রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে শক্তিশালী বৈশ্বিক সাড়া চায় ঢাকা
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন শুক্রবার জানিয়েছেন, “রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ে বাংলাদেশ কঠোর অবস্থান নেবে। এ অঞ্চলের বৃহত্তর শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য বিশ্বনেতৃত্বকে অবশ্যই এ সমস্যার দ্রুত সমাধান করতে হবে।”
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপকমিটির আয়োজনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু স্মৃতি ট্রাস্ট মিলনায়তনে ‘১৫ আগস্ট ও বাংলাদেশের ওপর এর অভিঘাত’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন।
ড. মোমেন বলেন, “আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি আমরা, আপনাদের পরামর্শমতো কাজ করেছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এটি (প্রত্যাবাসন) হয়নি। আমরা আমাদের অবস্থান শক্ত করব।। বাংলাদেশ মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু তারা বাংলাদেশের মাথাব্যথা নয়, বরং এটি সারাবিশ্বের মাথাব্যথা।”
তিনি বলেন যে, মিয়ানমারকে অবশ্যই তাদের নাগরিকদের বোঝাতে হবে যাতে তারা নিজেদের ভূমি রাখাইন রাজ্যে ফিরে যায়।।
বাংলাদেশে বর্তমানে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়ে আছেন। তাদের বেশিরভাগই মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর বর্বর অভিযান থেকে জীবন বাঁচাতে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর বাংলাদেশে প্রবেশ করেন।
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বিশ্বের আরও উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত উল্লেখ করে তিনি এ সংকটের সমাধান খুঁজে বের করতে বিশ্বনেতৃত্বকে আহ্বান জানান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মনে করিয়ে দেন যে, মিয়ানমারকে উদ্যোগী হতে এবং তাদের নাগরিকদের যত দ্রুত সম্ভব ফিরিয়ে নেয়ার জন্য বোঝাতে আসিয়ান সদস্য দেশগুলোরও দায়িত্ব রয়েছে।
রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ফেরা এবং তাদের মাঝে থাকা আস্থার ঘাটতি দূর করার জন্য রাখাইনে অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে বাংলাদেশ নয়, বরং মিয়ানমারে বেশির নজর দিতে জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর প্রতিও আহ্বান জানান তিনি।
“আমাদের সীমিত সম্পদে আমরা তাদের ভালোই রেখেছি,”—মন্ত্রী বলেন।।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে চীন, রাশিয়া, ভারত, জাপান ও অন্যান্য দেশ বাংলাদেশের পক্ষে রয়েছে বলেও জানান তিনি। এ সংকট সমাধানে জাতিসংঘ দায়িত্ব এড়াতে পারে না জানিয়ে তিনি উল্লেখ করেন, “সেখানে (রাখাইনে) ঘৃণা দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে।।”
রোহিঙ্গাদের ফেরানোর ব্যবস্থা করতে বাংলাদেশ সবসময় প্রস্তুত এবং এ ব্যাপারে সরকার এখনও আশাবাদী বলেও জানান তিনি।
এর আগে বৃহস্পতিবার ড. মোমেন বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে বাংলাদেশ জোর করে কিছু করতে চায় না। সে সঙ্গে তিনি মাতৃভূমিতে ফিরতে না চাওয়া রোহিঙ্গাদের মাঝে আস্থার ঘাটতি দূর করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। রোহিঙ্গারা নিরাপত্তা ও সুরক্ষার যে ভয়ে আছে তা দূর করতে ১০০ মাঝি বা রোহিঙ্গা নেতাকে রাখাইন রাজ্যে নিয়ে যাওয়ার এবং তাদের সেখানে নিজ গৃহে স্বাগত জানাতে কী পদক্ষেপ ও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা দেখাতে বাংলাদেশের আহ্বান পুনরায় তুলে ধরেন তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আগে জানিয়েছিলেন যে, রাখাইনের উন্নতি দেখতে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপসহ সেখানে শান্তি ও স্থিতিশিলতা বিরাজ করছে কি না তা পরিদর্শনে বিভিন্ন দেশের মানুষদের নিয়ে একটি কমিশন গঠনের কথা ভাবছেন।
“মিয়ানমারের প্রমাণ করা উচিত যে সেখানে উন্নয়ন হয়েছে এবং শান্তি বিরাজ করছে,” উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাঠ পর্যায়ে পরিস্থিতি দেখতে সাংবাদিকদেরও নিয়ে যেতে পারে মিয়ানমার।
ড. মোমেন বলেন, মিয়ানমার যদি সৎ হয়ে থাকে তাহলে তাদের এগিয়ে আসা এবং রাখাইনে পরিস্থিতি দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে প্রবেশাধিকার দেওয়া উচিত। বাংলাদেশে আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের জন্য স্থানীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে তহবিলের সরবরাহ কমে আসার প্রতি ইঙ্গিত করেন মন্ত্রী। এর ফলে এখন আরামে থাকা রোহিঙ্গাদের জন্য হয়তো সামনে সমস্যা হবে।
“নিজেদের ভালো ভবিষ্যতের জন্য তাদের ফিরে যাওয়া উচিত,’ বলেন তিনি।
রাখাইন রাজ্যে প্রত্যাবাসনের আগে যাচাইয়ের জন্য ২৯ জুলাই ছয় হাজার পরিবারের ২৫ হাজার রোহিঙ্গার নতুন একটি তালিকা মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর করে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৫ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা পেয়েছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর চুক্তি সই করে। পরে দুই দেশ ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি মাঠপর্যায়ে কার্যক্রম এগিয়ে নিতে ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ নামে একটি চুক্তি হয়।। এ চুক্তি অনুযায়ী, প্রত্যাবাসন শুরুর দু’বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল।
রোহিঙ্গাদের প্রথম দলের ফেরার কথা ছিল গত বছরের ১৫ নভেম্বর। কিন্তু রাখাইনে অনুকূল পরিবেশ না থাকায় রোহিঙ্গারা ফিরতে রাজি না হওয়ায় এ কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।
দ্বিতীয়বারের মতো এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয় গত বৃহস্পতিবার। এ জন্য ব্যাপক প্রস্তুতির পরও রোহিঙ্গাদের অনিচ্ছার কারণে সেটাও আটকে যায়।