এই পাঁচ বিতর্কের জেরেই কী বিসিসিআই'র সভাপতির পদ ছাড়তে হচ্ছে সৌরভ গাঙ্গুলিকে?
এক ধাক্কায় ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিসিআই) প্রাক্তন হয়ে গেলেন সৌরভ গাঙ্গুলি। ১৮ অক্টোবর এজিএম-এ সরকারিভাবে সৌরভের বিদায় ঘোষণা করা হবে। সেই সাথে নতুন সভাপতি হিসেবে রজার বিনির হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়া হবে। বিসিসিআই-এর প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সৌরভকে ঘিরে তৈরি হয়েছে বেশকিছু বিতর্ক। অনেকের ধারণা, এসব বিতর্ক আর ভুল সিদ্ধান্তের জেরেই সভাপতির পদ ছাড়তে হচ্ছে সৌরভকে।
১. বিরাট কোহলির অধিনায়কত্ব ত্যাগ
গত বছরের শেষের দিকে বিরাট কোহলি টি-২০ ক্রিকেট দলের অধিনায়কত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর বোর্ডের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়, একদিনের ক্রিকেটের নেতৃত্বে রাখা হচ্ছে না কোহলিকে। এই ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সৌরভ গাঙ্গুলি এক বিবৃতিতে বলেন, একদিনের ক্রিকেটে অধিনায়কের পদ থেকে বিরাট কোহলিকে সরানোর সিদ্ধান্তটা বিসিসিআই এবং নির্বাচকমণ্ডলী একসঙ্গে গ্রহণ করেছে। বোর্ডের পক্ষ থেকে বিরাট কোহলিকে টি-২০ ক্রিকেট দলের অধিনায়কত্ব ছাড়তে মানা করা হয়েছিল। কিন্তু, সেকথা কানে তোলেননি বিরাট।
সৌরভ জানিয়েছিলেন, তিনি নিজে বিরাটকে টি-২০ ক্রিকেটের অধিনায়কত্ব না ছাড়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। তবে বিরাট সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দেন যে, টি-২০ অধিনায়কত্ব ছাড়ার আগে সৌরভের সঙ্গে তার কোনও কথা হয়নি। তার দাবি ছিল, 'আমি যে টি-২০ ক্রিকেট দলের অধিনায়কত্ব ছাড়ব, এটা সবার আগে বোর্ডকেই জানিয়েছিলাম। বিসিসিআই আমার এই সিদ্ধান্ত খুব ভালো ভাবেই গ্রহণ করেছিল। কারো কোনো সমস্যা ছিল না। আমাকে অধিনায়কত্ব না ছাড়ার ব্যাপারে কোনও পরামর্শ দেওয়া হয়নি। বরং আমার সিদ্ধান্তের প্রশংসা করা হয়েছিল।'
এই বিতর্কিত মন্তব্যের পর সৌরভকে নিয়ে যথেষ্ট সমালোচনা হয়েছিল। সর্বসমক্ষে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া ইস্যুতে কোহলি এবং সৌরভ প্রকাশ্যেই পরস্পরবিরোধী মন্তব্য করেছিলেন। যার জল অনেকদূর গড়ায়।
২. ঋদ্ধিমান সাহা বিতর্ক
চলতি বছরের শুরুতেই শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে ঋদ্ধিমান সাহাকে ভারতীয় ক্রিকেট দলে জায়গা দেওয়া হয়নি। দ্বিতীয় উইকেটকিপার হিসেবে কেএস ভরতকে নির্বাচন করা হয়েছিল। এই প্রসঙ্গে ঋদ্ধি নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি স্পষ্ট বলেছিলেন যে, দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেই রাহুল দ্রাবিড় তাঁকে নাকি অবসর গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি এও বলেছিলেন, নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৬১ রানের ইনিংস যখন ঋদ্ধি খেলেন, সেই সময়ে সৌরভ নাকি নিজে তাকে মেসেজ করে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন।
