বই-কাম-টেস্ট পেপার পড়তো। এই বইগুলো অভিধানের মতো মোটা ছিল। তবে নবরায় লেনের গ্লোব লাইব্রেরী, বাংলা বাজারের আদিল ব্রাদার্স বা মিতা প্রকাশনী'র প্রকাশিত 'এসএসসি টেস্ট পেপার্স' আর তার মেড-ইজি'র চেয়ে মোটা বই গোটা স্কুল জীবনে পড়তে হয়নি। তখন নভেম্বরে এসএসসি'র টেস্ট বা নির্বাচনী পরীক্ষা হবার পরে মার্চ মাসে ফাইনাল পরীক্ষা হতো। ঐ তিন মাস সময়ের মধ্যে কোন্ পড়ুয়া অমন মোটা টেস্ট পেপারের পুরোটা অনুশীলন করতে পেরেছিল তার সন্ধান আজো পাইনি। চৌমুহনী, নোয়াখালী'র 'পুঁথিঘর লিমিটেড' সব ক্লাসের সব বইয়ের অর্থ বই বা নোট বই বের করতো। নিউজপ্রিন্টে ছাপা সেসব বই সাধারণত পাতলা কাভারের হতো। প্রচ্ছদে সাধারণত বাংলা আর ইংলিশ মিলিয়ে লেখা থাকতো 'Notes on পরিবেশ পরিচিতি: সমাজ, তৃতীয় ভাগ'। কখনো কখনো 'আমার বই বোধিনী, চতুর্থ ভাগ' বা 'চয়নিকা সহায়িকা, পঞ্চম ভাগ' এমন নামও দেওয়া হতো।
লেখকের নামের জায়গায় বাংলায় লেখা বইয়ের ক্ষেত্রে 'জনৈক অভিজ্ঞ হেডমাস্টার', ইংলিশের ক্ষেত্রে 'An expert Headmaster', ধর্মের ক্ষেত্রে 'জনৈক অভিজ্ঞ হেডমৌলভী' বা 'জনৈক অভিজ্ঞ হেডপণ্ডিত' লেখা থাকতো। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এইসব 'অভিজ্ঞ' শিক্ষকদের পরিচয় কখনো জানতে পারিনি, এবং ঐ বয়সে বুঝতে পারিনি এভাবে নাম প্রকাশ না করার মানে কী? ইংলিশের নোট বইয়ে গল্পের শিরোনামের পরে summary দেওয়া থাকতো তারপরে কোন কোন প্রশ্নের উত্তরে পুনরাবৃত্তি রোধ করার জন্য 'see summary' লেখা থাকতো। কিছু সরল শিক্ষার্থী ঐ 'see summary'-কে পুরো উত্তর ভেবে মুখস্থ করে পরে ক্লাসে অপদস্থ হতো। আমাদের সময়ে সাধারণত যেসব শিক্ষার্থী একটু দুর্বল, অথবা যারা গৃহশিক্ষক রাখার সামর্থ্য রাখতো না, অথবা যাদের পরিবারের অভিভাবকেরা যথেষ্ট লেখাপড়া জানতেন না সেসব পরিবারে এই নোটবইগুলো কেনা হতো। কী কারণে যেন এক সময়ে বেশ শোরগোল উঠলো যে এইসব নোট বইয়ের কারণে নাকি বাচ্চাকাচ্চারা কিছু শিখতে পারছে না, শুধু মুখস্থ করে পরীক্ষার খাতায় লিখে দিয়ে আসছে। ফলে আইন করে নোট বই প্রকাশ বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু বাজারে চাহিদা থাকলে সরবরাহ কি আর বন্ধ থাকে! ফলে নোট বই 'গাইড বই' নামে বের হওয়া শুরু হলো। আগে ক্লাসে হয়তো ৫০% ছেলেমেয়ে নোট বই পড়তো, আর এখন প্রায় ১০০%-ই গাইড বই পড়ে। কেউ কেউ আবার মূল বই একেবারেই না পড়ে কেবল গাইড বই-ই পড়ে। যে ক্ষতি রোধ করার জন্য নোট বই বন্ধ করা হয় গাইড বই সেই ক্ষতিই আরও ভয়াবহ আকারে করে যাচ্ছে। মাঝখান থেকে 'পুঁথিঘর লিমিটেড' বন্ধ হয়ে যাওয়ায় একই উদ্যোক্তার সৃজনশীল বইয়ের প্রকাশনী 'মুক্তধারা' অর্থাভাবে পড়ে ধুঁকতে থাকে।
