লিটন-হৃদয় ঝড়ে সাকিবদের হারিয়ে ফাইনালে কুমিল্লা
দুই দলই দুর্বার ছন্দে, এক ও দুই নম্বর দল হিসেবে প্রথম কোয়ালিফায়ারে জায়গা করে নেয় রংপুর রাইডার্স ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। শেয়ানে শেয়ানে লড়াইয়ের এই ম্যাচটি জমবে, এমন প্রত্যাশা ছিল সবার। হলোও তেমনই, ব্যাটে-বলে ধুন্ধুমার লড়াই দেখা গেল রংপুর-কুমিল্লা ম্যাচে। যে লড়াইয়ে রংপুরের দেওয়া রান পাহাড় টপকে দারুণ জয় তুলে নিল কুমিল্লা, বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা টানা তৃতীয়বারের মতো উঠে গেল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ফাইনালে।
সোমবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম কোয়ালিফায়ারে রংপুর রাইডার্সকে ৬ উইকেটে হারিয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো বিপিএলের ফাইনালে উঠলো দলটি। আগের চার ফাইনালের সবকটিতেই বিজয় নিশান ওড়ায় কুমিল্লা, ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি আসরটিতে সবচেয়ে বেশি শিরোপা জেতা দল তারাই। আজ হারলেও ফাইনালে ওঠার দৌড় থেকে ছিটকে যায়নি রংপুর। এলিমিনেটর জেতা তামিম ইকবালের ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার খেলবেন সাকিব-সোহানরা।
লিগ পর্বে দুই দল ছিল সমান সমান। দুইবারের দেখায় রংপুর ও কুমিল্লা একটি করে ম্যাচ জেতে। আজও তাদের লড়াইয়ে থাকলো ঝাঁঝ, তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা। টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামে রংপুর। শুরুর ব্যাটসম্যানরা দলকে পথ দেখাতে না পারলেও দুর্বার এক ইনিংস খেলেন জিমি নিশাম, তার সঙ্গে অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহানের মাঝারি ইনিংস। ৬ উইকেটে ১৮৫ রান তোলে রংপুর। জবাবে প্রথম বলে উইকেট হারালেও অধিনায়ক লিটন কুমার দাস ও তাওহিদ হৃদয়ের দুর্বার জুটিতেই জয় অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায় কুমিল্লার, ৯ বল হাতে রেখেই জিতে যায় তারা।
বড় লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা দুঃস্বপ্নের মতো হয় কুমিল্লার। ফজল হক ফারুকীর করা ইনিংসের প্রথম ওভারের প্রথম বলেই ক্যাচ তুলে আউট হন সুনিল নারাইন। এমন শুরুর পরও দরকে কোনো চাপ বুঝতে দেননি দাপুটে ব্যাটিং করা লিটন ও হৃদয়। দ্বিতীয় উইকেটে ৮৯ বলে ১৪৩ রানের জুটি গড়েন তারা। এই জুটি গড়ার মাঝে দুজনই তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি।
তামিম ইকবালকে টপকে এবারের আসরে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়ে যাওয়া হৃদয় ৪৩ বলে ৫টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৬৪ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন। ১৩ ইনিংসে একটি সেঞ্চুরি ও ২টি হাফ সেঞ্চুরিসহ ৪০.৬৩ গড়ে ৪৪৭ রান করেছেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। ৪৪৩ রান নিয়ে দুই নম্বরে তামিম। মুশফিকুর রহিমের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে টানা দুটি আসরে ৪০০'র বেশি রান করলেন হৃদয়। তবে ছক্কা মারায় রেকর্ড গড়েছেন হৃদয়, এবারের আসরে তার মারা ২৪ ছক্কা এক আসরে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ।
হৃদয় আউট হওয়ার পর আরও কিছুটা সময় চলে লিটনের ব্যাটিং শো। ১৮তম ওভারে আউট হওয়ার আগে ৫৭ বলে ৯টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৮৩ রানরে দুর্বার এক ইনিংস খেলেন কুমিল্লা অধিনায়ক। এই ইনিংসটি দিয়ে অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে বিপিএলে দুই হাজার রান পূর্ণ করেছেন লিটন, এই তালিকার বাকি সবাইও বাংলাদেশি। জয়ের পথে বাকি থাকা সামান্য পথ পাড়ি দেন দুই বিদেশি অলরাউন্ডার মঈন আলী ও আন্দ্রে রাসেল। মঈন ১২ ও রাসেল ২ রানে অপরাজিত থাকেন। রংপুরের ফারুকী ২টি এবং আবু হায়দার রনি ও শেখ মেহেদি হাসান একটি করে উইকেট নেন।
এর আগে ব্যাটিং করা রংপুরের ইনিংসের সবচেয়ে বড় নাম জিমি নিশাম। দলের দুঃসময়ে ত্রাতার ভূমিকায় হাজির হওয়া নিউজিল্যান্ডের এই অলরাউন্ডার ৪৯ বলে ৮টি চার ও ৭টি ছক্কায় ৯৭ রানের ঝলমলে এক ইনিংস খেলেও অপরাজিত থাকেন। এ ছাড়া সোহান ২৪ বলে ৩০, রনি তালুকদার ১৩, শেখ মেহেদি ২২ ও নিকোলাস পুরান ১৪ রান করেন।
কুমিল্লার রাসেল ২টি উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান বিপিএলে অভিষিক্ত রোহানাত দৌলা বর্ষণ, তানভীর ইসলাম, মুশফিক হাসান ও সুনীল নারাইন। অস্বস্তির এক রেকর্ডে নাম উঠেছে পেসার মুশফিকের। ৪ ওভারে তার খরচা ৭২ রান, যা স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে খরুচে বোলিং। আগের সবচেয়ে খরুচে বোলিং ছিল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের পেসার আল আমিন হোসেনের। এবারের আসরেই কুমিল্লার বিপক্ষে ৪ ওভারে ৬৯ রান দেন তিনি।