সৌম্যর দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের লড়াকু সংগ্রহ
টানা সুযোগ পেয়েও কিছু করতে না পারায় জাতীয় দলে তিনি অনিয়মিত। ঘরোয়া ক্রিকেটেও ব্যাটে রান নেই। কেবল চান্দিকা হাথুরুসিংহের চাওয়াতে নিউজিল্যান্ড সফরে বাংলাদেশ দলে জায়গা হয়েছে সৌম্য সরকারের, যা নিয়ে বেশ সমালোচনা হয়। প্রথম ওয়ানডে দিয়ে শিষ্য আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি বলে প্রধান কোচ জানান, সৌম্যর কোথায় সমস্যা, তা জানেন না তিনি। প্রবল চাপের মুখে অবশেষে জ্বললো সৌম্যর ব্যাট। কোচের এমন মন্তব্যের পরের দিনই দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান খেললেন ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস, বাংলাদেশ পেল লড়াকু সংগ্রহ।
বুধবার নেলসনের স্যাক্সটন ওভালে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে সৌম্যর সেঞ্চুরিতে ২৯১ রান তুলেছে বাংলাদেশ। লড়াকু সংগ্রহ তোলার পরও আছে আক্ষেপ। ওয়ানডেতে দেশের পক্ষে সৌম্য দ্বিতীয় সেরা ইনিংস খেলার দিনও পুরো ৫০ ওভার ব্যাটিং করতে পারেনি দল, অন্যরা একই সুরে পা ফেলতে না পারায় মেলেনি বড় সংগ্রহও। যদিও নিউজিল্যান্ডের মাটিতে তাদের বিপক্ষে এটাই বাংলাদেশের সেরা সংগ্রহ। আগের সেরা ছিল ২৮৮, ২০১৫ সালে।
ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে শেষ ওভারে আউট হন সৌম্য, মাঝে দলকে এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি বাঁহাতি এই ওপেনার খেলেন মাস্টারক্লাস এক ইনিংস। যে ইনিংস নতুন করে মনে করিয়ে দিয়েছে তার ব্যাটিং সামর্থ্যের কথা, অপার সম্ভাবনা নিয়ে বাংলাদেশ দলে যাত্রা শুরু সেই গল্পের কথা। ১৫১ বলে ২২টি চার ও ২টি ছক্কায় ১৬৯ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলেন সৌম্য, বাংলাদেশের ইনিংসের অর্ধেকেরও বেশি রান তিনি একাই করেছেন। ইনিংসে সর্বোচ্চ চার মারার রেকর্ডটি এখন তার, বাংলাদেশের আর কেউ ২০টি চারও মারতে পারেননি।
নিজেকে ফিরে পাওয়ার দিন রেকর্ড বইয়ে জায়গা করে নিয়েছেন বাংলাদেশের এই ব্যাটসম্যান। সৌম্যর খেলা ইনিংসটি বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, যেকোনো ফরম্যাটে তার সর্বোচ্চ। ওয়ানডেতে দেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলার রেকর্ডটি নিজের দখলে রেখেছেন লিটন কুমার দাস। ২০২০ সালে মার্চে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৪৩ বলে ১৬টি চার ও ৮টি ছক্কায় ১৭৬ রানের রেকর্ড গড়া ইনিংস খেলেন তিনি। ১৫৮ রান নিয়ে তিন নম্বরে অভিজ্ঞ ওপেনার তামিম ইকবাল।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুটা ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। শুরুতে তোপ দাগা নিউজিল্যান্ডের পেসার জ্যাকব ডাফির শিকারে পরিণত হয়ে দলীয় ১১ রানেই ফিরে যান ওপেনার এনামুল হক বিজয়। দলীয় ৩৬ রানে থামেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। ৪৪ রানে লিটন কুমার দাস ফিরলে অন্ধকারেই পড়ে যায় সফরকারীরা। তবে একপাশ আগলে খেলে যেতে থাকেন সৌম্য। চতুর্থ উইকেটে তাওহিদ হৃদয়ের সঙ্গে ৩৬ রানের জুটি গড়েন তিনি। ১২ রান করে আউট হন হৃদয়।
এরপর ইনিংসের সবচেয়ে বড় জুটিটি পায় বাংলাদেশ। পঞ্চম উইকেটে ১০৮ বলে ৯১ রান যোগ করেন সৌম্য ও মুশফিকুর রহিম। ডাফির তৃতীয় শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ৫৭ বলে ৫টি চারে ৪৫ রান করেন মুশফিক। তার বিদায়ের পর সৌম্যকে কিছুটা সময় সঙ্গ দেন মেহেদী হাসান মিরাজ, এই জুটি থেকে আসে ৫৩ বলে ৬১ রান। ২৬ বলে ২৩ রান করে আউট হন মিরাজ। এই ম্যাচে সুযোগ পাওয়া তানজিম হাসান সাকিব ১১ বলে একটি ছক্কায় ১৩ রান করেন।
একটি ছাড়া বাংলাদেশের প্রতিটা জুটিতেই আছে সৌম্যর অবদান। অন্য প্রান্তে ভাঙনের সুর বেজে গেলেও তাতে কান দেননি তিনি। স্রোতের বিপরীতে ব্যাট চালিয়ে একাই দলকে এগিয়ে নিয়ে যান তিনি। পাঁচ বছর পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেঞ্চুরি করলেন তিনি। সর্বশেষ ২০১৮ সালে চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেন তিনি। বিদেশের মাটিতে তার খেলা ইনিংসটিই ওয়ানডেতে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ। নিউজিল্যান্ডের ডাফি ও ও'রোক ৩টি করে উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান মিলনে, ক্লার্কসন ও আদিথ্যিয়া আশোক।