ভালো ক্রিকেটারের সঙ্গে ভালো মানুষ তৈরি করতে চান ল-ওয়াসিম
বাংলাদেশের ক্রিকেটে কাজ করেছেন দুজনই। দুজনেরই অভিজ্ঞতা আছে বাংলাদেশ জাতীয় দলের সঙ্গে কাজ করার। স্টুয়ার্ট ল এবং ওয়াসিম জাফর; আবারও বাংলাদেশের ক্রিকেটে ফিরেছেন এ দুজন। সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিমদের সাবেক প্রধান কোচ স্টুয়ার্ট ল অনূর্ধ্ব-১৯ দলের প্রধান কোচ হয়ে বাংলাদেশে ফিরেছেন।
বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্টের কোচ হিসেবে বাংলাদেশে এসেছেন ওয়াসিম জাফর। তার কাজের পরিধি বেশ বড়। ভারতের হয়ে ৩১টি টেস্ট ও ২টি ওয়ানডে খেলা সাবেক এই ওপেনার অনূর্ধ্ব-১৯ দল নিয়ে কাজ করবেন। পাশাপাশি হাই পারফরম্যান্স ইউনিটও (এইচপি) দেখভাল করবেন জাফর। এ যাত্রায় ভালো ক্রিকেটার তৈরি পাশাপাশি ভালো মানুষও তৈরি করতে চান ল-ওয়াসিম।
স্টুয়ার্ট ল কয়েক পত্তনে বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে কাজ করেছেন। ২০১১-১২ মৌসুমে জাতীয় দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব নেন তিনি। তার তত্ত্বাবধানেই ২০১২ সালে প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপের ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। কিন্তু ৯ মাস দায়িত্ব পালন করে হঠাৎ-ই সরে দাঁড়ান অস্ট্রেলিয়ান এই কোচ। ২০১৬ সালে বাংলাদেশে ফেরেন ল। সে বছর ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের টেকনিক্যাল উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন তিনি।
এবার দীর্ঘমেয়াদে কাজ করবেন ল। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর রোববার প্রথম আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে ল বলেন, 'আবার ফিরে এসে ভালো লাগছে। আজ এখানে এসে কিছু পরিচিত, বন্ধুত্বপূর্ণ মুখ দেখতে পেলাম। অনেক ভালো স্মৃতি আছে এখানে। আমি অনেক প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করেছি বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায়।'
'সত্যি কথা বলতে, আন্তর্জাতিক দলের প্রধান কোচ হিসেবে খুব বেশি কোচিংয়ের সুযোগ থাকে না। কিন্তু এই দায়িত্বটা আমাকে উঠতি ক্রিকেটার নিয়ে কাজ করার সুযোগ এনে দেবে। যেখানে আমি পার্থক্য এনে দিতে পারব। শুধু একজন ক্রিকেটীয় সামর্থ্যে নয়, তরুণ ব্যক্তিত্ব গড়ার ক্ষেত্রেও সাহায্য করতে পারব। তাই সুযোগটা যখন এল, আমার জন্য হ্যাঁ বলা খুব সহজ ছিল।' যোগ করেন ল।
২০১৬ যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশের টেকনিক্যাল উপদেষ্টা ছিলেন ল। ওই দল থেকে উঠে আসা মেহেদী হাসান মিরাজ, নাজমুল হোসেন শান্ত ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনরা নিয়মিত জাতীয় দলে খেলছেন। এ নিয়ে গর্বের কথা জানিয়ে অস্ট্রেলিয়ান এই কোচ বলেন, 'আমি ২০১৬ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সঙ্গে কাজ করেছি। যেখানে মিরাজ, শান্তরা ছিল। এখন ওদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে দেখে আমার খুব ভালো লাগছে।'
অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়টা মানুষ গড়ার জায়গা জানিয়ে ল আরও বলেন, 'এটা যে শুধুই তরুণ ক্রিকেটার তৈরির জায়গা, তা কিন্তু নয়। আমি জানি যে এটা ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রাম, এটাই হওয়া উচিত মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু এটা মানুষ গড়ে তোলারও জায়গা। আমি মিরাজ-শান্তদের যখন দেখি, ওদের চেহারায় বিশাল হাসি দেখতে পারি। ওরা খুব গর্বিত নিজেদের পরিবার নিয়ে। ওরা এখন বিবাহিত। ওরা ক্ষুদে ক্রিকেটার থেকে শুরু করে এখন বড় হচ্ছে। ক্রিকেটে তো অবদান রাখছেই, ক্রিকেটের বাইরেও অনেক কিছু করেছে। এটাই আমি চাই।'
এর আগে বিসিবির ব্যাটিং পরামর্শক হিসেবে কাজ করা ওয়াসিম জাফরও ভাবছেন ল'-এর মতো করে। ভারতীয় এই কোচ বলেন, 'আপনি যখন অনেকদিন ধরে ক্রিকেট খেলেন, তখন অনেক কিছুই পরিষ্কারভাবে দেখতে পারেন এবং এ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারেন। তবে এখানে এটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। এই অনূর্ধ্ব-১৯ ছেলেদের প্রথমে তৈরি করা এবং পরের ধাপের জন্যও প্রস্তুত করা- এটা একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া। আশা করি আমরা দুজন এবং অন্য স্টাফরা মিলে তাদের ভালো ক্রিকেটার, ভালো মানুষ হিসেবে সামনে এগিয়ে নিতে পারব।'
নতুন কোচিং স্টাফের অধীনে রোববার থেকে শুরু হয়েছে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কার্যক্রম। ৪০ জন ক্রিকেটার নিয়ে মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হয়েছে ফিটনেস ক্যাম্প। বিকেএসপিতে আগামী ২৩ জুলাই শুরু হবে যুবাদের স্কিল ক্যাম্প, প্রায় তিন সপ্তাহ চলবে নেট অনুশীলন। প্রাথমিক স্কোয়াডের সদস্যদের নিয়ে অনুশীলন ম্যাচও হবে সেখানে।
প্রস্তুতি ম্যাচের পারফরম্যান্স দেখে বাছাই করা হবে অনূর্ধ্ব-১৯–এর মূল দল। আগামী নভেম্বরে পাকিস্তান সফর দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচ খেলা শুরু করবে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ এর নতুন দলটি। সফরে পাকিস্তান অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিপক্ষে পাঁচটি একদিনের ও একটি চার দিনের ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ যুব দল।