ইফতিখার-সাকিবের বিশ্বরেকর্ড গড়ার ম্যাচে বরিশালের দাপুটে জয়
টপ অর্ডারের ব্যর্থতায় ৪৬ রানেই নেই চার উইকেট, ফরচুন বরিশাল তখন মাঝ দরিয়ায়। অমন সময়ে দলটি মাঝি পেল, তাও আবার দুজন। ইফতিখার আহমেদ ও সাকিব আল হাসান; দুঃসময়ে হাল ধরা এ দুজনকে আর দমানোই গেল না। চট্টগ্রামের সাগর পাড়ের স্টেডিয়ামে ব্যাট হাতে ঝড় তুলে দুইশ ছুঁই ছুঁই জুটিতে তারা গড়লেন বিশ্বরেকর্ড, হলো আরও কয়েকটি রেকর্ড। তাতে বিশাল সংগ্রহ পেল বরিশাল, যার ধার কাছেও যেতে পারলো না রংপুর রাইডার্স।
বৃহস্পতিবার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ব্যাটে-বলে শাসন করে রংপুরকে ৬৭ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে ফরচুন বরিশাল। চলমান বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) সাকিবের দলের এটা চতুর্থ জয়। পাঁচ ম্যাচের চারটিতে জিতে ৮ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার দুই নম্বরে আছে বরিশাল। এই ম্যাচে হার মানা রংপুর পাঁচ মাচে দুটিতে জিতে ৪ পয়েন্ট নিয়ে চার নম্বরে আছে।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামে ফরচুন বরিশাল। দুঃস্বপ্নের শুরু করা দলটি ৫০ রানের আগেই চার উইকেট হারিয়ে অন্ধকারে পড়ে যায়। সেখান থেকে দলকে টেনে তুলে ঝলমলে আলোর পথে নিয়ে যান ইফতিখার ও সাকিব। অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরি করা ইফতিখার ও ৯০ ছুঁইছুঁই ইনিংস খেলা সাকিবের রেকর্ড জুটিতে ৪ উইকেটে ২৩৮ রান তোলে বরিশাল। জবাবে বিশাল লক্ষ্য পাড়ি দেওয়ার মতো ব্যাটিং করতে পারেননি রংপুরের কেউই, ৯ উইকেটে ১৭১ রানে থামে তাদের ইনিংস।
পঞ্চম উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ১৯২ রানের জুটি গড়েছেন ইফতিখার-সাকিব। এই জুটি গড়ার পথে ব্যক্তিগত, জুটি ও দলগত কয়েকটি রেকর্ড গড়েছেন তারা। জুটিটি পঞ্চম উইকেটে কেবল বিপিএলেরই সেরা নয়, টি-টোয়েন্টি ইতিহাসেরই সেরা। আগের সর্বোচ্চ ছিল ১৭১ রানের। ২০২০ সালে ইংল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টে বার্মিংহামের হয়ে নর্থ্যাম্পটনশায়ারের বিপক্ষে পঞ্চম উইকেটে ১৭১ রানের জুটি গড়েন অ্যাডাম হোস ও ড্যান মুজলি।
বিপিএলে পঞ্চম উইকেটে এতোদিন সেরা জুটি ছিল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের। চাডউইকট ওয়ালটন ও মেহেদী হাসান মিরাজ ১১৫ রানের জুটি গড়েছিলেন। বিপিএলে যেকোনো উইকেটে ইফতিখার-সাকিবের জুটিটি তৃতীয় সর্বোচ্চ। ২০১৭ আসরে দ্বিতীয় উইকেটে ২০১ রানের জুটি গড়েন ক্রিস গেইল ও ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, যা সেরা। ২০১৩ সালের আসরে উদ্বোধনী জুটিতে ১৯৭ রান তোলেন লু ভিনসেন্ট ও শাহরিয়ার নাফীস, এই জুটিটি আছে দুই নম্বরে।
