টাইব্রেকার রোমাঞ্চে নেইমারদের কাঁদিয়ে সেমিতে ক্রোয়েশিয়া
আগের ম্যাচের সেই দুর্বার ব্রাজিলকে দেখা গেল না। তবু আক্রমণে আধিপত্য বিস্তার করলো সেলেসাওরাই। সেই আক্রমণ রুখে মাঝে মাঝে হানা দিলো গোলরক্ষক ডমিনিক লিভাকোভিচতে নিয়ে রক্ষণভাগে দেয়াল তোলা ক্রোয়েশিয়াও। জালের ঠিকানা খুঁজে পেলো না কোনো দলই। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
এখানকার খেলার প্রথম অর্ধে চোখ ধাঁধানো এক গোলে ব্রাজিলকে এগিয়ে নিলেন নেইমার। বসে থাকলো না ক্রোয়েশিয়াও। পরের অর্ধে জাল খুঁজে নিয়ে দলকে সমতায় ফেরালেন ব্রুনো পেতকোভিচ। সমতায় থাকায় সামনে এলো টাইব্রেকার রোমাঞ্চ। যে রোমাঞ্চকর অধ্যায়ে আবারও দেয়াল তুললেন লিভাকোভিচ। পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে স্বপ্নের জয়ে সেমি-ফাইনালে উঠে গেলো ক্রোয়েশিয়া।
শুক্রবার কাতারের এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে কোয়ার্টার ফাইনালে পেনাল্টি শুট আউটে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলকে ৪-২ গোলে হারিয়েছে ক্রোয়েশিয়া। দম বন্ধ করা ম্যাচে জয় ছিনিয়ে নিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের শেষ চারে উঠলো তারা। ব্রাজিলকে এগিয়ে নেওয়া গোলে নেইমার ছুঁয়ে ফেলেন কিংবদন্তি পেলেকে। ব্রাজিলের হয়ে দুজনেরই এখন ৭৭ গোল, যা দেশটির ইতিহাসের সর্বোচ্চ। কিন্তু তার মাইলফলক ছোঁয়া গোল বাঁচাতে পারলো না ব্রাজিলকে।
টাইব্রেকার রেকর্ড পক্ষেই ছিল ক্রোয়েশিয়ার। বিশ্বকাপে পেনাল্টি শুট আউটে শতভাগ সাফল্য ছিলো ইউরোপের দেশটির। ২০১৮ বিশ্বকাপে দুটি টাইব্রেকার জেতা ক্রোয়েশিয়া এবার জাপানকে পেনাল্টি শুট আউটে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে। শেষ আটেও সাফল্যের ধারা ধরে রাখলো বিশ্বকাপের বর্তমান রানার্স-আপরা। এ নিয়ে টানা চারটি টাইব্রেকারে জিতলো লুকা মদ্রিচ-ইভান পেরিসিচদের দল।
পেনাল্টি শুট আউটে ক্রোয়েশিয়ার হয়ে গোল করেন নিকোলা ভ্লাসিচ, লভরো মাইয়ের, লুকা মদ্রিচ মদ্রিচ ও মিসলাভ অরসিচ। প্রথম শট নেয় ক্রোয়েশিয়া, দারুণ শটে লক্ষ্যভেদ করেন নিকোলা ভ্লাচিচ। ব্রাজিলের হয়ে প্রথম শট নেওয়া রদ্রিগোর শট ঝাঁপিয়ে ফেরান লিভাকোভিচ। ক্রোয়েশিয়ার দ্বিতীয় শট নেওয়া মাইয়ের জালের ঠিকানা পান।
ব্রাজিলের দ্বিতীয় শট নেওয়া কাসেমিরোও গোল করেন। গোলের ধারা জারি রেখে তৃতীয় শট নেওয়া মদ্রিচ জালে বল পাঠান। গোল পান ব্রাজিলের পেদ্রোও। চতুর্থ শটে ক্রোয়েশিয়ার অরসিচ গোল করলেও ব্রাজিলের মার্কিনিয়োসের শট বারে লেগে ফিরে আসে। সঙ্গে সঙ্গে উল্লাসে মেতে ওঠে ক্রোয়েশিয়া। অন্য প্রাশে তখন যেন মৃত্যুপূরী। মাঠের মাঝে দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন নেইমার, আন্তিনো, রদ্রিগোরা।
পুরো ম্যাচে সমানে সমান লড়াই হয়। আধিপত্য ধরে রেখে অনেক আক্রমণ সাজালেও ক্রোয়েশিয়ার রক্ষণ ভেদ করে একবারের বেশি জালেরন ঠিকানা করে নিতে পারেনি ব্রাজিল। রক্ষণভাগকে এর কৃতিত্ব দিতেই হবে, তবে সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব গোলরক্ষক লিভাকোভিচের। টাইব্রেকারে ব্রাজিলের একটি শট ফেরানোর আগে ১২০ মিনিটে বেশ কয়েকবার দলকে বিপদমুক্ত করেন তিনি। অসাধারণ দক্ষতায় কয়েটি অবিশ্বাস্য সেভ করেন তিনি।
ম্যাচে বল দখলে দুই দলই কাছাকাছি ছিল। সাম্বার সেই ছন্দ না থাকলেও ৪৯ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে অনেকগুলো আক্রমণ সাজায় ব্রাজিল। গোলমুখে তারা ২১টি শট নেয়, এর মধ্যে ১১টি ছিল লক্ষ্যে। কিন্তু ক্রোয়েশিয়ার রক্ষণ দেয়াল ও লিভাকোভিচের বাধায় বারবার পরাস্থ হয় চেষ্টা। আক্রমণ রুখে হানা দেওয়া ক্রোয়েশিয়ার নেওয়া ৯টি শটের একটি লক্ষ্যে ছিল, সেটাতেই মেলে জালের ঠিকানা।