লুকিয়ে টাকা দিতেন মা, খেলতেন রকিবুল
ছেলে লেখাপড়া করে বড় হবে। চাকরি করে একদিন সংসারের হাল ধরবে এমন স্বপ্ন ছিলো বাহাতি স্পিনার রকিবুল হাসানের বাবা শহিদুল ইসলামের। গাড়ি চালক বাবা সেই স্বপ্ন পূরণে সাধ্যমতো চেষ্টাও করছিলেন। ছেলেকে ভর্তি করেছিলেন রাজধানীর খিলগাঁও গভর্নমেন্ট হাই স্কুলে। তবে রকিবুলের আগ্রহ পড়ার টেবিলে ছিলনা; ছিল খেলার মাঠে।
স্থানীয় ক্রিকেট প্রশিক্ষক সোহেল রানা খিলগাঁও গভর্নমেন্ট হাই স্কুল মাঠে আগ্রহী খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ দিতেন। প্রশিক্ষণের খরচ সকলের চাঁদা দিয়ে মেটাতো। এমন সুযোগ হাতছাড়া করতে রাজি ছিলনা রকিবুল। বন্ধুর সহযোগিতায় সোহেল রানার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যুক্ত হলেন তিনি।
কিন্তু বিপত্তি অন্য জায়গায়। ক্রিকেট প্রশিক্ষণের জন্য টাকা দেবেনা বাবা। উল্টো জানতে পারলে চিরদিনের জন্য খেলাধুলা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই স্কুল আর প্রাইভেটের বেতন ১২০০ টাকা না দিয়ে সেই টাকার মাধ্যমে প্রশিক্ষণ একাডেমিতে ভর্তি হয় রকিবুল। তখন ২০১২ সাল। ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র এই বাহাতি স্পিনার।
প্রশিক্ষক সোহেল রানা জানান, খেলার প্রতি আগ্রহ থেকে স্থানীয় কয়েকজনকে প্রশিক্ষণ দিতেন তিনি। রকিবুল তাদেরই একজন। তার পারফরমেন্স ভালো দেখে ধানমন্ডির অংকুর একাডেমির কোচ ওয়াহেদুল গনির কাছে নিয়ে যান তিনি। এরপরে অংকুর একাডেমিতেই ভর্তি হয় সে।
এদিকে ছেলের নানা দুরন্তপনার খবর পৌঁছে যায় বাবা শহিদুল ইসলামের কাছে। ছেলেকে শাসন করেন তিনি। শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমি গাড়ি চালক। ছেলেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন আমার। তবে খেলার প্রতি তার এতো আগ্রহ আমাকে হতাশ করতো। একপর্যায়ে আমি আর বাধা দেইনি।’’
তবে শুরু থেকেই রকিবুলের পাশে ছিলেন তার মা রুমেলা বেগম। ছেলের ইচ্ছাই যেনো তার ইচ্ছা। তিনি বলেন, ‘‘আমি রকিবুলের খেলার জন্য সবসময় দোয়া করেছি। তার কাছে অনেক সময় খিলগাঁও থেকে ধানমন্ডি একাডেমি যাওয়ার ভাড়াও থাকতোনা। তার বাবা রাজি না থাকায় খেলার জন্য তাকে লুকিয়ে টাকা দিতাম। ওর প্রতি আস্থা ছিলো। এখন সে আমার সেই আস্থার সম্মান রেখেছে।’’
অংকুর একাডেমির কোচ ওয়াহেদুল গনি জানান, তার ছাত্র সোহেল রানার মাধ্যমে রকিবুল একাডেমিতে আসে। সে খেলার প্রতি অসম্ভব সিরিয়াস ছিলো। তার পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় সে জাতীয় দলে খেলার স্বপ্নে প্রচুর পরিশ্রম করতো।
অংকুর একাডেমিতেই কেন এসেছিলেন রকিবুল? এমন প্রশ্নে ওয়াহেদুল গনি বলেন, এখানে প্রশিক্ষণের জন্য কোনো টাকা নেওয়া হয়না। অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রচণ্ড ইচ্ছা শক্তির কারণে আজ রকিবুল সফল হয়েছে।
ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার কুড়িপাড়ায় জন্ম রকিবুল হাসানের। জন্মের তিন মাস পর তাকে নিয়ে ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে তার পরিবার। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে রকিবুল দ্বিতীয়।