কুড়িগ্রামে অরক্ষিত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আতঙ্কে বসবাস তীরবর্তী মানুষজনের
কুড়িগ্রামে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন নদীতীরবর্তী মানুষজন। এলাকায় ভাঙনের কবলে পড়ে বসতভিটা ও জমি হারিয়ে নিঃস্ব এখন হাজার হাজার পরিবার।
লোকবল ও পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কিছুই করার থাকে না। এলাকাবাসীর দাবি স্থায়ী কাজের। অপরদিকে পাউবোর দাবি, আগামী পাঁচ কী ছ’ বছরের মধ্যে নতুন বাঁধ তৈরি ও পুনমেরামতের প্রকল্প পাশ হলেই বন্যার কবল থেকে রক্ষা পাবেন এ জনপদের মানুষ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কুড়িগ্রামে রয়েছে ছোট-বড় ১৬টি নদ-নদী। ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, গঙ্গাধর আর দুধকুমারসহ এসব নদ-নদীতে প্রতি বছর পানি বৃদ্ধি কিংবা কমার সময় চলে তীব্র ভাঙন।
সারা জেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ রয়েছে ২১০ কিলোমিটার। এর মধ্যে চলতি বন্যায় বাঁধের সামান্য ক্ষতি হলেও গেল কয়েক বছরের বন্যায় ২৫ কিলোমিটার বাঁধ বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া রৌমারী-রাজিবপুর উপজেলায় বাঁধ না থাকায় এবারের বন্যায় বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় এই উপজেলার মানুষদের। বসতভিটা ও জমি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ছেন ভাঙন-এলাকার অধিবাসীরা।
উলিপুর-চিলমারীতে ৫২.৭ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কারের জন্য ২৭ কোটি টাকা ব্যয় ধরে টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া সদর-ফুলবাড়ি উপজেলায় ১৭ কিলোমিটার নতুন বাঁধ নির্মাণ ও ২৪কিলোমিটার পুরাতন বাঁধ সংস্কারের প্রায় ৭০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) জমা রয়েছে। নাগেশ্বরী-ভূরুঙ্গামারীর নতুন বাঁধটির ১২ কিলোমিটার নির্মাণ ও ৩৫ কিলোমিটার সংস্কারের জন্য ৬৩০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। আর রৌমারী-রাজিবপুরে ৪৭ কিলোমিটার নতুন বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের।
অন্যদিকে চারটি জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তা নদীতে তিস্তা ব্যারেজ থেকে চিলমারী পর্যন্ত ১০৫ কিলোমিটার নতুন বাঁধ ও পুরনো বাঁধ সংস্কার করে পাকা সড়ক তৈরির জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকে যাওয়ার পথে। এসব প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়িত হলে আগামী ৫-৬ বছরের মধ্যে কুড়িগ্রামকে ভয়াবহ বন্যার ক্ষতি থেকে রক্ষা করা সম্ভব বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ।
এবারের বন্যায় ৪০ কিলোমিটার বাঁধসহ ১,৩৩৪ কিলোমিটার পাকা ও কাঁচা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নষ্ট হয়েছে ৪১টি সেতু। নদী-ভাঙনের কারণে মানুষের দুর্ভোগ এখনও কমেনি। সরকারের কাছে দ্রুত স্থায়ী সমাধান চান ভুক্তভোগীরা।
এদিকে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, জেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ নতুন বাঁধ নির্মাণ এবং পুনরায় সংস্কারের জন্য বেশ কিছু প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলো পাস হবার পর বাঁধ নির্মাণ করা গেলেই বন্যার ক্ষতি থেকে জেলার মানুষজন রেহাই পাবেন।