আর্জেন্টিনার সঙ্গে যোগাযোগই হয়নি বাফুফের?
আগামী জুনে বাংলাদেশে আসছে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা; এমন খবরে বাংলাদেশের সবখানে শোরগোল। টিকেটের মূল্য কতো হতে পারে, এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। গ্যালারিতে বসে লিওনেল মেসিকে দেখার পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন তার বাংলাদেশি ভক্তরা। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আসলেই কি বাংলাদেশে আসছে আর্জেন্টিনা? কিংবা লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের দেশটির সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে বাফুফের?
উত্তরে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের বক্তব্য হতে পারে 'রেফারেন্স।' একদিন আগেই তিনি জানিয়েছেন, আর্জেন্টিনার বাংলাদেশ সফরে আসার ব্যাপারটি প্রায় চূড়ান্ত। কিছু 'টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন'- এর আলোচনায় দুই পক্ষের মিলে গেলেই মেসিরা বাংলাদেশে আসবেন।
আর্জেন্টিনা জুনে আসতে চায় জানিয়ে বাফুফে প্রধান বলেছেন, 'প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গেছে আর্জেন্টিনার প্রস্তাবিত সফর। কিছু টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন নিয়ে আলোচনা চলছে। জুনের ফিফা উইন্ডোতে আসতে চায় বলে আমাদের জানিয়েছে তারা। টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনে সমস্যা না হলে আগামী জুনে আর্জেন্টিনা বাংলাদেশে আসবে, এটা বলাই যায়।'
প্রতিপক্ষ চূড়ান্ত না হলেও ভেন্যু ঠিক করে ফেলেছেন কাজী সালাউদ্দিন। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার কাজ চলা বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের কাজ সম্পন্ন হতে অনেক দেরি থাকলেও ম্যাচটি এখানেই হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। আগামী পাঁচ মাসের মধ্যে সব কাজ সম্পন্ন করতে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে (এসএসসি) চিঠি দিয়েছে বাফুফে। কাজী সালাউদ্দিনের দাবি অনুযায়ী ইতিবাচক সাড়াও মিলেছে।
বাফুফে সভাপতির ভাষ্য, 'ম্যাচটি বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হবে। জরুরি ভিত্তিতে সব করে দিতে আমরা আজ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে চিঠি দিয়েছি, তারা রাজি হয়েছে। তাদের কোচের সঙ্গে আলোচনা করে কয়েকটি দেশের নাম আমাদের দেবে আর্জেন্টিনা। এরপর আমরা নামগুলো নিয়ে কাজ করে একটি দেশ ঠিক করব।'
অর্থাৎ, শর্তাবলীর পাশাপাশি কেবল প্রতিপক্ষ চূড়ান্ত করাই বাকি। আর্জেন্টিনার পছন্দ জেনে সেটাও করে ফেলা যাবে বলে জানিয়েছেন কাজী সালাউদ্দিন। আর্জেন্টিনাকে বাংলাদেশে নিয়ে আসার প্রসঙ্গে বাফুফে সভাপতির এমন বক্তব্যে অবশ্য অবাক হওয়ার কিছু নেই। মেসিদের ঢাকায় এনে খেলানোর অভিজ্ঞতা তো বাফুফের আছেই। ২০১১ সালে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই নাইজেরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ খেলেছিলেন মেসি-দি মারিয়ারা।
আবার বাংলাদেশে আসছেন মেসিরা; এমন খবর তাই বিশ্বাসযোগ্য হিসেবেই ধরে নিয়েছেন সবাই। তবে বাফুফে সভাপতির এমন বক্তব্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে বাংলাদেশের ফুটবল অনুরাগীদের মাঝে। অনেকেই রোমাঞ্চের কথা জানাচ্ছেন, অনেকেই বাফুফেকে তুলছেন কাঠগড়ায়। কিছু হলেই 'টাকা নেই' বলা বাফুফে কাড়ি কাড়ি অর্থের বিনিময়ে আর্জেন্টিনাকে ঠিক কী কারণে দেশে আনার পরিকল্পনা করছে, সেই প্রশ্নে সয়লাব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম।
এই প্রশ্ন যখন চলমান, তখনই অবশ্য 'কৌশল' পরিবর্তন করেছে বাফুফে। আর্জেন্টিনাকে বাংলাদেশে আনার পরিকল্পনার বিস্তারিত জানাতে সংবাদ সম্মেলন ডাকে দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। কিন্তু বুধবার সকালে তা স্থগিত করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'অদ্য ১৮-০১-২০২৩ তারিখ বুধবার দুপুর ২:৩০ ঘটিকার বাফুফের পূর্বনির্ধারিত প্রেস ব্রিফিংটি অনিবার্য কারণবশত অনুষ্ঠিত হচ্ছে না, বিধায় আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।'
প্রবল সমালোচনার মুখে পিছু হটলো বাফুফে নাকি অন্য কারণ? অনিবার্য কারণটা তবে কী? হতে পারে আর্জেন্টিনার সঙ্গে কোনো রকম যোগাযোগই হয়নি বাফুফের! এটা অবশ্য পুরোপুরি ধারণা নয়, আর্জেন্টিনার বিখ্যাত টেলিভিশন টিওয়াইসি স্পোর্টসের জনপ্রিয় এক সাংবাদিকের দাবি এটা।
গাস্তন এদুল নামের আর্জেন্টাইন এই সাংবাদিক তার টুইটে লিখেছেন, 'জুনে খেলার বিষয়ে আর্জেন্টিনা ও বাংলাদেশের মধ্যে কোনো আলোচনা নেই। কোচ হিসেবে লিওনেল স্কালোনির থাকা না থাকার বিষয়টি নিষ্পত্তির আগে কোথাও পা বাড়াবে না আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এএফএ)। এবং মার্চ পর্যন্ত ম্যাচ না খেলার সিদ্ধান্ত আর্জেন্টিনার কাছে সর্বোচ্চ গুরুত্বের।'
আর্জেন্টিনার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে কিনা, এ ব্যাপারে জানতে বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাড়া দেননি। ফোন রিসিভ করেননি বাফুফের এই কর্মকর্তা। আর্জেন্টিনা-বাফুফের আলোচনা হোক আর না হোক, বিশাল অঙ্কের অর্থ ব্যয়ে মেসিদের এনে বাফুফের ম্যাচ আয়োজনের এই পরিকল্পনাতেই অনেকে নাখোশ।
দেশের ক্রীড়ামোদীদের বড় একটি অংশ বাফুফের এমন আয়োজনের বিপক্ষে, যে কারণে সবখানেই সমালোচনা। আর এই সমালোচনাকে হয়তো যুক্তিযুক্ত বলারও সুযোগ আছে। কারণ গত বছরই মেয়েরা সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে দেশে ফেরার পর সংবর্ধনা ও পুরস্কারের প্রশ্নে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন বলেছিলেন, 'আমাদের টাকা নেই।' সেই বাফুফেই বিপুল অর্থ ব্যয়ে আর্জেন্টিনাকে দেশে এনে খেলালে বাংলাদেশের ফুটবলের কী উন্নতি হবে, এমন প্রশ্ন রাখছেন প্রায় সবাই।