বুড়ো অ্যাটলাসের কাঁধের গ্লোব কি হারিয়েই গেল?
বুড়ো অ্যাটলাসের কাঁধে গ্লোব
গ্লোব, ম্যাপ, কম্পাস, স্কেল- এসবের দিন কি ফুরিয়ে এল? আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) সরব হওয়ার আগেই পৃথিবীতে বড় কিছু ঘটে গেছে। কোথাও মিসাইল ছুঁড়তে, বোমা ফেলতে, কামান দাগাতে আগে প্রতিরক্ষা বাহিনীর মানচিত্র ঘাঁটতে হতো, সমুদ্র অভিযান গ্লোব পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে অধ্যয়ন করা হতো, মানচিত্র হাতিয়ে নিতে পারা ছিল গোয়েন্দাদের বড় সাফল্য।
২০০৮ সালের লস্কর-ই-তৈয়বার মুম্বাই আক্রমণের কথা স্মরণ করুন। ২৬ থেকে ২৯ নভেম্বরের এই সময়ে আক্রান্ত হলো মুম্বাইয়ের লিওপোল্ড কাফে, ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ টার্মিনাল, তাজমহল প্যালেস হোটেল, ওবেরয় ট্রাইডেন্ট, কামা হসপিটাল, নারিমান হাউস, মেট্রো সিনেমা, সেইন্ট জেভিয়ার্স কলেজ। ৯ জন আক্রমণকারীসহ মোট ১৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। জাকিউর রেহমান লাকভি এবং লস্কর-ই-তৈয়বার সবশুদ্ধ ১৫ জন অ্যাক্টিভিস্টের বিরুদ্ধে ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড, মুম্বাই পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স, মেরিন কমান্ডো ফোর্স (মার্কোস), রেলওয়ে প্রোটেকশন ফোর্স, মুম্বাই ফায়ার ব্রিগেড দাঁড়িয়ে প্রমাণ করেছে, তাদের প্রতিরক্ষা কৌশল ও প্রতিরক্ষা দেয়াল কত ঠুনকো। জীবিত গ্রেপ্তার একমাত্র তরুণ আজমল কাসার মৃত্যুদণ্ডের আগে জবানবন্দিতে বলেছেন, তাদের আক্রমণের লক্ষ্যস্থল ও নিশানা ঠিক করতে গুগল আর্থ পর্যালোচনা করেছেন।
গুগল আর্থ থেকে নেওয়া
প্রতিরক্ষা বাহিনীর একটি অনিবার্য কোর্স হচ্ছে ম্যাপ রিডিং। যেকোনো মিলিটারি অপারেশনের সাফল্য ও ব্যর্থতার দায় পড়েছে ম্যাপ রিডিংয়ে দক্ষতা ও অদক্ষতার ওপর। গুগল আর্থ কি কষ্টার্জিত সেসব বিদ্যার উপর পানি ঢেলে দিল?
গুগল আর্থ পৃথিবীর সব গ্লোব, ম্যাপ তছনছ করে দিয়ে নিজস্ব মানচিত্রে পৃথিবীকে ঢুকিয়ে ফেলার কাজটা শুরু করে নতুন সহস্রাব্দে, ২০০১ সালে। ২০১৯ সালে গুগল জানায়, পৃথিবীর ৯৭ ভাগ এখন গুগলের আওতায়, সাথে মানচিত্রে ঢুকেছে ১০ মিলিয়ন রাস্তাঘাট। মূল কাজ আর্থ নেভিগেশন।
ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি বিজ্ঞানী এ.পি.জে আবদুল কালাম উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ভারতের অনেক কি পয়েন্ট ইনস্টলেশনের হাই রেজুলেশন ছবি গুগল ধারণ করছে। ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন বলেছে, গুগল ভারতের জন্য নিরাপত্তা হুমকি। দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার উদ্বিগ্ন; কারণ, গুগল সে দেশের গোপনীয়তা জানান দিচ্ছে- উত্তর কোরিয়া তো এ সুযোগ হাতছাড়া করবে না।
গুগল ম্যাপে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সদর দপ্তর নিয়ে ২০০৬ সালে উদ্বেগ জানিয়েছে রাষ্ট্রটি। মাইকেল ফিনটন (ধর্মান্তরিত তালিব ইসলাম) ২৪ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ইলিনয়ের পল ফিল্ডলে ফেডারেল বিল্ডিং উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন গুগল ম্যাপ দেখে। অস্ট্রেলিয়া উদ্বিগ্ন তাদের লুকাস হাইটস নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টস গুগলের ম্যাপে। গুগল প্রাইভেসিতে হানা দিয়েছে।
ম্যাপ ও গ্লোব বাণিজ্য আর বহাল রাখার যুক্তি আছে কি? আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের যুগ বিশ্বব্যবস্থাকেই বদলে দিচ্ছে। বুড়ো অ্যাটলাসের কাঁধের গ্লোব কি আগামী দিনে কেবলই অ্যানটিক হয়ে থাকবে?