ঋদ্ধিমানের ভাষ্যে- সৌরভ তাকে বলেছিলেন, যত দিন তিনি বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট থাকবেন, ততদিন ঋদ্ধিমানকে ভারতীয় ক্রিকেট দলে জায়গা পাওয়া নিয়ে কোনও চিন্তা করতে হবে না। কিন্তু তারপর কেন সব কিছু বদলে গেল তা নিয়েও যথেষ্ট বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন ঋদ্ধি। এই নিয়েও কম জলঘোলা হয়নি। পরবর্তীতে সৌরভের চেয়ার সরাতে এই ঘটনাগুলোকেই বড় করে দেখানো হয়।
৩. দল নির্বাচনে হস্তক্ষেপ
সৌরভের দিকে আঙুল তোলার আরও একটি কারণ, ভারতীয় ক্রিকেট দল নির্বাচনের সময় বৈঠকে সৌরভ গাঙ্গুলির হস্তক্ষেপ নিয়ে অভিযোগ। সূত্রের খবর, সৌরভের ইচ্ছাতেই নাকি ভারতীয় ক্রিকেট দল গঠন করা হতো। যদিও সৌরভ নিজে এই অভিযোগ সবসময় অস্বীকার করে এসেছেন। কিন্তু তার একটি ছবিও ভাইরাল হয়েছিল, যেখানে ছবিতে অন্য নির্বাচকদের সঙ্গে টিম মিটিংয়ে সৌরভকেও দেখতে পাওয়া গিয়েছিল। যদি সৌরভ এই ছবির ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করবেন না বলেই জানিয়েছিলেন। কিন্তু এই বিতর্ক আখেরে তার পিছু ছাড়েনি।
৪. স্বার্থের সংঘাত
বোর্ড সভাপতি হিসেবে একাধিকবার কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট-এ জড়িয়েছেন মহারাজ। এন্ডোর্সমেন্ট সংক্রান্ত বিষয়ে তো বটেই, সৌরভ বোর্ড সভাপতি হয়েও একটা সময় পর্যন্ত এটিকে মোহনবাগানের বোর্ড মেম্বার ছিলেন। তবে প্রশ্ন ওঠার পর তিনি সেই পদ থেকে সরে দাঁড়ান। এছাড়াও জেএসডব্লিউ সিমেন্টের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডরও হন সৌরভ বোর্ড সভাপতি থাকাকালীন। দিল্লি ক্যাপিটালসের মতো একটি নির্দিষ্ট ফ্র্যাঞ্চাইজি গোষ্ঠীর মালিক পক্ষের হয়ে কী ভাবে বোর্ড সভাপতি ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডরের মতো ভূমিকা পালন করতে পারেন, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
বিসিসিআই সভাপতি থাকাকালীন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ফ্যান্টাসি অ্যাপ মাই ১১ সার্কেলের প্রোমোশন করেছিলেন। টুইটারে তিনি বেশ কয়েকবার এই ব্যাপারে লেখালেখিও করেছিলেন। ড্রিম ১১-এর সঙ্গেও বিসিসিআইয়ের চুক্তি রয়েছে। এক্ষেত্রে স্বার্থের সংঘাত ঘটেছে। এই ব্যাপারে সৌরভ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছিলেন।
৫. করোনাকালে আইপিএল আয়োজন
আইপিএলের বায়ো বাবল করোনার সময়ে কার্যত 'ফুটো' হয়ে গিয়েছিল। করোনার সময়ে দেশেই আইপিএল আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বোর্ড। তবে অচিরেই সেই সিদ্ধান্ত বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে। মাঝপথে আইপিএলে একাধিক ফ্র্যাঞ্চাইজিতে করোনার প্রকোপ বাড়তে থাকায় শেষমেশ স্থগিত করে দেওয়া হয় আইপিএল। শেষে বছরের শেষ দিকে আমিরশাহিতে বাকি আইপিএল আয়োজন করা হয়। এ ঘটনায় বোর্ডের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছিল। সৌরভকে সরাতে এই বিষয়গুলিকেই হাতিয়ার করেছিলেন এন শ্রীনিবাসন।