নতুন ক্লাসের বই তা সে নতুন হোক আর পুরাতন হোক তাতে মলাট দেয়া হতো। মলাট দেবার জন্য সবার প্রথম পছন্দ ছিল ক্যালেন্ডার। সাদা, মোটা, পিচ্ছিল কাগজে রঙিন ছাপা ক্যালেন্ডারের পাতা দিয়ে বইয়ে মলাট দিলে টেকসই হতো। সমস্যা হচ্ছে এক বাড়িতে ক্যালেন্ডার থাকতো একটি বা দুটি, যার প্রত্যেকটিতে পাতার সংখ্যা বারোর চেয়ে বেশি হতো না। ফলে পরিবারে দুইয়ের অধিক সন্তান থাকলে একেক সন্তানের বারো-চৌদ্দটা পাঠ্যপুস্তকে মলাট দেবার মতো যথেষ্ট পরিমাণে ক্যালেন্ডারের পাতা পাওয়া যেতো না। তাছাড়া অনেকে বাড়ির কাজ আর স্কুলের কাজের খাতাতেও মলাট দিত। তাতে মলাটের কাগজের জন্য ক্যালেন্ডারের পাতার সঙ্কট হতো। একারণে বিশেষ কিছু পত্রিকা কেনা হতো যেগুলোর কাগজের মান মোটামুটি ক্যালেন্ডারের পাতার মতো।
এক্ষেত্রে সবার প্রথম পছন্দ ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে প্রকাশিত 'সোভিয়েত ইউনিয়ন', 'সোভিয়েত নারী', ও 'উদয়ন' পত্রিকাগুলো। এই পত্রিকাগুলো পছন্দের আরেকটি কারণ হচ্ছে এগুলো অধিকাংশ সময়ে বিনামূল্যে পাওয়া যেতো। ফলে বইয়ের মলাটে প্রায়ই 'ঝলমলে বাজ ফিলিস্তের পালক', 'ইউক্রেনের খাবার', 'উযবেকিস্তানের তুলার ক্ষেত', 'চিত্রনায়িকা এলেনা প্রোকলোভা' বা 'তীরন্দাজ যেবিনিসো রুস্তামোভা'র ছবি দেখতে পাওয়া যেতো। এই পত্রিকাগুলোর বাইরে কখনো কখনো উত্তর কোরিয়া থেকে প্রকাশিত 'কোরিয়া' পত্রিকাটি কেনা হতো যেখানে প্রধানত কিম ইল সুঙ, অ্যাক্রোবেট দল আর লাল-সাদা ইউনিফর্ম পরা স্কুলের বাচ্চাদের ছবি থাকতো। এসব পত্রিকা বা ক্যালেন্ডারের অভাবে এক-আধজন 'ইত্তেফাক' বা 'দৈনিক বাংলা' দিয়েও মলাট দিত। এক রকমের খাকি পাতলা কাগজ ছিল যেটাকে আমরা 'বাঁশপাতা' বলতাম, যেটা অনেকটা ঠোঙ্গার কাগজের মতো, সেটা দিয়েও কেউ কেউ মলাট দিত।
