যা আছে সালাউদ্দিনের নির্বাচনী ইশতেহারে
আগামী ৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নির্বাচন। এ লক্ষ্যে রোববার নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছে কাজী সালাউদ্দিনের কাজী সালাউদ্দিন, কাজী নাবিল, সালাম মুর্শেদীদের নিয়ে করা সম্মিলিত পরিষদ। গতবার ছিল ২৫ দফা, এবার ৩৬ দফার ইশতেহার দেওয়া হয়েছে।
অনেক পুরনো প্রতিশ্রুতিই নতুন করে দেওয়া হয়েছে এই ইশতেহারে। যদিও তিন মাস গবেষণা করে এই ইশতেহার তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সভাপতি পদে নির্বাচন করতে যাওয়া কাজী সালাউদ্দিন।
রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে সম্মিলিত পরিষদের নেতৃবৃন্দ গণমাধ্যমের সামনে ৩৬ দফা নির্বাচনী ইশতেহার তুলে ধরেন। ইশতেহার ঘোষণা ছাড়াও বিগত ১২ বছরে নিজেদের সাফল্যের খতিয়ানও তুলে ধরেছে সম্মিলিত পরিষদ।
ইশতেহারে জাতীয় দলের দীর্ঘমেয়াদী বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা, বঙ্গবন্ধু গোল্ড কাপ নিয়মিত আয়োজন, সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ও এসএ গেমসের শিরোপা পুনরুদ্ধার ও ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের উন্নতির জন্য পরিকল্পনা নেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
র্যাঙ্কিংয়ে উন্নতির বিষয়টি বিশেষভাবে প্রাধান্য পাবে বলে ইশতেহারে বলা হয়েছে। আগামী চার বছরের মধ্যে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ছেলেদের অবস্থান ১৫০-এর কাছাকাছি ও মেয়েদের অবস্থান ৯০-এর কাছাকাছি নিয়ে আসার লক্ষ্যের কথা আছে ইশতেহারে। গতবারের ব্যর্থতা আগামীতে মুছে দেয়ার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে।
ঘরোয়া ফুটবলের সুনির্দিষ্ট পঞ্জিকা প্রণয়ন, নির্ধারিত সময়ে দলবদল, জেলা ফুটবল লিগগুলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আয়োজন, প্রথম-দ্বিতীয়-তৃতীয় বিভাগ লিগে অংশ নেওয়া দলগুলোকে লাইসেন্সের আওতায় আনা ও বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টগুলো আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে ইশতেহারে।
ছয় বছর বিরতি দিয়ে শুরু হওয়া মেয়েদের লিগের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা, সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ও এসএ গেমসে শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়গুলো আছে ইশতেহারে।
এ ছাড়া আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন স্টেডিয়ামের সংখ্যা বৃদ্ধি, দেশের চারটি স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগিতা আয়োজন, টার্ফগুলোর পুনঃউন্নয়ন, ঘরোয়া ফুটবলের দলগুলোর হোম ভেন্যুর প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা নিশ্চিতকরণ এবং আন্তর্জাতিক মানের জিমনেশিয়াম তৈরির উদ্যোগের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
গতবারের ইশতেহারে শেরেবাংলা কাপ, সোহরাওয়ার্দী কাপ আয়োজন করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু কোনোটাই আয়োজন করা হয়নি। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপও নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়নি। নির্ধারিত সময়ে দলবদল ও বর্ষপঞ্জিকা মেনে কার্যক্রম চালাতে পারেনি বাফুফে। একাডেমি, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন জিমনেশিয়াম নির্মাণের প্রতিশ্রুতিও পুরণ করেননি সালাউদ্দিন।
এরপরও সালাউদ্দিনের দাবি, প্রতিশ্রুতির ৭৫ ভাগ কাজ করা হয়েছে। যদিও গতবারের ইশতেহার তার দেওয়া ছিল না বলে জানান তিনি। সালাউদ্দিন বলেন, '২০১৬ সালের ইশতেহারের ৭০-৭৫ শতাংশ কাজ হয়েছে। ওই ইশতেহার আমার দেওয়া ছিল না। ওই সময় দ্বিধা ছিল। যখন ইশতেহার দেওয়া হয়, ওই মিটিংয়ে কিন্তু আমি ছিলাম না।'
'আমি অফিস থেকে যে ইশতেহার দিয়েছি, সেখানে অনেক কিছু যোগ করা হয়েছিল। সেটা দিয়েছিলেন তরফদার রুহুল আমিন। ২৫ শতাংশ কাজ না হওয়ায় আমি খুবই দুঃখিত। তবে এখানে যা বলা হয়েছে, প্রায় তিন মাস গবেষণা করেই আপনাদেরকে দেওয়া হয়েছে।' যোগ করেন সালাউদ্দিন।
আগেরবার সবচেয়ে বড় প্রতিশ্রুতি ছিল ২০২২ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করার বিষয়টি নিশ্চিত করা। তবে এ নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে বলে মনে করেন গত ১২ বছর ধরে বাফুফের সভাপতি হিসেবে থাকা সালাউদ্দিন। তিনি বলেন, 'এখানে আপনাদের একটা কনফিউশন আছে। বিশ্বকাপ খেলব বলিনি। কোয়ালিফাই করার চেষ্টা করব বলেছি। আমাকে তো লক্ষ্য নিয়ে এগোতে হবে।'
'আমরা যখন এসেছিলাম, ১৮০ ছিল। এখন ১৮৭। দেখুন ফ্রান্স বিশ্বচ্যাম্পিয়ন, কিন্তু ওরা র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে না। ফিফার প্রীতি ম্যাচগুলো গুরুত্বপূর্ণ। যদি বেশি খেলেন, ভালো করলে এগোনোর সুযোগ থাকে। আমাদের আর্থিক সঙ্কট ছিল, যে কারণে আমরা প্রীতি ম্যাচগুলো খেলতে পারিনি।'
র্যাঙ্কিংয়ে উন্নতির প্রতি জোর দেওয়ার কথা জানিয়ে সালাউদ্দিন আরও বলেন, 'আগামী অক্টোবর ২০২৪ এর মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের ফিফা র্যাঙ্কিং উন্নতির লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে, যাতে করে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলকে ১৫০-এর কাছাকাছি এবং বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলকে ৯০-এর কাছাকাছি উন্নীত করা যায়।'