উদীয়মান ফুটবল তারকা থেকে নরসুন্দর - অপু সরকারের দুর্ভাগ্যের গল্প
মাত্র ১৬ বছর বয়সে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের ফাইনালে দলকে চ্যাম্পিয়ন করার সাথে দুটি গোলও করেছিলেন অপু সরকার। মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে সেই অপুর হাতেই কাঁচি-ব্লেড, কাজ করেন নরসুন্দর হিসেবে!
মাত্র ২১ বছর বয়স, পাবনার সুজানগরের একটি সেলুনে নরসুন্দরের কাজ করেন অপু। আর স্মৃতি রোমন্থন করেন তার সোনালি অতীতের।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের একটি বিশেষ সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে কীভাবে ভবিষ্যতের ফুটবল তারকা হওয়ার রাস্তা থেকে ছিটকে পড়ে এখন নাপিতের কাজ করছেন অপু সরকার।
বাংলাদেশের ফুটবলের উদীয়মান তারকা
'মাঝমাঠের খেলোয়াড় হয়েও সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়াটা আমার কাছে স্বপ্নের চেয়েও বেশি কিছু ছিলো', বলেন অপু। 'কেবল ফাইনালেই আমি দুটি গোল করেছি, সাথে দুটি গোলে সহায়তাও করেছি। ১৭ বছর বয়সেই এমন অর্জন আমার ভেতর পেশাদার ফুটবলার হওয়ার ইচ্ছা জাগায়। আমার আইডল মেসি, আমি নিজের খেলায় তার ছাপ রাখতে চেষ্টা করি।' বর্তমানে, এই স্বপ্ন এখন ধূলিসাৎ।
জীবনের চরম বাস্তবতা
ফুটবলার হতে চাওয়ার ইচ্ছার পেছনে আছে এক সংগ্রামের গল্প, যা অনেকেরই বিশ্বাস হবে না। অপুর পরিবার আর্থিকভাবে স্বচ্ছল নয়, 'আমার বাবা, একজন অফিস ক্লার্ক। আমাদের মৌলিক চাহিদাই যেখানে পূরণ হতো না সেখানে একজোড়া ফুটবল বুট কেনা আমার জন্য বিলাসিতাই বটে।'
বাবার হঠাৎ মৃত্যুতে যেন আকাশ ভেঙে পড়ে অপুর মাথায়। পরিবারের ভরণপোষণের সব দায়িত্ব এসে পড়ে কিশোর অপুর কাঁধে, 'এটা খুবই কঠিন একটা সিদ্ধান্ত ছিলো। কিন্তু আমার স্বপ্নকে বিসর্জন দিতে হয় কারণ আমার পরিবারের ক্ষুধা নিবারণ করা ছিলো আমার কাছে সবার আগে।'
সহযোগিতা ও অবকাঠামোর অভাব
একজন গোল্ডেন বুট জয়ী তরুণ ফুটবলারের যতোটা মনোযোগ পাওয়া উচিত সেটি অপু কেন পাননি তা অবাক করার মতোই বিষয়। অপু আক্ষেপ করলেন, 'চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ফেডারেশনের আমাদের যেমন সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা তা কিছুই পাইনি। যেন তারা আমাদের কথা ভুলেই গিয়েছে। ফেডারেশন একটু তাকালেই হয়তো আজকে আমার এমন অবস্থা হয় না।'
বাংলাদেশের ফুটবলের প্রেক্ষাপট কীভাবে পরিবর্তিত হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে অপু নিজের ভাবনা জানালেন, 'অবকাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তন দরকার। প্রতিটি জেলায় ভালো মাঠ এবং ভালো কোচ প্রয়োজন। আমাদের যথেষ্ট মেধাবী খেলোয়াড় রয়েছে, তাদেরকে ঠিকভাবে পরিচর্যা জরুরি।'