মুস্তাফিজ যখন ‘গতিময় রশিদ খান’
অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের কাছে মুস্তাফিজুর রহমান রীতিমতো যমদূত হয়ে উঠেছেন। বাংলাদেশের বাঁহাতি এই পেসার বোলিং প্রান্তে গেলেই পাল্টে যাচ্ছে অজি ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং পরিকল্পনা। অন্য বোলারদের বিপক্ষে চার-ছক্কা মারার চেষ্টা করছেন তারা, সফলও হচ্ছেন কেউ কেউ। কিন্তু মুস্তাফিজের ডেলিভারি বুঝতেই সময় শেষ। তার স্লোয়ার-কাটারে রীতিমতো নাভিশ্বাস অবস্থা সফরকারী ব্যাটসম্যানদের।
চার-ছক্কা তো দূরের কথা, মুস্তাফিজের ডেলিভারি ব্যাটে-বলে করাটাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে অজিদের জন্য। কীভাবে খেললে তার বিপক্ষে সফল হওয়া সম্ভব, দীর্ঘ পড়াশোনা করেও উপায় মিলছে না। থেকে যেতে হচ্ছে গোলক ধাঁধার চক্করে। অস্ট্রেলিয়ার কাছে বিস্ময় হয়েই থেকে যাচ্ছেন মুস্তাফিজ।
চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতে ব্যাট হাতে ঝড় তোলা অস্ট্রেলিয়ার ড্যান ক্রিশ্চিয়ান অবশ্য মুস্তাফিজের বোলিংয়ের ধরন বুঝতে পেরেছেন। ৩৮ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডারের মতে, আফগান লেগ স্পিনার রশিদ খান গতিময় লেগ স্পিন করলে যেমন হবে, মুস্তাফিজের বোলিং অনেকটা তেমনই। ক্রিশ্চিয়ানের ভাষায়, 'তার বল খেলাটা দারুণ গতিময় রশিদ খানকে খেলার মতো।'
মুস্তাফিজের বল কীভাবে খেলতে হবে, তা নিয়ে রীতিমতো অন্ধকারে অজি ব্যাটসম্যানরা। সামনের পায়ে নাকি পেছনের পায়ে মুস্তাফিজের বল খেলতে হবে, এটার সমাধানও বের করতে পারেনি সফরকারীরা। ডেলিভারি ছাড়ার পর সেটা কেমন হবে, তা বোঝার উপায় নেই বলে মনে করেন ক্রিশ্চিয়ান।
চতুর্থ ম্যাচে ব্যাট হাতে ব্যবধান গড়ে দেওয়া এই অজি অলরাউন্ডার বলেন, 'এই ম্যাচের আগে আমরা তাকে খেলার নানা পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছি। তাকে সামনের পায়ে খেলব নাকি পেছনের পায়ে, অফ সাইডে খেলব নাকি লেগ সাইডে, এসব নিয়ে কথা হয়েছে। তার বলে এতো কিছু হয়, পিচেও বল উঠা-নামা করে। তার বল কেমন হবে, বোঝার উপায় নেই। সামনের পায়ে তাকে খেলা সত্যিই কঠিন, কারণ কোনো বল টার্ন করবে, কোনোটি বাউন্স করে।'
১৫ বলে একটি চার ও ৫টি ছক্কায় ৩৯ রান করে মুস্তাফিজের বলে আউট হওয়া ক্রিশ্চিয়ানের তাই সরল স্বীকারোক্তি, মুস্তাফিজকে খেলার সমাধান তাদের কাছে নেই। তিনি বলেন, 'অবশ্যই আমরা কোনো সমাধান বের করতে পারিনি। কারণ এই ম্যাচেও সে ওভার প্রতি মাত্র ২ রান করে দিয়েছে। সত্যিই দুর্দান্ত বোলিং, কন্ডিশনটাকে নিজের পক্ষে দারুণভাবে কাজে লাগাচ্ছে সে।'
প্রথম দুই টি-টোয়েন্টিতে ভালো করলেও অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের এতো ভোগাতে পারেননি মুস্তাফিজ। প্রথম ম্যাচে ৪ ওভারে ১৬ রান খরচায় ২ উইকেট নেন তিনি। পরের ম্যাচে ২৩ রান খরচায় তার শিকার ৩ উইকেট। কিন্তু তৃতীয় টি-টোয়েন্টি থেকে অজিদের জন্য আতঙ্ক হয়ে ওঠেন মুস্তাফিজ।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মুস্তাফিজের বোলিং ফিগার দেখে বোঝার উপায় নেই, এটা টি-টোয়েন্টির বোলিং। তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে মুস্তাফিজের বোলিং ফিগার ৪-০-৯-০, চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতে ৪-১-৯-২। রান খরচায় নজর দিলে টেস্ট বোলিংও মনে হতে পারে। চতুর্থ ম্যাচে ৪ ওভারে ২৪ বলের মধ্যে ১৭টি বল ডট করেছেন তিনি। তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে তার দেওয়া ডট বলের সংখ্যা ছিল ১৫টি।