‘ফিকা বললেই আমরা অপরাধী হয়ে গেলাম, এমন নয়’
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) প্রথম আসরের বেশ কয়েক মাস পর বিসিবিকে অস্বস্তিতেই ফেলে দিয়েছিল ক্রিকেটারদের অধিকার আদায়ের আন্তর্জাতিক সংগঠন ফেডারেশন অব ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (ফিকা)। ২০১২ বিপিএলে খেলা বিদেশি ক্রিকেটাররা পারিশ্রমিক না পাওয়ায় বিসিবিকে মামলার হুমকি পর্যন্ত দিয়েছিল আন্তর্জাতিক এই সংগঠনটি।
আবারও বিপিএলের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে ফিকা। সেটাও গত বিপিএলের নয়, তাদের অভিযোগ ২০১৮-১৯ বিপিএল খেলা ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক নিয়ে। এবার অবশ্য কেবল বিপিএলের কথাই বলা হয়নি। সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে ফিকা জানিয়েছে, ৬টি টুর্নামেন্টে ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক নিয়ে সমস্যা আছে। এর মধ্যে বিপিএল একটি।
এসব টুর্নামেন্টের ৩৪ শতাংশ ক্রিকেটার তাদের পারিশ্রমিক বুঝে পাচ্ছেন না। ফিকার প্রতিবেদনে উঠে আসা ৬টি টুর্নামেন্টের মধ্যে আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশগুলোর একমাত্র লিগ বিপিএল। বাকি ৫টি লিগ হলো কানাডার গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি, আবু ধাবি টি-টেন, কাতার টি-টেন, ইউরো টি-টোয়েন্টি স্ল্যাম ও মাস্টার্স চ্যাম্পিয়ন্স লিগ।
প্রথম দিকে বিপিএলে ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক নিয়ে সমস্যার শেষ ছিল না। আসর শেষ যাওয়ার কয়েক মাস পরও পারিশ্রমিকের জন্য বিসিবির দ্বারস্থ হতে দেখা যেতো ক্রিকেটারদের। সেই সমস্যা এখন অনেকটাই কমেছে। গত কয়েক আসরে এমন সমস্যা ছিল বলে দাবি বিসিবির পরিচালক ও বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য জালাল ইউনুসের।
জালাল ইউনুস বলেন, 'ফিকা যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তা পুরোপুরি সত্য নয়। কিছু ইস্যু হয়তো থাকতে পারে। আমাদের এখানে ড্রাফট ও ড্রাফটের বাইরের খেলোয়াড়দের খেলার সুযোগ আছে। ড্রাফটে থাকা খেলোয়াড়দের সঙ্গে কোনো রকম সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কারণ এই বিষয়টি বোর্ড পুরোপুরিভাবে দেখে।'
'আমরা তাদেরকে পুরোপুরি পারিশ্রমিক দিয়ে দেই। তবে ড্রাফটের বাইরের ক্রিকেটারদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে ফ্র্যাঞ্চাইজিরা। ফলে পেমেন্টের সমস্যা ড্রাফটের বাইরের দুই-একজন ক্রিকেটারের সঙ্গে হতে পারে! কিন্তু সেটা মোটেও অনেক বেশি নয়, সামান্য পরিমাণে হতে পারে।'
পারিশ্রমিকের ব্যাপারে কোনো ক্রিকেটার সাহায্য চাইলে বিসিবি সব ধরনের সহযোগিতা করবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, 'আমাদের কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। ফলে ফিকা বললেই আমরা অপরাধী হয়ে গেলাম, এমন নয়। কোনো খেলোয়াড় যদি আমাদের হস্তক্ষেপ চায়, আমার সাহায্য করব। কিন্তু কেউ আমাদের কাছে এ বিষয়ে কিছুই বলেনি। কেউ যদি বলে আমরা পাইনি, তাহলে আমার সহযোগিতা করব।'
জালাল ইউনুস বিসিবির দায় না দেখলেও বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরী কিছুটা দায় খুঁজে পাচ্ছেন। তিনি বলেন, 'এটা বিসিবির জন্য চিন্তার বিষয়। আমরা এটা গুরুত্বের নিচ্ছি। কারণ কোনো কোনো দিক থেকে বিসিবির ওপর দায়িত্ব বর্তায়। আমরা শুনেছি কয়েকটি দল ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক বুঝিয়ে দেয়নি। আমরা ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক পাওয়ার ব্যাপারটি নিশ্চিত করতে কাজ করছি।'
ক্রিকেট বিষয়ক ওয়েবসাইট ইএসপিএনক্রিকইনফো জানিয়েছে, ২০১৮-১৯ বিপিএলে নিকোলাস পুরান ও গুলবাদিন নাইবকে পুরোপুরি পারিশ্রমিক বুঝিয়ে দেয়নি সিলেট সিক্সার্স। উইন্ডিজ ব্যাটসম্যান পুরানের কর বাদে পাওয়ার কথা ছিল প্রায় ৩০ লাখ টাকা। কিন্তু তাকে মাত্র সাড়ে ৮ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সিলেট সিক্সার্সের কাছে এখনও ২৭ লক্ষ টাকা পাওনা ১১টি ম্যাচ খেলা গুলবাদিনের।
কেবল বিপিএলই নয়, আইসিসি থেকে পাওয়া প্রাইজমানিও ক্রিকেটারদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে ফিকার প্রতিবেদনে। যদিও বিসিবির প্রধান নির্বাহী বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, 'শুরুতে আমাদের কিছুটা দেরি হয়েছে, কিন্তু আমরা পুরোটা বুঝিয়ে দিয়েছি।'