সাধারণত বোর্ড বাঁধাই করা খাতা বাড়ির কাজ বা ক্লাসের কাজে ব্যবহৃত হতো। বাংলার জন্য দুটো নীল লাইন টানা, ইংলিশের জন্য উপরে নিচে দুটো লাল আর মাঝখানে দুটো বেগুনী লাইন টানা, আর গণিতের জন্য সাদা খাতা। একেবারে ছোট ক্লাসে গণিতের জন্য অবশ্য গ্রাফ পেপারের মতো ছক কাটা খাতা ছিল। এক টাকা দামের এক রকমের ছোট, পাতলা, আট পৃষ্ঠার খাতা পাওয়া যেত যেটার উপরে হয় একজন সামরিক শাসকের ছবির নিচে 'অমর' কথাটা লেখা থাকতো, অথবা একটা গ্রামের দৃশ্যের নিচে 'নতুন বাংলা' কথাটা লেখা থাকতো। ঐ খাতাগুলো আমরা ক্লাস টেস্টের জন্য ব্যবহার করতাম। রাফ খাতা, নোট খাতা বা প্রাকটিস খাতা হিসাবে যেগুলো ব্যবহৃত হতো সেগুলো সাধারণত ফুলস্কেপ, ডাবল ফুলস্কেপ বা স্কয়ার সাইজ কাগজ কিনে সেলাই করে বানানো হতো। সাদা কাগজ আসতো চন্দ্রঘোনার 'কর্ণফুলী পেপার মিল' থেকে আর নিউজপ্রিন্ট বা 'চোষ কাগজ' আসতো খালিশপুরের 'খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিল' থেকে। সেই কাগজকে ভাঁজ করে লাল-সাদা টুইস্টেড সুতো আর ভ্রমর দিয়ে সেলাই করা হতো। বড়জোর দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত চায়নিজ, স্টেডলার বা নটরাজ পেন্সিল দিয়ে লেখা হতো।
তৃতীয় শ্রেণীতে উঠে গেলে পেন্সিলে লেখাটা অবমাননাকর বিষয় বলে গণ্য হতো। তখন লিখতে হতো ফাউন্টেন পেন দিয়ে –'পাইলট', 'হোয়াইট ফেদার' বা 'উইং সাং' কলম, তাতে 'ইয়োথ'-এর রয়েল ব্লু বা 'কমেট'-এর ব্লু-ব্ল্যাক কালি ব্যবহৃত হতো। শিক্ষকরা সাধারণত লাল বা সবুজ রঙের কালি ব্যবহার করতেন। সপ্তাহান্তে কলমের নিব, ড্রপার, ক্যাপ, বডি সব কিছু কুসুম গরম পানিতে চুবিয়ে পরিষ্কার করা হতো। প্রথম প্রথম আমরা সাদা কাগজের খাতায় লিখতাম। একবার কী কারণে যেন বাজারে সাদা কাগজের সরবরাহ কমতে কমতে প্রায় বন্ধ হয়ে গেল। কাগজের দাম গেলো বেড়ে। তখন বাজারে লেখার জন্য নিউজপ্রিন্ট কাগজ আসলো। যেহেতু সেই কাগজে ফাউন্টেন পেন দিয়ে লেখা যায় না তাই 'রেডলিফ' বলপয়েন্ট পেন বা টিপে খোলা ও বন্ধ করা যায় এমন চায়নিজ বলপয়েন্ট পেন দিয়ে লেখা শুরু হলো। সেসব কলমের আলাদা রিফিল কিনতে পাওয়া যেতো। আরও পরে 'ইকোনো' প্রথম রিফিলবিহীন বলপয়েন্ট পেন বাজারে নিয়ে আসে।
একসময় ইকোনো বাজারে প্রায় এক হাত লম্বা বলপয়েন্ট পেন আনে। প্রায়ই দেখা যেতো সেগুলো লেখার বদলে তলোয়ার যুদ্ধ খেলায় অথবা শিক্ষক ও অভিভাবকদের হাতে পড়লে বেতের বিকল্প হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। শীঘ্রই সেই কলমের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এক রকমের বলপয়েন্ট পেন ছিল যাতে একসাথে লাল, কালো, নীল আর সবুজ রঙের চারটা রিফিল ছিল, যার একটা টিপলে আরেকটা বন্ধ হয়ে যেত। সেই কলম হাতে পেলে আমাদের প্রথম কাজ ছিল একসাথে দুই/তিন রঙের রিফিলের টিপ বের করার চেষ্টা। ফাউন্টেন পেনের কারণে আমাদের শার্ট বা প্যান্টে লিক করা কালির দাগ অবধারিত ছিল। বলপয়েন্ট পেন এসে তার সুরাহা হয়নি। কারণ গরমে বলপয়েন্ট পেন থেকেও কালি গড়াতো। রিফিলের গোড়ায় মুখ লাগিয়ে টান দেবার একটা ব্যাপার ছিল। তাতে দাঁত-ঠোঁট রঙিন হয়ে যেত। এর পরিণতি অবশ্য ভালো ছিলো না, সেটা ক্লাসেই হোক আর বাড়িতে হোক।
আঁকাআঁকি আর গণিতের জন্য 3M লেখা লাল-সোনালীরঙা জ্যামিতি বক্স আর হলুদ রঙের কাঠের স্কেল কেনা হতো। এক ফুট লম্বা কাঠের স্কেলটার এক ধারে ইঞ্চি আর আরেক ধারে মিলিমিটার-সেন্টিমিটারের দাগ কাটা থাকতো। সেন্টিমিটারের ধারে কী কারনে যেন সোনালীরঙা খুব সরু এক ফালি স্টিলের টুকরো লাগানো থাকতো। সম্ভাব্য দুর্ঘটনা ও অপকর্মের হাত থেকে বাঁচার জন্য স্কেল বাসায় আনার পরই বড়দের কেউ একজন স্টিলের টুকরোটা খুলে ফেলতেন। ছোটবেলায় আমরা স্কুলে বইখাতা নিয়ে যেতাম রেক্সিন বা ফোমের বানানো হালকা ব্যাগে। তখন কেউ কেউ ভারতে বেড়াতে গিয়ে সেখান থেকে স্টিলের ছোট স্যুটকেস কিনে নিয়ে আসেন। অচিরেই এই স্টিলের স্যুটকেস বেশ জনপ্রিয়তা পেয়ে যায় ফলে দেশেও এই স্যুটকেস বানানো হতে থাকে। কেউ কেউ স্যুটকেসের উপরে খোদাই করে বা রঙ দিয়ে ব্যবহারকারীর নাম, বিদ্যালয়, শ্রেণী, শাখা, ক্রমিক নং এসবও লিখে নিলো। স্টিলের স্যুটকেস ভারি হওয়ায় কৃত্রিম চামড়ার স্যুটকেসও বাজারে চলে আসলো। একসময় হঠাৎ করেই স্যুটকেসের জনপ্রিয়তা নাই হয়ে গেলো, আস্তে আস্তে পিঠে নেবার মতো কাপড়ের ব্যাগ বাজার দখল করে নিলো।
প্রধানত নিচু ক্লাসের বাচ্চারা প্লাস্টিকের পানির বোতলে পানি নিয়ে স্কুলে যেত। একটু বড় হলেই বোতলে পানি নেওয়াটাকে বাচ্চারা অপছন্দ করা শুরু করলো। টিফিন বক্স প্রথমে ছিল অ্যালুমিনিয়াম বা স্টিলের, পরে আস্তে আস্তে প্লাস্টিকের বক্স জায়গা করে নেয়।টিফিন বলতে প্রধানত রুটি বা পরোটার সাথে আলু ভাজি, সুজির হালুয়া, ডিম অমলেট, অথবা পাউরুটিতে মাখন-চিনি বা জেলি লাগানো, অথবা ফ্রেঞ্চ টোস্ট যাকে আমরা তখন 'বোম্বাই টোস্ট' বলতাম। শেষের দিকে কেউ কেউ নুডলস বা ফ্রায়েড রাইস আনা শুরু করেছিল। অবশ্য আমাদের লক্ষ্য থাকতো টিফিন বক্সে করে খাবার না নিয়ে টিফিন খাবার টাকা নেবার, যেন তা দিয়ে ইচ্ছে মতো জিনিস কিনে খাওয়া যায়। আমাদের স্কুলের গেটের