মরক্কোর বিপক্ষে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের আগে ফ্রান্সের ইনজুরির শঙ্কা
ফ্রান্স দলের অন্যতম দুই প্রধান খেলোয়াড় অসুস্থতার কারণে মরক্কোর বিপক্ষে মাঠে নামতে পারবেন কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। অন্যদিকে অ্যাটলাস লায়ন্সের কোচ ওয়ালিদ রেগরাগুইও আরব এবং আফ্রিকার প্রতিনিধি হিসেবে তার দল নিয়ে ফরাসিদেরকে আটকানোর চেষ্টা করবেন।
ফ্রেঞ্চ ফুটবল ফেডারেশনের বিবৃতি অনুযায়ী, বুধবারের ম্যাচের আগে মঙ্গলবারের ট্রেনিং সেশন থেকে অনুপস্থিত ছিলেন ডিফেন্ডার দায়োত উপামেকানো এবং মিডফিল্ডার আদ্রিয়েন র্যাবিয়ট। ফরাসি কোচ দিদিয়ের দেশমের জন্য এটি এক বড় ধাক্কা, কারণ এই দুজনকে ছাড়াই মরক্কোর বিরুদ্ধে নামতে হতে পারে তাকে।
গলা ব্যথায় ভোগা উপামেকানো এবং অনির্দিষ্ট অসুস্থতায় ভোগা র্যাবিয়ট ইনডোরে হালকা প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন বলে ফেডারেশন জানিয়েছে। উপামেকানো সোমবারের ট্রেনিং সেশনও মিস করেছিলেন।
দুই খেলোয়াড়কে বাদ দেওয়া হলে কোচ দেশম উপামেকানোর বদলে সেন্টার ব্যাক পজিশনে ইব্রাহিমা কোনাতে এবং মিডফিল্ডে র্যাবিয়টের বদলে ইউসুফ ফোফানাকে নামানো হতে পারে।
শনিবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গোল করা চুয়ামেনিও বাম পায়ে অস্বস্তির কারণে সোমবার অনুশীলনে অনুপস্থিত ছিলেন, তবে মঙ্গলবারের ট্রেনিং সেশনে অংশগ্রহণ করেন তিনি। আশা করা যাচ্ছে, মরক্কোর বিপক্ষে ম্যাচের তিনি ফিট হয়েই মাঠে নামবেন। এই মিডফিল্ডারই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি এই বিশ্বকাপে ফরাসিদের প্রতিটি ম্যাচেই শুরু থেকে খেলেছেন।
"আমাদের কিলিয়ানকে আটকাতে হবে, কিন্তু কেবল শুধু তাকে নয়"
মঙ্গলবার অনুশীলন চালিয়ে যাওয়া মরক্কো দলও ইঞ্জুরির শংকায় রয়েছে, বিশেষ করে অধিনায়ক রোমাইন সাইস এবং সেন্টার ব্যাক নায়েফ আগুয়ের্দের। তবে মরক্কোর কোচ ওয়ালিদ রেগরাগুই বলেছেন বুধবারের খেলায় কোনো খেলোয়াড়কে বাদ দেওয়া হয়নি: "আমাদের ভালো ডাক্তার আছে এবং প্রতিদিন আমরা ভালো খবর পাচ্ছি। কাউকে বাদ দেওয়া হয়নি, তবে স্কোয়াডে কারো পজিশন নিশ্চিত নয়। আমরা সম্ভাব্য সেরা দল ব্যবহার করব।"
রেগরাগুই আরও জানিয়েছেন যে ফ্রান্সের কিলিয়ান এমবাপ্পের আক্রমণ কীভাবে মরক্কো মোকাবেলা করবে সে ব্যাপারে তার কোনও নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই । বরং ফরাসি দলের আক্রমণভাগের মাত্র একজন খেলোয়াড়ের উপর মনোনিবেশ করার অনেক হুমকি রয়েছে বলে জানান তিনি।
