‘এই ভূমিকাটা মজার এবং চ্যালেঞ্জিং’
বাংলাদেশের ক্রিকেটের অনেকটা অংশজুড়ে তার নাম। নানা সময়ে বিভিন্ন ভূমিকায় দেখা গেছে গাজী আশরাফ হোসেন লিপুকে। মাঝে একটা নির্দিষ্ট সময়ে সরাসরি ক্রিকেট নিয়ে কাজ করা থেকে নিজেকে অনেকটা গুটিয়ে রেখেছিলেন জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক। আবারও তিনি দেশের ক্রিকেটে ফিরলেন, এবার তার কাঁধে দল নির্বাচন করার গুরুদায়িত্ব। বিসিবির প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাকে। গুরুত্বপূর্ণ এই দায়িত্ব পেয়ে উচ্ছ্বসিত লিপু জানালেন, ভূমিকাটা মজার এবং চ্যালেঞ্জের।
দায়িত্ব নিতে জানা ৬৩ বছর বয়সী লিপুর প্রথম পরিচয় তিনি বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক ক্রিকেটার। দেশের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে অধিনায়ক ছিলেন তিনি। দেশের পক্ষে সাতটি ওয়ানডে খেলা লিপুর নেতৃত্বে ১৯৮৬ সালে প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপে খেলে বাংলাদেশ।
খেলোয়াড়ি জীবন শেষে হন জাতীয় দলের ম্যানেজার। এরপর বিসিবি পরিচালক, দায়িত্ব পালন করেন দীর্ঘদিন। বিসিবি পরিচালক হিসেবে সামলান গেম ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রধানের পদ, ছিলেন ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধানের দায়িত্বেও। বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেছেন লিপু। এবার নতুন দায়িত্ব নিয়ে দেশের ক্রিকেটে ফিরলেন তিনি।
দেশের দল গড়তে দেওয়ার দায়িত্ব পেয়ে উচ্ছ্বসিত লিপু। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে অনুভূতি জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, 'নিশ্চয়ই আনন্দিত। বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য যদি আমি কাজ করতে পারি, সেটা নিশ্চয়ই আনন্দের। এটা একটা নতুন দায়িত্ব আমার জন্য। ক্রিকেটের বিভিন্ন পর্যায়ে আমি কাজ করেছি এর আগে। নির্বাচনের জায়গাটা অসম্পূর্ণ ছিল।'
'যদি পূর্ণতার কথা বলা হয় তাহলে মাঠে খেলা, অধিনায়কত্ব করা, দলের ম্যানেজার হওয়া, ক্রিকেট সংগঠক হওয়া, ক্লাবের পরবর্তী পর্যায়ে বোর্ডের সঙ্গে কাজ করা এবং এই পর্যায়ে এসে জাতীয় দলের নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারাটা নিশ্চয়ই আানন্দের।' যোগ করেন তিনি।
একজন নির্বাচকের প্রধান ও একমাত্র উদ্দেশ্য থাকে সেরা দল গড়া। কাজটি নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতে চান লিপু, 'আমি যেন নিষ্ঠার সঙ্গে আমার নির্বাচক কমিটি নিয়ে এবং কোচ-অধিনায়কের সঙ্গে সমন্বয় করে সম্ভাব্য সেরা দল করতে পারি, সেটার জন্য আমার ঐকান্তিক প্রয়াস থাকবে। চেষ্টা করবো যতো বেশি খেলা দেখা যায়, অনুসরণ করা যায়। প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিয়ে সেরা দল নির্বাচন করার কর্তব্যটা আমি দায়িত্বের সঙ্গে পালন করার চেষ্টা করব।'
এর আগে বোর্ড থেকে নির্বাচকের পদসহ আরও অনেক দায়িত্বেই কাজ করার প্রস্তাব পেয়েছেন লিপু। বিভিন্ন কারণে আগে সাড়া না দেওয়া সাবেক এই অধিনায়ক এবার মনে করছেন, 'এটাই সময়।' তার ভাষায়, 'অনেক ধরনের প্রস্তাবই পেয়েছি। তবে আগে আমার মা অসুস্থ ছিলেন। কাজেই দায়িত্বশীল কোনো পদ নেওয়ার কোনো সুযোগই আমার ছিল না। করোনার সময়ে আমার মা মারা যান। সে সময় আসলে আমার এমন কাজে ভাবার সময় ছিল না।'
বোর্ড থেকে যারা যোগাযোগ করেছেন, তাদের কৌশল-মানসিকতার কারণে প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব নিতে আগ্রহী হয়েছেন লিপু। বোর্ড কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে তার মনে হয়েছে, দায়িত্বটি নিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটে অবদান রাখার চেষ্টা করা যায়। লিপু বলেন, 'এখন আমার ভাবার সুযোগ এসেছে, কারণ কোনো একটা দায়িত্ব নিলে সেটা সুষ্ঠুভাবে পালন করার মতো সময় তো আমার থাকতে হবে। বোর্ড কর্মকর্তাদের যারাই আমার সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করেছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলে আমার মনে হয়েছে, আমি দায়িত্বটা নিয়ে অবদান রাখতে পারি।'
সঠিক সিদ্ধান্তে দেশের ক্রিকেট এগিয়ে নেওয়ার জন্য গড়া বিশেষ কয়েকটি কমিটির একটি নির্বাচক কমিটি, আর সেই কমিটির প্রধান লিপু। পদ এবং নির্বাচনের দায়িত্ব; দুটোকেই চ্যালেঞ্জিং মনে করা লিপু বলেন, 'এই ভূমিকাটা অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং। একেক সময় একেকটা দলের সঙ্গে দিপাক্ষিক সিরিজ থাকে, তাদের শক্তিমত্তার ভিত্তিতে দল নির্বাচন করতে হয়। বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের জন্য ভিন্নভাবে আপনাকে দল নির্বাচন করতে হবে। এখানে একটা সুন্দর সমন্বয় দরকার।'
'আমরা তো একটা প্যানেল, কোচ ও অধিনায়কের সঙ্গে সুষ্ঠু সমন্বয়ের মাধ্যমে সেরা দল নির্বাচনের কাজটা অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং। বিশেষ করে বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের জন্য দল নির্বাচন করাটা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। ঘরের মাঠের দল নির্বাচন করার কৌশল এক রকম থাকে, দেশের বাইরের জন্য দল গড়তে গেলে সেখানে ভিন্ন কৌশল থাকে। প্রতিপক্ষ, কন্ডিশন বিবেচনায় দল গড়তে হয়। তো এই ব্যাপারটা মজার এবং চ্যালেঞ্জিং। অনেক সময় আস্থা রাখা এবং সেই অনুযায়ী ফলাফলের প্রভাবসহ আরও অনেক বিষয় থাকে।' বলেন তিনি।