মাশরাফির বাদ পড়ার কারণ ব্যাখ্যায় যা বললেন নির্বাচকরা
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডের দল ঘোষণার বেশ আগে থেকেই মাশরাফি বিন মুর্তজার অন্তর্ভুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছিল। পুরো ফিট না থেকেও বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে বল হাতে আলো ছড়ানোয় মাশরাফির দলে থাকার জোর সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছিলেন অনেকেই। কিন্তু সেটা হয়নি। ওয়ানডের সফলতম অধিনায়ককে বাদ দিয়ে ২৪ সদস্যের প্রাথমিক দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
২০ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ইনজুরির কারণে অনেক সিরিজই খেলা হয়নি মাশরাফি। কিন্তু পারফরম্যান্সের কারণে এবারই প্রথম বাদ পড়লেন তিনি। মাশরাফির নাম না দেখে স্বভাবতই অনেক প্রশ্ন ছুড়েছেন সাংবাদিকরা। সোমবার দল ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে তাই এই প্রসঙ্গ নিয়েই বেশি কথা বলতে হয়েছে দুই নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু ও হাবিবুল বাশার সুমনকে।
মাশরাফির বাদ পড়ার কারণে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন বলেন, 'এখানে সব কিছু নিয়েই আলোচনা হয়েছে। কোনো কিছুই গ্যাপ রাখা হয়নি। টিম ম্যানেজমেন্টের পরিকল্পনা, ওর ফিটনেস ট্রেইনার, বোলিং কোচ সবার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। পুরো টিম ম্যানেজমেন্ট, সব বিভাগের সবার সঙ্গে আলোচনা করে এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।'
মূলত নতুনদের জায়গা দিতেই মাশরাফিকে দলে রাখা হয়নি বলে জানালেন প্রধান নির্বাচক। তার ভাষায়, 'টিম ম্যানেজমেন্ট আমাদের অনেক পরিকল্পনা দিয়েছে, আমরাও আমাদের পরিকল্পনা নিয়ে অনেক আলোচনা করেছি। অনেক আলোচনার পরই সিদ্ধান্তে এসেছি। আমাদের দেশের ক্রিকেটের কথা চিন্তা করে, আগামীতে এগিয়ে যাওয়ার কথা চিন্তা করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'
'তরুণ ক্রিকেটারদের জায়গা দিতে হবে, ওদেরও সুযোগ দিতে হবে। ২০২১ সালে আমরা নতুনভাবে শুরু করছি, ১০ মাস পরে সবাই কিন্তু নতুন করে শুরু করছে। ১০ মাসে অনেক পিছিয়ে গেছি এই মহামারিতে। সেই হিসেবে আমরা সম্মিলিতভাবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ দিয়ে ভালো ক্রিকেট শুরু করতে চাই।' যোগ করেন প্রধান নির্বাচক।
২০২৩ বিশ্বকাপের পরিকল্পনা সাজাতে মাশরাফিকে বাদ দিতে হয়েছে বলে জানান মিহাজুল আবেদীন। তিনি বলেন, 'এই সিরিজটা শুরু করছি এখন, এই সিরিজটার কথাই বলি। মাশরাফি ছাড়া এই সিরিজটা শুরু করছি। ওদিকে নজর রেখেই (২০২৩ বিশ্বকাপ) টিম ম্যানেজমেন্ট আমাদের পরিকল্পনা দিয়েছে ভিশন ২০২৩- এর। ওই ভিশন মাথায় রেখে ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে আমরা একসঙ্গে এগোচ্ছি।'
শেষপর্যন্ত মাশরাফিকে বাদ দিলেও এই সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন ছিল বলে জানিয়েছেন মিনহাজুল আবেদীন। প্রধান নির্বাচক বলেন, 'ওর প্রতি আমাদের সম্মান আছে, আমাদের দেশের জন্য অনেক কিছু দিয়েছে। এটা একটা কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল। তারপরও বাস্তবতা আমাদের মানতেই হবে। সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা সবাই সম্মিলিতভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মাশরাফিকে বাদ দিতে হয়েছে।'
আরেক নির্বাচক হাবিবুল বাশারও জানালেন, নতুনদের সুযোগ করে দিতেই মাশরাফিকে বাদ দেওয়া। বাংলাদেশের সাবেক এই অধিনায়ক বলেন, 'মাশরাফি ২০ বছর ধরে আমাদের সার্ভিস দিয়ে আসছে। মাশরাফি কী করেছে, আমরা সবাই জানি। তো ওর সাথে কারো তুলনা আমি করব না। ও সব সময় আমাদের জন্য আইকনিক প্লেয়ার ছিল। বছরের পর বছর সে আমাদের দেশকে সার্ভিস দিয়ে এসেছে।'
'আমাদের প্রধান নির্বাচক বলেছেন, আমাদের ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে হবে। এখনও আমি মনে করি সে ভালো, তবে এক বছর কঠিন হয়ে যাবে, এটাই বাস্তবতা। সেক্ষেত্রে আমরা সামনের দিকে তাকাই, নতুন কাউকে সুযোগ দেই। আমরা মনে হয় না ওর সাথে এখনই কাউকে তুলনা করাটা ঠিক হবে। এটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা নয়, সামনের জন্য নতুনদের তৈরি করে দেওয়া।' যোগ করেন হাবিবুল বাশার।