পর্যালোচনা: ইংল্যান্ড বনাম ইরান, কে জিতবে আজকের ম্যাচে?
বেশিরভাগ দর্শকেরই ধারণা ইরানের বিপক্ষে ইংল্যান্ড হেসেখেলেই জয় পাবে। থ্রি লায়ন্সরা শেষবারের বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে উঠেছিল, দুই বছর আগে ইউরোপসেরার তকমা অল্পের জন্য হাতছাড়া হয়েছিল ফাইনালে হেরে। কাতার বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে ইউরোপের দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গোল ব্যবধান রেখে নিজেদেরকে প্রমাণ করেছে ইংল্যান্ড, ৩৯টি গোলের বিপরীতে হজম করেছে মাত্র ৩টি গোল। সহজেই তিন পয়েন্ট নিজেদের পকেটে পোরার আত্মবিশ্বাস গ্যারেথ সাউথগেটের দলের রয়েছে, তবে সোমবার তাদের জন্য একটু কৌশলী প্রতিপক্ষ দাঁড়িয়ে রয়েছে।
ইরানের নিজেদেরও একটি অসাধারণ বাছাই পর্ব কেটেছে, এশিয়ান বাছাইপর্বের তৃতীয় রাউন্ডের ১০টি ম্যাচের ৮টি ম্যাচে জয় নিয়ে ফিরেছে তারা, হজম করেছে মাত্র ৪টি গোল। তাছাড়া বর্তমানে ফিফা র্যাংকিং-এর ২০তম অবস্থানে ইরান, সার্বিয়া, মরক্কো কিংবা পোল্যান্ডের মতো দলকে পেছনে ফেলে।
তবে ইরানের চিন্তার বিষয় একজায়গাতেই, বিশ্বকাপের মাত্র দুই মাস আগে মূল কোচের হঠাৎ পরিবর্তন। দ্রাগান স্কচিচকে সরিয়ে তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন কার্লোস কেইরোজ, যিনি মিশরকে আফ্রিকান কাপ অফ নেশন্সের ফাইনাল পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিলেন। টানা চার বিশ্বকাপে কেইরোজ মূল কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, এবং ইরানের জন্য টানা তৃতীয়বার, এর আগের দুই বিশ্বকাপেও তিনি ছিলেন ইরানের মূল কোচ।
গত বুধবার প্রস্তুতি ম্যাচে তিউনিশিয়ার কাছে ২-০ গোলে হারলেও কেইরোজের মতে এই হার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আরও ভালো প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। "অবশ্যই এই ফলাফল মোটেই ভালো নয়। আমরা কোনো গোল হজম করতে চাই না, আমরা হারতেও পছন্দ করি না। তবে আমাদের কিছু ভুল শোধরানো প্রয়োজন। পেনাল্টি হজম করার আগে আমরা গোল করার বেশ কিছু সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেছি। তবে আমাদের মূল লক্ষ্য ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রস্তুতি নেওয়া।"
ইরান এবারের অংশগ্রহণ করা ২০টি দলের একটি, যারা গত দুই বিশ্বকাপেও অংশগ্রহণ করেছে। এই দলগুলোর মধ্যে ইরান দুই বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের মোট ছয়টি ম্যাচ খেলে সবচেয়ে কম শট করেছে (৪৭টি), সবচেয়ে কম অন-টার্গেট শট করেছে (১০) এবং সবচেয়ে কম গোল করেছে (৩টি)।
অন্যদিকে, ইংল্যান্ডের এরিক ডায়ার কাতারের গরম তাপমাত্রা নিয়ে খুব একটি চিন্তিত নন, যদিও ম্যাচটি শুরু হবে স্থানীয় সময় বিকাল ৪টায়। "আমি জানি না এই তাপমাত্রার প্রভাব কী হবে। আমি এর আগে কখনোই এরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হইনি, তাই এই অভিজ্ঞতা আমার জন্য প্রথম। এই টুর্নামেন্ট সাধারণত গ্রীষ্মেই খেলা হয়য়। ২০১৮ সালে রাশিয়া বেশ গরম ছিল, যদিও আমি সেখানে খেলিনি। তবে ২০২০ ইউরোর সময় ইংল্যান্ডে প্রচণ্ড গরম ছিল। তাই আমার মনে হয় আমরা যেকোনো আবহাওয়ার জন্য প্রস্তুত। একইসাথে আমরা আমদের প্রতিপক্ষের মতো একই পরিবেশে খেলছি। তা-ই সবার জন্য পরিবেশ একইরকম।"