বাইরে প্রধানত চারজন খাবার নিয়ে বসতেন – একজন আইসক্রিম বিক্রেতা (বাদল ভাই), একজন চটপটি ও ফুচকা বিক্রেতা (চাচা), আর দুজন হচ্ছেন সিরাজ ভাই ও পাপ্পু ভাই। শেষোক্ত দুইজন বাঁশের ডমরু আকৃতির সাপোর্টের উপরে বিশাল কাঠের গোল পাটাতনের উপরে অগণিত রকমের খাবার নিয়ে আসতেন। সেখানে ঝালমুড়ি, চানাচুর, ঘুঘনি, সেদ্ধ ডিম থেকে শুরু করে একটা বড় মুদি দোকানে যত রকমের মজার খাবার থাকে তার সব কিছু থাকতো। আমি এখনো বিস্মিত হই অতটুকু জায়গায় অত ভিন্ন রকমের জিনিস কী করে আঁটতো! আরও অবাক করা বিষয় হচ্ছে এই চারজন স্কুলের প্রায় সব ছেলেমেয়ের নাম জানতেন, কার বাড়ি কোন পাড়ায় সেটাও জানতেন। ঐ সময়ে চৈত্র-বৈশাখ মাসে প্রায়ই কলেরা বা ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিত। অমন কিছু হলে স্কুল কর্তৃপক্ষ গেটের বাইরে বিক্রি করা খাবারের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতেন। মূলত আচার, আইসক্রিম এবং চটপটি-ফুচকা বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা আসতো যার মেয়াদ এক সপ্তাহও হতো না। অচিরেই ওসব খাবারও যথারীতি বিক্রি চলতো।
আমাদের স্কুলে কালো চামড়ার অক্সফোর্ড শু আর বোনদের স্কুলে সাদা কাপড়ের হকি শু পরিধেয় ছিল। ছুটির দিনে চামড়ার জুতো প্রথমে পুরনো টুথব্রাশ ভিজিয়ে সেটা দিয়ে পরিষ্কার করে, রোদে দিয়ে শুকনো টনটনা করা হতো। তারপর সেটার উপরে আঙুলের ডগা দিয়ে শু ক্রিম লাগিয়ে পশমের ব্রাশ দিয়ে ঘষে চকচকা করা হতো। আমার কাছে শু ক্রিমের গন্ধটা ভালো লাগতো। কাপড়ের জুতো ছোট বালতিতে সাবান-পানিতে চুবিয়ে পুরনো টুথব্রাশ দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করে রোদে শুকিয়ে তাতে ভেজা চক বার ঘষে লাগানো হতো। তারপর সেটাকে আবার শুকানো হতো। শুকিয়ে গেলে শুকনো পুরনো নরম কাপড় দিয়ে আলতো করে ঘষে বাড়তি চক ঝরিয়ে ফেলা হতো। উভয় প্রকার জুতোর এই পরিচর্যা করতে আমার বেশ লাগতো। স্কুলের শার্ট-কামিজ-সালোয়ার ধুয়ে 'রবিন ব্লু' দিয়ে নীল দেয়া হতো। কোন কোন সময় এরারুট ফুটিয়ে মাড়ও দেয়া হতো। এসব কাপড় শুকালে সেটাকে পানি ছিটিয়ে নরম করে ইস্ত্রি করতে হতো। ইস্ত্রি প্রথমে ছিল পেটা লোহার যেটা চুলায় গরম করে, বাড়তি কালি মুছে ব্যবহার করা হতো। পরে চীনা 'রেড হার্ট' ইলেকট্রিক ইস্ত্রি এসে ব্যাপারটা সহজ করে ফেলে। নিয়মিতভাবে আমাদের শার্টের বোতাম, প্যান্টের