বাংলাদেশের গলি-রাস্তার ক্রিকেট আইসিসির ফেসবুক-ওয়েবসাইটে
ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে ঢুকে যে কেউ ধন্ধে পড়ে যেতে পারেন। মনে হতে পারে বাংলাদেশের কোনো ফ্যানপেজে ঢুকে পড়েছেন। ফটো গ্যালারিতে একটু পর পরই বাংলাদেশের ক্রিকেটের ছবি। সেটাও আন্তর্জাতিক বা ঘরোয়া ক্রিকেট ম্যাচের কোনো ছবি নয়; বাড়ির উঠোন, রাস্তা, গলি কিংবা খোলা মাঠে ক্রিকেট খেলার ছবি।
কেবল বাংলাদেশের পথে-পান্তরে খেলা ক্রিকেটের ছবিই আইসিসির ফেসবুক পেজ বা ওয়েবসাইটে জায়গা পায়, তেমনও নয়। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে ক্রিকেটের ছবি তুলে আইসিসিতে পাঠান ক্রিকেটভক্ত কিংবা সৌখিন আলোকচিত্রিরা। এর মধ্য থেকে মনে ধরা ছবিগুলো ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে থাকে বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
বেশ আগে থেকেই এমন সব ছবি প্রকাশ করে আসছে আইসিসি। তবে এ মাসে আইসিসির ফেসবুক পেজ ছিল বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে খেলা ক্রিকেটের ম্যাচের ছবিতে ভরা। এই মাসে বাংলাদেশের এমন মোট চারটি ছবি ফেসবুকে প্রকাশ করেছে আইসিসি। সর্বশেষ ২৭ এপ্রিল কক্সবাজারের একটি ছবি আইসিসির ফেসবুক পেজে পোস্ট করা হয়। ছবি কৃতজ্ঞতায় দেওয়া হয় নাজমুল হুদার নাম।
তিন যুবকের ক্রিকেট খেলার ছবিটি পোস্ট করে আইসিসি ক্যাপশনে লিখেছে, 'স্টাম্পবিহীন গলির ক্রিকেট।' ছবিটিতে দেখা যায়, একটি গলিতে তিনজন ক্রিকেট খেলছে। উইকেটরক্ষক থাকলেও নেই স্টাম্প। বোলারের ছোড়া বল ব্যাটসম্যান খেলতে যাচ্ছেন, এমন সময়ে আলোকচিত্রী ছবিটি ধারণ করেছেন। পাশেই প্রাচীরের মতো উঁচু একটি জায়গায় কয়েকজন দর্শককেও দেখা যায় ছবিতে।
ছবিটির মালিক নাজমুল হুদার ভাই কামরুল হুদা কমেন্ট বক্সে লিখেছেন, 'ছবিটি আমার ছোট ভাই নাজমুলের তোলা। নিজেদের ফটো গ্যালারিতে জায়গা দেওয়ার জন্য আইসিসিকে ধন্যবাদ।' এর নিচেই ছবির মালিক নাজমুল হুদার কমেন্ট। উচ্ছ্বসিত নাজমুল লিখেছেন, 'আমার ছবি প্রকাশ করার জন্য ধন্যবাদ।'
এরআগে ২৫ এপ্রিল বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ থানার একটি ছবি পোস্ট করে আইসিসি। ছবিটির ক্যাপশনে লেখা, 'ছোট বাচ্চারা।' ছবিটিতে দেখা যায় বড় একটি গাছকে স্টাম্প বানিয়ে ক্রিকেট খেলছে দুটি শিশু। ব্যাটসম্যানের অন্য প্রান্তে দুটি লাঠি পোঁতা, যা এ পাশের স্টাম্প হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। ব্যাটসম্যান ব্যাটিং করছে আর পাশেই ঘরের সিঁড়িতে বসে তা দেখছে তাদের চেয়ে কম বয়সী দুটি শিশু।
নিজেদের গ্রামের ছবি আইসিসির ফেসবুক পেজে দেখে অনেকেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। একজন লিখেছেন, 'আমাদের রামগঞ্জের ক্রিকেট খেলার ছবি নিজেদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে পোস্ট করেছে আইসিসি। সত্যিই গর্বিতবোধ করছি।' একটু নিজেই মন্তব্য করে ছবির স্থানকে নিজেদের বাড়ি বলে জানিয়েছেন সুমা মনি নামের একজন। তিনি লিখেছেন, 'এটা আমাদের বাড়ির। একটা শিশু রাফসান, আরেকটা সফিকুল। সফিকুল মাদ্রাসায় পড়ে।'
গত ১৭ এপ্রিল ঢাকার একটি ছবি পোস্ট করে আইসিসি। যে ছবিতে সবুজ ঘাসের মাঝ দিয়ে চলে যাওয়া ইটের রাস্তায় কয়েকজনকে ক্রিকেট খেলতে দেখা যায়। ছবি দেখে মনে হয়েছে, কিছুক্ষণ আগেই বৃষ্টি হয়েছে। ভেজা অবস্থাতেই ব্যাট-বল নিয়ে মেতে ওঠে কয়েকজন কিশোর। তারা স্টাম্প বানিয়েছে নিজেদের পায়ের চটি দিয়ে। ছবিটির ক্যাপশনে আইসিসি লিখেছে, 'ভেজা অবস্থাতেও খেলা চলে।'
এরও আগে গত ১১ এপ্রিল আরেকটি ছবি পোস্ট করে আইসিসি। এই ছবিতে তিনটি শিশুকে দেখা যায়। তবে ক্রিকেট খেলছিল দুজন, পাশে গাছের সাথে গা হেলিয়ে খেলা দেখছিল আরেকটি শিশু। ব্যাটসম্যানের পেছনে বল ধরার ভঙ্গিমায় উইকেটরক্ষক দাঁড়িয়ে। এদের স্টাম্প কয়েকটি ইট দিয়ে বানানো। ছবিটির ক্যাপশনে লেখা, 'ক্রিকেটের জন্য একটি নির্মল ও শান্তিপূর্ণ দিন।'
এপ্রিলে আইসিসির পেজে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ বিভিন্ন প্রান্তে খেলা ক্রিকেটের চারটি ছবি গেছে। এরআগেও আইসিসির পেজে জায়গা পেয়েছে বাংলাদেশের এমন ছবি। গত ৩১ মার্চ জামালপুরের ইসলামপুরের একটি ছবি পোস্ট করে আইসিসি। ছবিটিতে গৌধুলীলগ্নে ফাঁকা জায়গায় দুটি শিশুকে ক্রিকেট খেলতে দেখা যায়।
২৫ মার্চ বাঘেরহাটের একটি ছবি জায়গা পায় আইসিসির ফেসবুকে। ফেসবুকে পোস্ট করা প্রতিটি ছবিই অফিসিয়াল ওয়েবসাটের ফটো গ্যালারিতেও প্রকাশ করে থাকে আইসিসি। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে খেলা ক্রিকেটের এমন ছবি প্রকাশ করে থাকে আইসিসি।