বেগম রোকেয়া সরণি ধরে যারা আবহাওয়া অধিদপ্তরের উঁচু ভবনটি অতিক্রম করেছেন, ভবনের গ্লোবটি তারা দেখেছেন। অনেক দূর থেকেও তা চোখে পড়ে। দেখলে মনে হয়, ওটাই তুলনামূলকভাবে লম্বা ভবনটির মুণ্ডু।
আবহাওয়া অফিস ঢাকা
পৃথিবীর পরিধি প্রায় ৪০ মিলিয়ন মিটার। গণিতের সহজ পাঠ বলছে, যদি পৃথিবীসদৃশ গোলক নির্মাণ করা হয়, তাহলে আনুপাতিক হিসাবটা ঠিক রাখতে হবে। যদি গ্লোবের পরিধি এক মিটার হয়, তাহলে গ্লোব ও পৃথিবীর আনুপাতিক স্কেল দাঁড়াবে ১:৪০ মিলিয়ন। পরিধি বাড়ালে বা কমালে এই আনুপাতিক হিসাবটা মাথায় রেখেই তা করতে হবে।
নিউ ইয়র্কের বিলি জিন কিং টেনিস সেন্টারে স্থাপিত ইউনিস্কয়ার গ্লোবের ব্যাস ৩৭ মিটার বা ১২০ ফুট। এটাই পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ভৌগোলিক গ্লোব। ১:৩৫০০০০ স্কেলে এটি নির্মিত হয়েছে। তবে এটা স্থির গ্লোব।
বস্টনের মেরি বেকার অ্যাডি লাইব্রেরিতে অবস্থিত কাচের গ্লোব মাপারিয়াম-এর ব্যাস ৯.১ মিটার বা ৩০ ফুট। স্কেলে এই গ্লোব ও পৃথিবীর অনুপাত ১:১.৪ মিলিয়ন, বরাবর ৩০ ফুট কাচের ব্রিজের উপর দিয়ে দর্শনার্থীরা গ্লোবের ভেতর পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে যেতে পারে।
ম্যাসাচুসেটসের ওয়োলসলিতে বস্টন গ্লোব ৭.৯ মিটার বা ২৬ ফুট ব্যাসের অক্ষ বরাবর ঘূর্ণায়মান; এর স্কেল অনুপাত ১:১.৬ মিলিয়ন। নিউ ইয়র্ক সিটি দ্য নিউজ বিল্ডিংয়ে স্থাপন করা গ্লোব ১:৩.৫ মিলিয়ন অনুপাতে সৃষ্টি করা হয়েছে; ১৮০০ কিলোগ্রাম ওজনের এই গ্লোবটির ব্যাস ৩.৭ মিটার বা ১২ ফুট।
বুহত্তম ঘূর্ণায়মান আর্থ
রাশিয়ার ছোট শহর দরোগোবুজস্কি ঐতিহাসিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই শহরে স্থাপিত দরোগোবুজ গ্লোব ইউরোপের সর্ববৃহৎ ঘূর্ণায়মান গ্লোব, পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম। ১২.৬ মিটার ব্যাসের অতিকায় গ্লোবটিতে শহরের কেমিক্যাল প্লান্ট চত্বরে ১২ মিটার উঁচুতে ২০০৭ সালে স্থাপন করা হয়েছে।
জার্মানি নির্মাণ করছে ২০ মিটার বা ৬৫ ফুট ব্যাসের ঝুলন্ত গ্লোব। আলোক সম্পাতের মাধ্যমে ডায়নামিক ইমেজ সৃষ্টি করে এই গ্লোব জার্মান স্পেস সেন্টারে প্রদর্শন করা হয়েছে। ফিলিপাইনের ম্যানিলার মল অব এশিয়া গ্লোব এশিয়াতে বৃহত্তম।
যারা যুক্তরাষ্ট্রের ইয়ারমাউথের ডিলর্ম পাবলিশিং কোম্পানির কাছাকাছি বাস করছেন এবং যারা কাছাকাছি কোথাও বেড়াতে গিয়েছেন- পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ঘূর্ণায়মান গ্লোবটি তাদের দৃষ্টি এড়াবার কথা নয়।