এমবাপ্পে তার পাঁচ গোল নিয়ে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ স্কোরার। প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়ের আক্রমণভাগের বাম দিকে খেলা এই খেলোয়াড় তার ক্লাব সতীর্থ এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধু আশরাফ হাকিমির বিরুদ্ধে নামবেন, যিনি মরক্কোর রাইট ব্যাক। অর্থাৎ, এমবাপ্পেকে থামানোর কাজ হাকিমির ঘাড়েই পড়বে। রেগরাগুইয়ের মতে, হাকিমি-এমবাপ্পের এক চমৎকার দ্বৈরথ অপেক্ষা করছে দর্শকদের সামনে, তবে তিনি এটি বলেও সাবধান করেছেন ফ্রান্স কেবল তার তারকা খেলোয়াড়ের উপর নির্ভর করে না: "আমাদের কিলিয়ানকে ব্লক করতে হবে, তবে শুধু তাকে নয়, পুরো ফ্রান্স দলকেই। হাকিমি তার বন্ধুকে হারাতে খুবই উৎসাহী।"
খেলাটি জেতার মূল চাবিকাঠি হবে মরক্কোর 'টিম স্পিরিট' এবং আল বাইত স্টেডিয়ামে দর্শকদের সমর্থন, যেখানে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ হাজির হবেন, সাথে থাকবে হাজার হাজার সবুজ তারাখচিত লাল পতাকার মরক্কো সমর্থক।
"আর্জেন্টাইন এবং ব্রাজিলিয়ানদের পরেই বিশ্বের সেরা সমর্থকরা আমাদের। বিশ্বের যেকোন স্থান থেকে মরক্কো সমর্থকরা তাদের দেশকে সমর্থন করতে এসেছে। আমরা আমাদের ঘরের মাঠেই খেলার মতো পরিবেশ পাবো এবং এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিস," রেগরাগুই জানান।
আফ্রিকা সম্পর্কে মানুষের মনে যে নেতিবাচকতা তা পরিবর্তন করতে প্রস্তুত রেগরাগুই। বিশ্বকাপের চেয়ে কম লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামতে খেলোয়াড়দেরকে নিষেধ করেছেন তিনি: "আমরা এগিয়ে যাওয়ার জন্য লড়াই করতে যাচ্ছি, আফ্রিকান দেশগুলোর জন্য, আরব বিশ্বের জন্য।"
১৯১২ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত ফরাসি শাসনের অধীনে থাকা মরক্কোর সাথে ফ্রান্সের এই ফুটবল ম্যাচকে ঘিরে রাজনৈতিক কিংবা সাংস্কৃতিক আকর্ষণও কম নয়।
'তারা থামবে না'
ফ্রান্স গোলরক্ষক হুগো লরিস মঙ্গলবার সতর্ক করে বলেছেন মরক্কো এক কঠিন প্রতিপক্ষ হবে: "বিশ্বাস করুন, তারা এখানে থামবে না। তাদেরকে থামাতে হলে ফ্রান্সকে তাদের সেরা খেলাটা খেলতে হবে।" মরক্কোর দুর্ভেদ্য রক্ষণভাগ নিয়েও সতর্ক করেছেন লরিস, দলের কোচ দেশমও মরক্কোর রক্ষণকে 'এই বিশ্বকাপের সেরা রক্ষণভাগ' বলে মত দিয়েছেন।
টুর্নামেন্টে মরক্কো মাত্র একটি গোল খেয়েছে, তাও সেটি আত্মঘাতী গোল। তবে দেশম জানিয়েছেন, ফ্রান্স মরক্কোর রক্ষণভাগ ভাঙার একটি উপায় খুঁজে বের করবে এবং নিজেরাই গোল করার সুযোগ তৈরি করবে।
বেলজিয়াম, স্পেন এবং পর্তুগালকে হারানোর পর ফ্রান্সকেও এই তালিকায় যুক্ত করতে মরিয়া মরক্কো। প্রথম আরব ও আফ্রিকান দেশ হিসেবে সেমিফাইনালে ওঠা মরক্কো কি পারবে এই রেকর্ড ফাইনাল পর্যন্ত নিয়ে যেতে? তবে লেস ব্লুজরাও তাদের মুকুট রক্ষার জন্য ফেবারিট দল হিসেবে টুর্নামেন্টে এসেছে এবং যদি তারা টুর্নামেন্ট জিততে পারে তবে ১৯৬২ সালে ব্রাজিলের পর তারা টানা দুইবার বিশ্বকাপ শিরোপা জিতবে।
ফ্রান্স বনাম মরক্কো ম্যাচের বিজয়ী রবিবার ফাইনালে মাঠে নামবে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে।