হিসাবের গরমিলে আফগানদের স্বপ্নভঙ্গ, সুপার ফোরে শ্রীলঙ্কা
হিসাবের গরমিলই বলতে হবে। কারণ শ্রীলঙ্কার ইনিংসের পর হিসাবটা জানাই ছিল আফগানিস্তানের। সুপার ফোরে উঠতে কতো ওভারের মধ্যে লক্ষ্য পাড়ি দিতে হবে, তা জেনেই ব্যাটিং করতে নামে আফগানরা। কিন্তু পুরনো হিসাব যে শেষ বেলায় পাল্টেছে বা তখনও সুযোগ ছিল, তা জানাই হয়নি তাদের। একেবারে কাছে গিয়ে হিসাবের ভুল, যে ভুল আর শুধরানো যায়নি। রোমাঞ্চকর লড়াইয়ের পর আফগানদের সঙ্গী হলো হার, ছিটকে যেতে হলো এশিয়া কাপ থেকে।
মঙ্গলবার লাহোরে উত্তেজনায় ঠাসা ম্যাচে আফগানিস্তানকে ২ রানে হারিয়ে সুপার ফোরে উঠেছে শ্রীলঙ্কা। দুই ম্যাচই জিতে সুপার ফোরে উঠলো লঙ্কানরা। অথচ তাদের শ্রীলঙ্কা না হলে সুপাের ফোরে ওঠা দলটির নাম হতে পারতো আফগানিস্তানও। বড় লক্ষ্য নির্দিষ্ট ওভারের মধ্যে পাড়ি দিতে নেমে সফলেই হয়ে গিয়েছিল তারা, কিন্তু শেষ দিকে হিসেবের গরমিলে তা আর হলো না। স্বপ্নভঙ্গের হতাশায় ডুবে বিদায় নিতে হলো রশিদ-নবীদের।
টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নেমে পাথুম নিসাঙ্কা, দিমুথ করুনারত্নে, কুশল মেন্ডিস, চারিথ আসালাঙ্কাদের ব্যাটে ৮ উইকেটে ২৯১ রান সিংগ্রহ করে শ্রীলঙ্কা। এই গ্রুপের আরেক দল বাংলাদেশও একটি জয় পাওয়ায় আফগানদের সানে ছিল রান রেটের হিসাব নিকাশ। সুপার ফোরে যেতে ৩৭.১ ওভারের মধ্যে জিততে হতো আফগানদের। কিন্তু দারুণ লড়াই করা দলটি ৩৭.৪ ওভারে ২৮৯ রানে অলআউট হয়ে যায়।
৩৭.১ ওভার শেষেও আফগানদের জেতার সুযোগ ছিল। কিন্তু তারা সেটা হয়তো জানতোই না। জানলে ব্যাটিংয়ের ধরন নিশ্চয়ই অন্যরকম হতো। ড্রেসিং রুম থেকে মাঠে কোনো বার্তা পাঠানো হয়নি। ৩৭.১ ওভারের মধ্যে জয় নিশ্চিত না হওয়ার পর ব্যাটিং করতে থাকা রশিদ খানের শারীরিক ভাষা বলে দিচ্ছিল, তাদের সুপার ফোরে ওঠার আশা শেষ হয়ে গেছে। ধারাভাষ্যকাররা এমনই বলছিলেন।
অথচ ৩৭.১ ওভারে মুজিব-উর-রহমান আউট হওয়ার পরও সুপার ফোরে ওঠার সুযোগ ছিল আফগানিস্তানের। সেক্ষেত্রে ২৯২ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নামা আফগানদের ৩৭.৪ ওভারের মধ্যে করতে হতো ২৯৫ রান। রান রেটের হিসাবটা পুষিয়ে নিতে এই সমীকরণ মেলাতে হতো তাদের। আবার ম্যাচ টাই হলে (২৯১ রান হলে) ছক্কা মেরে হিসাব মেলানোর সুযোগ ছিল ৩৮.১ ওভার পর্যন্ত। কিন্তু হিসাব না জানায় নিজে বড় শট খেলা বা সিঙ্গেল নিয়ে রশিদকে স্ট্রাইক দেওয়ার কোনো চেষ্টাই করেননি ফজল হক ফারুকী।
৩৭.১ ওভারে ২৯২ রানের লক্ষ্য পাড়ি দেওয়া, কাজটা কঠিনই ছিল। সুপার ফোরের স্বপ্নে বিভোর আফগানরা এই পথও পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কয়েকজন ব্যাটসম্যানদের দারুণ লড়াইয়ে স্বপ্ন পূরণ হয়েই যাচ্ছিল, কিন্তু শেষের ভুলে তা আর হলো না। কঠিন এই কাজটি অনেকটাই সহজ করে দেন মোহাম্মদ নবী। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ৩২ বলে ৬টি চার ও ৫টি ছক্কায় ৬৫ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন।
ঝড় তোলেন করিম জানাতও, ১৩ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় ২৩ রান করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত চেষ্টা চালানো রশিদ ১৬ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় ২৭ রানে অপরাজিত থাকেন। ১৫ বলে একটি চার ও ২টি ছক্কায় ২৩ রান করেন নাজিবুল্লাহ জাদরান। শুরুর দিকে গুলবাদিন নাঈব ১৬ বলে করেন ২২ রান। রহমত শাহ ৪০ বলে ৫টি চার ও একটি ছক্কায় ৪৫ ও অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহিদি ৬৬ বলে ৩টি চার ও একটি ছক্কায় ৫৯ রান করেন। শ্রীলঙ্কার কাসুন রাজিথা ৪টি উইকেট নেন। ২টি করে উইকেট পান দুনিথ ভেলালাগে ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। একটি করে উইকেট নেন মাহেশ থিকসানা ও মাথিশা পাথিরানা।
এর আগে ব্যাটিং করা শ্রীলঙ্কার পক্ষে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলেন কুশল মেন্ডিস। ৮৪ বলে ৬টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৯২ রান করেন ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতা লঙ্কান এই ব্যাটসম্যান। এ ছাড়া নিসাঙ্গা ৪১, করুনারত্নে ৩২, আসালাঙ্কা ৩৬, ভেলালাগে অপরাজিত ৩৩ ও থিকসানা ২৮ রান করেন। আফগানিস্তানের গুলবাদিন ৪টি ও রশিদ ২টি উইকেট নেন। একটি উইকেট পান মুজিব।