হুক ছিঁড়তো। একসময় নিজেই সেগুলো লাগানো শিখে যাই। অবশ্য তার আগে সূঁচে কী করে সুতো লাগায় সেটা শিখতে নাকাল হতে হয়েছিল। আমরা বাসায় স্পঞ্জের স্যান্ডেল পড়তাম, যেটা বিকালে ফুটবল খেলার সময় গোলপোস্ট হিসাবে ব্যবহৃত হতো। সেই স্পঞ্জের স্যান্ডেলের ফিতা খুব নিয়মিতভাবে ছিঁড়তো। তখন বাজারে স্যান্ডেলের রাবারের ফিতা কিনতে পাওয়া যেত। আমরা স্ক্রু ড্রাইভারের মাথা দিয়ে গুঁতিয়ে স্যান্ডেলের ফিতাও পালটে ফেলতে পারতাম। কখনো কখনো একটা লোক রাবারের টায়ারের টুকরো লাগানো কাঠের খড়ম বিক্রি করতে আনতেন। তখন আমরা খড়ম কেনার জন্য বায়না ধরতাম। প্রথম প্রথম কিছু দিন মহা উৎসাহে খড়ম পরে চটাস চটাস শব্দ তুলে হাঁটতাম। খড়মের অনেকগুলো অসুবিধা ছিল। একে তো এটা পরে দ্রুত হাঁটাচলা করা যায় না, তাছাড়া এটা দিয়ে পরনের কাপড়ে কাদা ছিটকাতো। ফলে অচিরেই খড়মগুলো ব্যবহারের অভাবে এখানে সেখানে পড়ে থাকতো।
সাপ্তাহিক ছুটি যখন রবিবারে ছিল তখনও বেসরকারি অনেক স্কুলে রবিবারের বদলে শুক্রবারে ছুটি দেয়া হতো। এতে একটা ছোট সমস্যা দেখা দিল। রবিবার দুপুরের পরে তখন জনি ওয়েসমুলারের 'টারজান' দেখানো হতো। ফলে রবিবার টিফিনের পরে গণহারে স্কুল পালানো শুরু হলো। সাধারণত আমাদের প্রথম পিরিয়ডে রোল কল করা হতো, চতুর্থ পিরিয়ডের পরে টিফিন ব্রেক আর অষ্টম পিরিয়ড পরে ছুটি হতো। গণহারে স্কুল পালানোর ঘটনায় রবিবারে টিফিনের পর পঞ্চম পিরিয়ডেও রোল কল করা শুরু হয়। অতি সাহসী কয়েক জন অবশ্য রবিবার সকালে বাসা থেকে স্কুলে যাবার নাম করে মর্নিং শো-এ 'ইংলিশ সিনেমা' দেখতে যেতো। সময়টা দেশে কুংফু আর কারাতে শেখার সূচনাকাল। ঘরে ঘরে ব্রুস লী'র পোস্টার। ম্যাক ইউরি'র টাইলস বা বরফের চাঁই ভাঙা দেখে আমরা উত্তেজনায় শিউড়ে উঠছি। পাড়ায় পাড়ায় 'টাইগার কুংফু একাডেমি', 'ড্রাগন কারাতে এসোসিয়েশন' গড়ে উঠছে। ঢিলে ঢালা সুতী কাপড়ের বুকখোলা পোশাক পরে, কোমরে কাপড়ের বেল্ট এঁটে 'সেনসেই'-এর কাছে মার্শাল আর্ট শেখা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মাথার ভেতরে হিসাব হোয়াইট – অরেঞ্জ – ব্লু – ইয়েলো – গ্রীন – ব্রাউন – ব্ল্যাক! আহা! কবে যে ব্ল্যাক বেল্ট পাবো! কেউ কেউ আগ বাড়িয়ে নান-চাকু কিনে প্রাকটিস করে। এমন সময় সিনেমা হলে যদি ব্রুস লী'র 'এন্টার দ্য ড্রাগন', 'ফিস্ট অব ফিউরি' বা'গেম অব ডেথ' আসে তাহলে স্কুল পালানো ছাড়া গতি কী!