রেকর্ড জুটি গড়ার পথে বরিশালকে যে রান পাহাড়ে চড়ান তারা, এটা বিপিএলের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। মাত্র ২ রানের জন্য ইতিহাস গড়য় হয়নি বরিশালের। বিপিএলে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ডটি রংপুরের। ২০১৯ বিপিএলে চিটাগং ভাইকিংসের বিপক্ষে ৪ উইকেটে ২৩৯ রান তোলে তারা। বিপিএলের পরের আসরে ৪ উইকেটে ২৩৮ রান তোলে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। এবার বরিশালও ৪ উইকেটেই তুলো ২৩৮ রান।
দলের বিশাল সংগ্রহ, জুটিতে রেকর্ড গড়ার দিনে ইফতিখার ও সাকিবও ছাড়িয়ে গেছেন নিজেদের। চোখ ধাঁধানো ব্যাটিংয়ে ৪৫ বলে ৬টি চার ও ৯টি ছক্কায় ১০০ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেন ইফতিখার। পাকিস্তানের ডানহাতি এই ব্যাটসম্যানের এটাই টি-টোয়েন্টিতে প্রথম সেঞ্চুরি। তার সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ছিল ৯০। এদিন ২৯ বলে হাফ সেঞ্চুরি করা অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান পরের ৫০ রান করেন মাত্র ১৬ বলে।
এবারের বিপিএলে এখন পর্যন্ত ৩টি সেঞ্চুরি হয়েছে, সবগুলোই করেছেন পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান। প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে সেঞ্চুরি করেন ঢাকা ডমিনেটর্সের আজমন খান। ওই ম্যাচেই দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে ম্যাচ জেতার আরেক পাকিস্তানি উসমান খান। তবে একটি জায়গায় ইফতিখার অনন্য। চার নম্বরের নিচে নেমে বিপিএলের ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে সেঞ্চুরি করেছেন তিনি।
৪৩ বলে ৯টি চারও ৬টি ছক্কায় ৮৯ রানে অপরাজিত থাকেন এবারের বিপিএলে ব্যাট হাতে দুর্বার ছন্দে থাকা সাকিব। ফরচুন বরিশালের অধিনায়কেরও এটা টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস। তার আগের সর্বোচ্চ ছিল ৮৬ রান। ২০১২ সালে বিপিএলের প্রথম আসরে খুলনা রয়্যাল বেঙ্গলসের হয়ে ইনিংসটি খেলেন বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার।
বিপিএলের এবারের আসরে ৫ ম্যাচে ৪ ইনিংসে ১৯৯.১৮ স্ট্রাইক রেটে ২৪৫ রান করেছেন সাকিব, যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। ইফতিখার-সাকিবের শাসনের দিনে এনামুল হক বিজয় ১৪ ও মেহেদী হাসান মিরাজ ২৪ রান করেন। ইব্রাহিম জাদরান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ রানের খাতা খুলতে পারেননি। রংপুরের হাসান মাহমুদ ও হারিস রউফ ২টি করে উইকেট নেন।
বিশাল লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নামা রংপুরকে লম্বা সময় ধরে পথ দেখাতে পারেননি কেউ-ই। পঞ্চাশ রানের গন্ডিও পেরোতে পারেননি তাদের কোনো ব্যাটসম্যান। ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ২৪ বলে ৩টি চার ও ৪টি ছক্কায় ইনিংস সেরা ৪৪ রান করেন শামীম হোসেন পাটোয়ারী। এ ছাড়া সাইম আইয়ুব ১৮, অধিনায়ক শোয়েব মালিক ১০, নাঈম শেখ ৩১, মোহাম্মদ নওয়াজ ৩৩ ও রবিউল হক ১৩ রান করেন। বরিশালের মিরাজ ৩টি এবং মোহাম্মদ ওয়াসিম ও কামরুল ইসলাম রাব্বি ২টি করে উইকেট নেন।