ইংল্যান্ড একমাত্র ইউরোপীয় দল যারা গত দুই টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালেই উঠেছে, এবং খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামেও তারা একই ধরনের শক্তিমত্তা দেখাতে প্রস্তুত।
তবে, ইংল্যান্ডের ক্ষেত্রে বাধা হতে পারে তাদের সাম্প্রতিক ফর্ম। ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপজয়ীরা নেশন্স লীগের ৬টি ম্যাচের কোনো ম্যাচেই জয়ের মুখ দেখেনি, যার ফলে তারা লীগ বিতে রেলিগেটেড হয়েছে। যদি ইংল্যান্ড এই ম্যাচে জয় না পায়, তবে তারা নিজেদের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো টানা ৭ ম্যাচ জয়শূণ্য থাকার রেকর্ড গড়বে, এর আগের রেকর্ডটি ১৯৫৮ সালের। অন্যদিকে, ইরান বিগত ৩ বছরে মাত্র একটি ম্যাচ হারলেও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আন্ডারডগ হিসেবেই মাঠে নামবে। তাছাড়া ইরানের বিশ্বকাপ রেকর্ডও বেশ বাজে। বর্তমান ফরম্যাটে ইরান কখনোই গ্রুপ পর্ব পার হতে পারেনি, জিতেছে মাত্র দুইটি ম্যাচ। তবে, শেষ ৩ ম্যাচে তারা উরুগুয়ে এবং নিকারাগুয়েকে হারিয়েছে, জয় পাওয়া থেকে ঠেকিয়েছে আফ্রিকান শক্তি সেনেগালকেও।
যেসব খেলোয়াড়ের বাজিমাত করতে পারেন
ইংল্যান্ড: হ্যারি কেইন
গত বিশ্বকাপ এবং ইউরোতে ইংল্যান্ডের অবিসংবাদিত নেতা ছিলেন তাদের অধিনায়ক হ্যারি কেইন, যেখানে রাশিয়া থেকে গোল্ডেন বুট নিয়ে ফিরেছিলেন তিনি। তার করা ছয়টি গোলের পাঁচটিই এসেছিল গ্রুপ পর্ব থেকে। ইউরোপের বিশ্বকাপ বাছাই পর্বেও কেইন যুগ্মভাবে সর্বোচ্চ গোলদাতা, ১২টি গোলের ট্যালিতে সাথে নাম রয়েছে নেদারল্যান্ডসের মেমফিস ডিপায়-এর। ছয় গোল করা খেলোয়াড়দের মধ্যে শট কনভার্শনের মধ্যেও এগিয়ে রয়েছেন তিনি, তার করা শটের ৩৬.৪ শতাংশই তিনি গোলে রূপান্তরিত করেছেন।
ক্লাবের হয়েও দারুণ ছন্দে হ্যারি কেইন। টটেনহ্যামের জার্সি গায়ে মাঠে নেমে শেষ ১৯টি ম্যাচে গোল করেছেন ১৫টি, ইরানের রক্ষণভাগে ছিদ্র করার জন্য যা যথেষ্ট।
ইরান: মেহদি তারেমি
পরিসংখ্যান হিসাব করলে ইরানের সরদার আজমুনের দিকেই মূল চোখ থাকার কথা ইংল্যান্ডের। ইরানের হয়ে ৬৩ ম্যাচ খেলে ৪০ গোল করা এই ফরোয়ার্ড অবশ্য ক্লাব পর্যায়ে নিষ্প্রভ। জার্মান ক্লাব বায়ার লেভারকুজেনের হয়ে ২২ ম্যাচ খেলে করেছেন মাত্র ১ গোল।
অন্যদিকে, তার আক্রমণভাগের সহযোগী তারেমি পোর্তোর হয়ে ১৯ ম্যাচ খেলে করেছেন ১৩ গোল, যার মধ্যে ৫টিই চ্যাম্পিয়ন্স লীগে। চ্যাম্পিয়ন্স লীগের গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে তারেমির গোল ছাড়া অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে হারানো সম্ভব ছিল না, তার গোলের ওপর ভর করেই শেষ ১৬-তে জায়গা পেয়েছে পর্তুগিজ দলটি। ২০১৯-২০ মৌসুম থেকে হিসাব করলে পর্তুগিজ প্রিমেইরা লীগে রিও আভে আর পোর্তোর হয়ে ১০৯ ম্যাচ খেলে করেছেন ৬০ গোল, একই সময়ে অন্য যেকোনো খেলোয়াড়ের চেয়ে ১৬ গোল বেশি।
জাতীয় দলের হয়েও দারুণ ফর্মে রয়েছেন তিনি। মাত্র ৬ ম্যাচ খেলে এশীয় বাছাই পর্বের তৃতীয় রাউন্ডে ইরানের অন্য যেকোনো খেলোয়াড়ের চেয়ে গোলে বেশি অবদান রেখেছেন; করেছেন চারটি, করিয়েছেন আরও দুইটি।
সম্ভাব্য ফলাফল
ইরান একেবারে সহজ প্রতিপক্ষ না হলেও ইংল্যান্ড এই ম্যাচে ফেভারিট হিসেবেই মাঠে নামবে। দ্য অ্যানালিস্টের সুপারকম্পিউটারের প্রেডিকশন অনুযায়ী, ইংল্যান্ড-ইরান ম্যাচে জয়ের সম্ভাবনা ইংল্যান্ডের দিকে হেলে রয়েছে ৭২.২ শতাংশে। অন্যদিকে ড্রয়ের সম্ভাবনা ১৮.১ শতাংশ। অন্যদিকে ইরানের আপসেট ঘটানোর সম্ভাবনা মাত্র ৯.৭ শতাংশ।