এই সময়ে কিছু চলচ্চিত্র পরিবেশক হংকং থেকে মার্শাল আর্ট ভিত্তিক সিনেমা নিয়ে আসা শুরু করেন। এসব সিনেমার মধ্যে যখন 'স্নেক ইন দ্য মাংকিজ শ্যাডো' আসলো তখন আমাদের মার্শাল আর্ট সংক্রান্ত চিন্তাভাবনা বিরাট ধাক্কা খেলো। আমরা বুঝতে শিখলাম প্রকৃতির প্রতিটি প্রাণীর নিজস্ব আত্মরক্ষার কৌশল আছে যা মানুষ আয়ত্ব করতে পারলে এক অসাধারণ যোদ্ধা হয়ে উঠতে পারে। এই সময় বাঘ, সাপ, ঘোড়া, ড্রাগন, ঈগল, মাকড়সা ইত্যাদি প্রাণীর স্টাইলভিত্তিক মার্শাল আর্টের এক একটা সিনেমা এসে আমাদের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন তুললো। এই সময় আমরা কিছু নতুন টার্ম শিখি তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে 'নিনজা'। টেলিভিশনে 'টিনেজ মিউট্যান্ট নিনজা টার্টল' কার্টুন দেখানো শুরু হলে নিনজা শব্দটা 'চোখ ছাড়া সারা শরীর ঢাকা' অর্থে সাধারণ্যে চালু হয়ে যায়। মার্শাল আর্ট ভিত্তিক সিনেমার বাড়বাড়ন্ত ধাক্কা খেলো সিলভেস্টার স্ট্যালোনের 'ফার্স্ট ব্লাড' আর আর্নল্ড শোয়ার্জনিগারের 'কমান্ডো' মুক্তি পাবার ফলে। রবিবার এসব সিনেমার জন্য স্কুল ফাঁকি দেয়া ছাড়া আরও একটা কারণে স্কুল ফাঁকি দেয়া বা পালানো অবধারিত ছিল – সেটা মোহামেডান-আবাহনীর ফুটবল ম্যাচের জন্য।
আজকের বাংলাদেশের মৃতপ্রায় ফুটবল দেখে বোঝার উপায় নেই যে সত্তর ও আশির দশকে এদেশের মানুষের বিনোদন, আলোচনা, ঝগড়া, রেষারেষি, উৎসব-আনন্দের অন্যতম উৎস ছিল ফুটবল। ফেডারেশন কাপ, প্রিমিয়ার ডিভিশন, ফার্স্ট-সেকেন্ড-থার্ড ডিভিশন, পাইওনিয়র লীগের খুঁটিনাটি খবর পর্যন্ত ফুটবলপ্রেমীরা রাখতেন। যারা অতোটা উৎসাহী ছিলেন না তারা পর্যন্ত মোহামেডান-আবাহনীর খোঁজ রাখতেন। পাড়ায় বা ক্লাসে নতুন কেউ আসলে নাম জানার পর প্রথম জিজ্ঞাস্য ছিল সে কি মোহামেডানের সমর্থক নাকি আবাহনীর। পাড়ায় পাড়ায় যে ফুটবল খেলা হতো সেখানে পর্যন্ত মোহামেডান-আবাহনী ভাগ হয়ে খেলা হতো। পাড়ার রাস্তার পাশে, বাসার ছাদের উপরে সাদা-কালো অথবা আকাশী-হলুদ রঙে রাঙানো বাঁশে মোহামেডান-আবাহনীর পতাকা ওড়ানো হতো। কাদের পতাকা কতো বড় হলো বা বেশি উঁচুতে উড়লো সেটা নিয়ে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হতো। জার্সি-পোস্টার-ভিউকার্ড-পেপার কাটিং এক এক জন সমর্থকের সম্পদ। সারা বছর লীগের খেলা টেলিভিশনে দেখানো হতো না বা রেডিওতে ধারা বিবরণী দিতো না। কিন্তু যেদিন মোহামেডান-আবাহনীর খেলা থাকতো সেদিন রেডিও-টিভিতে ঠিকই সরাসরি সম্প্রচার হতো। যারা স্টেডিয়ামে যেতে পারতেন না তারা তওফিক আজিজ খান, মঞ্জুর হাসান মিন্টু, আতাউল হক মল্লিক, খোদাবক্স মৃধাদের ধারাভাষ্যে কান পাততেন। নিজের দল জিতলে পাড়ায় পাড়ায় মিছিল, ব্যান্ড পার্টি, রঙ খেলা, খাওয়াদাওয়া সব হতো। সেসবের