প্লে-অফে চট্টগ্রাম-খুলনা
একটা সময়ে জয় দূরের পথই মনে হচ্ছিল। কুয়াশায় যেভাবে ঢেকে গিয়েছিল মিরপুর স্টেডিয়াম, তাতে বল দেখাই কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছিল গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামের ব্যাটসম্যানদের জন্য। কিন্তু এর মাঝেই শামসুর রহমানের শুভ ব্যাটিং চোখ রাঙাতে শুরু করে। একটু একটু করে এগিয়ে শেষ বল পর্যন্ত লড়াই করা ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান শেষ বলে ছক্কা মেরে চট্টগ্রামকে দারুণ এক জয় উপহার দিয়েছেন।
মঙ্গলবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে জেমকন খুলনাকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম। রোমাঞ্চকর এই জয়ের আগেই প্লে-অফ নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল চট্টগ্রামের। মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহীর হারে শেষ চারের টিকেট পেয়ে যায় ৬ ম্যাচে ৫টিতে জেতা চট্টগ্রাম। হারের দিনে খুলনাও শেষ চারের টিকেট পেয়েছে, সেটাও রাজশাহীর হারে। ৭ ম্যাচে ৪ জয়ে ৮ পয়েন্ট তাদের। ঢাকা, বরিশাল ও রাজশাহীর মধ্যে যেকোনো একটি দল বাদ পড়বে।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামে জেমকন খুলনা। কেউ বড় ইনিংস না খেলতে পারলেও মাঝারি কয়েকটি ইনিংস পেয়েছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল। এই ইনিংসগুলোয় ৯ উইকেটে ১৫৭ রান তোলে খুলনা।
জবাবে দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারানো গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামের হয়েও কোনো ব্যাটসম্যান বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। তবে পাঁচে নেমে শেষ পর্যন্ত লড়াই করে গেছেন ম্যাচসেরা শামসুর রহমান শুভ। তার ৩০ বলে ৫ চার ও একটি ছক্কায় করা অপরাজিত ৪৫ রানে শেষ বলে জয় নিশ্চিত হয় চট্টগ্রামের।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে নড়বড়ে শুরু হয় চট্টগ্রামের। প্রায় ৯ মাস পর ম্যাচ খেলতে নামা মাশরাফি বিন মুর্তজার করা প্রথম ওভার থেকে ৬ রান তোলা চট্টগ্রাম পরের ওভারেই উইকেট হারান। পুরো টুর্নামেন্টে দারুণ ব্যাটিং করে আসা লিটন দাসকে এদিন থিতু হতে দেননি সাকিব আল হাসান।
এরপর সৌম্য সরকারের সঙ্গে যোগ দিয়ে দাপুটে ব্যাটিং শুরু করেন মাহমুদুল হাসান জয়। যদিও এই জুটি দীর্ঘ হয়নি। মাশরাফি, সাকিবদের বলে বেশ কয়েকটি দারুণ শট খেলা মাহমুদুল ১৪ বলে ২৪ রান করে শুভাগত হোমের শিকারে পরিণত হন। সৌম্য এদিন দেখেশুনেই খেলে যাচ্ছিলেন। অবশ্য তাতে খুব একটা লাভ হয়নি। ৯.৩ ওভার পর্যন্ত ব্যাটিং করা সৌম্য ২২ বলে ১৯ রান করে আউট হন।
এরপর অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুন চেষ্টা করেও দলকে খুব একটা স্বস্তিতে রাখতে পারেননি। ২১ বলে ২৩ রান করেন তিনি। তেড়েফুঁড়ে খেলা মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ১২ রান করেই বিদায় নেন। পারেননি জিয়াউর রহমানও। এরপর একাই লড়েছেন শামসুর রহমান শুভ। শেষ ওভারে ৯ রান দরকার পড়ে চট্টগ্রামের। মুস্তাফিজুর রহমান একটি চার মেরে কাজটা সহজ করেন। শেষ বলে ১ রানের দরকার হলে ছক্কা মেরে খেলা শেষ করেন শামসুর। দীর্ঘদিন পর বল হাতে নেওয়া মাশরাফি ৪ ওভারে ২৮ রান খরচায় একটি উইকেট নেন। সাকিব ও শুভাগত ২টি করে উইকেট নেন।
এরআগে ব্যাটিং করা জেমকন খুলনার শুরুটা খুব একটা ভালো হয়নি। উদ্বোধনী জুটিতে ৩৩ রান যোগ করেন জহুরুল ইসলাম অমি ও জাকির হাসান। উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান জাকির ১৫ রান করে থামেন। কিছুক্ষণ পর বিদায় নেন ২৬ রান করা জহুরুল। উইকেটে থাকা সাকিব আল হাসানের সঙ্গে যোগ দেন দীর্ঘদিন পর ম্যাচ খেলতে নামা মাশরাফি বিন মুর্তজা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই রান আউটের শিকার হয়ে বিদায় নিতে হয় মাশরাফিকে।
পুরো টুর্নামেন্টে ব্যর্থ সাকিব এদিনও রান করতে পারেননি। ১৫ রান করে আউট হন তিনি। এরপর মাঝে দলের রানচাকা ঘুরিয়েছেন ইমরুল কায়েস ও অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। ইমরুল ২৪ ও মাহমুদউল্লাহ ২৬ রান করেন। শেষের দিকে শুভাগত হোমের ঝড়ো ইনিংসে ১৫৭ রানে পৌঁছায় খুলনা। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান মাত্র ১৪ বলে ৬টি চার ও একটি ছক্কায় অপরাতি ৩২ রান করেন। চট্টগ্রামের শরিফুল ইসলাম ৩টি ও মুস্তাফিজুর রহমান ২টি উইকেট পান।