গ্লোবটির ব্যাস ৪১ ফুট বা ১২.৫ মিটার। আর গ্লোবটির ওজন পাঁচ হাজার ৬০০ পাউন্ড বা আড়াই হাজার কিলোগ্রাম। এই গ্লোবটির নাম আর্থা। ১ অনুপাত ১০ লক্ষ (গ্লোবের ১ মিলিমিটার সমান পৃথিবীর ১ কিলোমিটার) পরিকল্পনা ও নির্মাণে সময় লেগেছে দুই বছর। কাজটা সম্পন্ন হয় ১৯৯৮ সালে। গ্লোবের পৃষ্ঠদেশের ইমেজ প্রদর্শনে আনুমানিক ১৪০ গিগাবাইট লেগেছে। এর কাঠামোগত ডিজাইন করেন ডেভিড ডিলর্ম। স্যাটেলাইট প্রযুক্তির যত ধরনের প্রকাশনা, তার প্রায় সবই করে থাকে ডিলর্ম কোম্পানি। ১৯৯৯ সালে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে ৪১ ফুট দেড় ইঞ্চি ব্যাসের 'রেজুলেশন ও রোটেশন' ক্ষমতাসম্পন্ন এই গ্লোবকে পৃথিবীর বৃহত্তম গ্লোব হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
এর আগে এই রেকর্ডটি ছিল ইতালির পেসারোতে স্থাপিত ১০ মিটার ব্যাসের গ্লোব অব পিস-এর। এর ওজন ১৭ হাজার কিলোগ্রাম। বার্তোলুচ্চি নামের একজন একদা রাজমিস্ত্রি এবং পরবর্তীকালে ধনী নির্মাণ ঠিকাদার পৃথিবীতে শান্তির বার্তা পৌঁছে দিতে নিজ ব্যয়ে এটি নির্মাণ করেন। নির্মাণে সময় লেগেছে ছয় বছর। প্রতিদিন ভোর ৫টা থেকে বার্তোলুচ্চি বিরামহীনভাবে এই নির্মাণকাজে অংশ নিয়েছেন।
অনুসন্ধানীরা প্রাচীনতম যে গ্লোবের সন্ধান পেয়েছেন, তা ক্রিস্টোফার কলম্বাসের অভিযানের অল্পকাল আগে জার্মান ভূ-বিশারদ মার্টিন বেহেইমের ১৪৯২ সালের তৈরি। নুরেমবুর্গ শহরে স্থাপনের জন্য এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা হয়। এই গ্লোব যখন তৈরি হয়, কোনো ইউরোপীয় আমেরিকার অস্তিত্ব সম্পর্কে আদৌ অবহিত ছিলেন না।
প্রাচীনতম গ্লোব এরদাপফেল
মার্টিন বেহেইম (৬ অক্টোবর ১৪৫৯-২৯ জুলাই ১৫০৭) ছিলেন একজন মানচিত্রকার বা কার্টোগ্রাফার এবং কাপড় ব্যবসায়ী। তিনি পর্তুগিজ রাজা দ্বিতীয় জনের নৌ উপদেষ্টা ছিলেন এবং পশ্চিম আফ্রিকার সামুদ্রিক অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। মানুষের জ্ঞাত প্রাচীনতম গ্লোব এরদাপফেল প্রস্তুতকারী হিসেবে তিনি পরিচিত। তার বাবা সিনিয়র মার্টিন ছিলেন ইউরোপের অভ্যন্তরে দূরদেশসমূহে ব্যবসায়ী এবং নুরেমবুর্গের সিনেটর। ধনী পরিবারের সন্তান হিসেবে তিনি ভালো স্কুলে শিক্ষা লাভ করেন। ১৫ বছর বয়সে পৌঁছতেই তার বাবার মৃত্যু হলে তিনি টেক্সটাইল ব্যবসায় যুক্ত হন। সাময়িক বসতি স্থাপন করেন পর্তুগালে। তার মহাকাশজ্ঞান ও সঠিক নেভিগেশন পরামর্শ দ্বিতীয়জনকে আকৃষ্ট করে। তিনি তাকে নাইটহুড প্রদান করেন।
১৪৯০ সালে তিনি নুরেমবুর্গ ফিরে আসেন। সে সময় সিটি কাউন্সিলের সদস্যরা পৃথিবীর গ্লোব নির্মাণের অর্থের জোগান দেন এবং মার্টিনকে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়। মার্টিনের দেওয়া পরিকল্পনা অনুযায়ী জর্জ গ্লোকেমডন মানচিত্রের ড্রইং করেন এবং দক্ষ কজন শিল্পী ২১ ইঞ্চি ব্যাসের জিপসাম আবৃত গ্লোবটি তৈরি করেন। এই গ্লোবে দুই হাজারের অধিক স্থানের উল্লেখ রয়েছে। এতে কল্পিত কিছু দানবের ছবিও দেওয়া হয়েছে, মার্কো পলোর অভিযাত্রার পথও এতে রয়েছে। জন মেন্ডিভল, দিয়াগো গোমেজের মতো অভিযাত্রীর যাত্রাপথের বর্ণনার অঞ্চল ও রুট এতে স্থান পেয়েছে। এই গ্লোবটির নাম দেওয়া হয় এরদাপফেল মানে পৃথিবীর আপেল। ১৮৪৭ সালে জার্মান ন্যাশনাল মিউজিয়াম গ্লোবটির অধিকার নিয়ে নেয় এবং নুরেমবুর্গ টেরেস্ট্রিয়াল গ্লোব নামে এটাকে সংরক্ষণ করে। মার্টিন ৪৭ বছর বয়সে লিসবনের একটি হসপিটালে মৃত্যুবরণ করেন।
এসময়ের সেরা কয়েকটি গ্লোব:
১. জিওগ্রাফিক অ্যাম্বাসেডর গ্লোব
২. ইললুমিনেটেড ওয়ার্ল্ড গ্লোব ফর কিডস
৩. গ্লোব উইথ ইললুমিনেটেড কনস্টেলেশনস
৪. ইললুমিনেটেডওয়ার্ল্ড গ্লোব উইথ হেভি মেটাল বেইজ
৫. এলইডি ইললুমিনেটেড আর্থ অ্যান্ড কনস্টেলেশন গ্লোব
৬. ভিনটেজ গ্লোব
৭. ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক অ্যানটিক গ্লোব
৮. নোভা রিকো অ্যানটিকস ইললুমিনেটেড গ্লোব
৯. গ্লোব অব আর্থ অ্যান্ড ক্লাউডস
১০. ম্যাগনেটিক লেভিটেশন গ্লোব
বিশেষজ্ঞরা যেসব গ্লোব কেনার পরামর্শ দিয়ে থাকেন, তার মধ্যে রয়েছে:
অ্যানাপোলিস ২০ ইঞ্চি অ্যানটিক ইললুমিনেটেড ফ্লোর হেয়ারলুম; অ্যাটলাস ১২ ইঞ্চি ব্রোঞ্জ মেটালিক ব্লু রেইজড রিলিফ ডেস্ক; অ্যাটলান্টিস ১২ ইঞ্চি ব্লুরেইজড রিলিফ ডেস্ক। জুপিটার গ্লোব; কার্লাইল ১২ ইঞ্চি, স্টেটসম্যান ২০ ইঞ্চি।
১৯৯৯ সালে জাপানি স্থপতি হাজিমে নারুকাওয়ার 'অথাগ্রাফ' গ্লোবকে সবচেয়ে সঠিক পরিমাপের গ্লোব মনে করা হয়। শ্রেষ্ঠ গ্লোব ব্র্যান্ডের মধ্যে রয়েছে অ্যাডভেঞ্চারার, অ্যালানসন, অ্যাম্বাসেডর, অ্যান্ডোরা, আনাপোলিস, অ্যাপোলো, আটলান্টিক, অ্যাটলাস, অস্টিন, অ্যাভিয়েটর, ব্যারেল, বিঙ্গহাম, ক্যামব্রিজ, কার্লাইন, কমান্ডার, কোমো গ্লোব, কম্পাস রোজ, কনস্টেলেশন, ক্র্যানব্রুক, ক্রিস্টান মার্কিস, ডিপ্লোম্যাট, আর্থ অ্যান্ড স্কাই।
ষোড়শ শতক থেকে এ পর্যন্ত স্কুল-কলেজ ও বাসগৃহে একটি এলিটিস্ট শিক্ষা উপকরণ হিসেবে গ্লোব অবস্থান করে আসছিল, গ্লোবের উপযোগিতাও ছিল। স্কুলজীবনে গ্লোব দেখে কোথায় মাদাগাস্কার, কোথায় মৌরতানিয়া, কোথায় ফিজি আর কোথায় ইথিওপিয়া তা দ্রুত বের করার পরীক্ষা আমাকেও দিতে হয়েছে। একালে সেই সব গ্লোব ধূলি ধুসরিত ও উপেক্ষিত অবস্থায় স্কুলের ভাঙ্গা আলমারির উপর হয়ত পড়ে আছে। ভাঙ্গারির দোকানেও দু'একটি ভাঙ্গা গ্লোবের দেখা মিলবে।
গ্লোব যা দেখাচ্ছে স্মার্ট ফোনে গুগল আর্থ দেখাচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশি, আরো বিস্তারিত আরো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে। গুগলের স্মৃতি প্রায় ত্রিমাত্রিক ফটোগ্রাফিক; তাহলে গ্লোবের আদৌ কি দরকার রয়েছে? গ্লোবকেও আধুনিকীকরণের প্রতিযোগিতা চলছে। কিন্তু পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কাই বেশি। তা হলেও অন্তত অ্যানটিক সামগ্রী হিসেবে অ্যাটলাসের কাঁধের উপর গুরুভার গ্লোব থেকেই যাবে।