উন্মাদনার কিছুই আজ যেমন অবশিষ্ট নেই, তেমন সেই উন্মাদনার মাত্রাও আজ কাউকে বোঝানো সম্ভব নয়। ইংলিশ গ্রামার বইয়ে ফুটবল ম্যাচ দেখার জন্য অর্ধ-দিবস ছুটির আবেদনের দরখাস্ত ছিল। মোহামেডান-আবাহনীর খেলার দিনে সেই দরখাস্ত দেখে দেখে লিখে আমাদের স্কুলের ভাইস প্রিন্সিপাল স্যারের কাছে জমা দেয়া হয়েছিল। সেটার ফলাফল কী হয়েছিল সেটা বোধকরি না বললেও চলবে।
আশির দশকে আরও একটি কারণে কেউ কেউ স্কুল পালাতো। সেটা হচ্ছে ভিসিআরে সিনেমা দেখার জন্য। ঢাকার সিদ্দিক বাজার, বেগম বাজার এলাকায় রাতারাতি ছোট ছোট বাঁশের অস্থায়ী ঘরে ভিসিআরে সিনেমা দেখানো ভিত্তিক হল গড়ে উঠলো। সেটার দেখাদেখি আস্তে আস্তে সারা দেশে এই মডেল অনুসরণ শুরু হয়ে গেল। প্রথম প্রথম এসব হলে বেশ দাম দিয়ে একটা হিন্দী সিনেমা দেখা যেত। অচিরেই সেখানে এক টিকিটে দুটো বা তিনটা সিনেমা দেখানো শুরু হলো। তারপর শুরু হলো সেখানে সাধারণ চলচ্চিত্রের বদলে পর্নো ছবি দেখানো। আগেই এসব অবৈধ বাণিজ্যিক প্রদর্শনীর বিরুদ্ধে প্রায়ই পুলিশি অভিযান চলতো, পর্নো ছবির বাণিজ্য রমরমা হলে পুলিশী তৎপরতাও বাড়তে থাকে। পত্রপত্রিকায় এসব নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হতে থাকে। 'আকাই' আর 'ফুনাই' ব্রান্ডের সস্তা ভিসিপি আর পাড়ায় পাড়ায় ভিডিও ক্লাব/লাইব্রেরি গড়ে উঠলে এসব অবৈধ বাণিজ্যিক প্রদর্শনী আপনাআপনি বন্ধ হয়ে যায়। অবশ্য ততদিনে পড়াশোনা থেকে ছিটকে গিয়ে কিছু মানুষের জীবনে স্থায়ী ক্ষতি হয়ে গেছে।
এই প্রকার ক্ষতি অন্য মাত্রা পায় যখন স্কুলে পড়ুয়া কেউ কেউ আগ্নেয়াস্ত্র, 'হোন্ডা এক্সএল' মোটরসাইকেল আর কাঁচা টাকার লোভে পড়ে সামরিক স্বৈরাচারের পেটোয়া দলে ঢুকে পড়ে। নেশাকারক ড্রাগস বাজারে থাকলেও সেটা তখনো স্কুলপড়ুয়াদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েনি, কিন্তু দাপট আর ক্ষমতা দেখানোর বিষ ঠিক ঠিক তাদের মধ্যে ঢুকে পড়ে। ঐ সময়ে দুটো ঘটনা সারা দেশকে নাড়িয়ে দেয়। একটি খেলনা ক্যামেরা ধার দিয়ে ফেরত চাওয়ার ঘটনায় পুরনো ঢাকার টিপু সুলতান রোড এলাকার এক রেস্টুরেন্টে বসে দুজন কিশোর তাদেরই সহপাঠী দীপন নামের এক কিশোরকে খুনের পরিকল্পনা করে। এবং তারা দীপনকে ডেকে নিয়ে নিকটস্থ এক কবরস্থানে হত্যা করে। এর কয়েক দিনের মধ্যে অতি সামান্য ঘটনায় ঢাকার শেরেবাংলা নগরে মামুন নামের এক কিশোরকে তার অন্য কিশোর বন্ধুরা পানিতে চুবিয়ে হত্যা করে। খুনোখুনি দুনিয়ার কোন দেশেই খুব বিরল ঘটনা নয়। কিন্তু কিশোরদের দ্বারা পরিকল্পনা করে কিশোর হত্যার এই ঘটনাদুটো তখন কারো পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব হয় না। রোদ পঁচে যাওয়া আত্মার দুর্গন্ধে ভরে ওঠে, বাতাস হিংসার রঙে কুৎসিত হয়ে যায়।
২৩ এপ্রিল ২০২১