জিততে হলে বিশ্ব রেকর্ড গড়তে হবে বাংলাদেশকে
একবার বেশিরভাগ ফিল্ডার সীমানায়, কিছুক্ষণ পরেই আবার ৩০ গজের মধ্যে। শ্রীলঙ্কার শেষ জুটি ভাঙতে বারবার পরিকল্পনা পরিবর্তন করতে হচ্ছিল বাংলাদেশকে। উপায় মিলছিল না, শেষ ব্যাটসম্যানকে সঙ্গে নিয়ে সাবলীল ব্যাটিং করে যেতে থাকেন সিলেট টেস্টে ব্যাট হাতে দুর্বার হয়ে ওঠা কামিন্দু মেন্ডিস। ১১১তম ওভারে অবশেষে থামেন কামিন্দু, থামে শ্রীলঙ্কার ইনিংস। কিন্তু লঙ্কানরা যে লক্ষ্য দিয়েছে, তা টপকে জিততে টেস্টের ইতিহাস পাল্টে দিতে হবে বাংলাদেশকে, গড়তে হবে বিশ্ব রেকর্ড।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে চলমান টেস্টের প্রথম ইনিংসে ২৮০ রানে অলআউট হয় শ্রীলঙ্কা। সেই দলটাই দ্বিতীয় ইনিংসে প্রায় দ্বিগুণ পথ পারি দিলো। প্রথম ইনিংসে ৬৮ ওভার ব্যাটিং করা সফরকারীরা এবার ১১০.৪ ওভার ব্যাটিং করলো, অধিনায়ক ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ও কামিন্দুর সেঞ্চুরিতে স্কোরকার্ডে জমা করলো ৪১৮ রান। প্রথম ইনিংসের ৯২ ও ৪১৮ রান মিলিয়ে বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়িয়েছে ৫১১ রান। টেস্ট ইতিহাসে সর্বোচ্চ সফল রানতাড়া ৪১৮, ২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেও দাপট দেখায় বাংলাদেশ। শুরুটা করে দেন অভিষিক্ত নাহিদ রানা। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে উইকেট তুলে নেন শরিফুল ইসলাম ও তাইজুল ইসলামও। ৬৪ রানেই ৪ উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ। দিমুথ করুনারত্নে ও ধনঞ্জয়ার ৪৯ রানের জুটিতে শেষ পর্যন্ত ৫ উইকেটে ১১৯ রান তুলে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করে শ্রীলঙ্কা।
নাইটওয়াচম্যান বিশ্ব ফার্নান্দোর সঙ্গে আগের দিনের শেষ টানেন ধনঞ্জয়া। আজ অবশ্য বেশি সময় টেকেনি এই জুটি। ২৪ বলে ৪ রান করা ফার্নান্দোকে ফিরিয়ে ব্রেকথ্রু এনে দেন খালেদ আহমেদ। তার লাফিয়ে ওঠা বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ফার্নান্দো। এরপর ধনঞ্জয়ার সঙ্গে যোগ দেন কামিন্দু, কয়েক মুহূর্তেই উইকেটে মানিয়ে নিয়ে দারুণ ব্যাটিং করে যান তিনি।
এরপর আবারও তাদের গল্প, প্রথম ইনিংসের মতো করেই এগোতে থাকেন তারা। আগের ইনিংসে ২০২ রানের জুটি গড়া ধনঞ্জয়া ও কামিন্দু দ্বিতীয় ইনিংসে ১৭৩ রান করেন। ধনঞ্জয়া ১০৮ রান করে ফেরার পর সেঞ্চুরি তুলে নেন কামিন্দুও। টেস্টের দুই ইনিংসেই এক দলের দুজন ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরি করার রেকর্ডে ধনঞ্জয়া-কামিন্দু তৃতীয়। ১০ বছর পরে এমন রেকর্ড গড়লেন কোনো দলের ব্যাটসম্যানরা। প্রথম কীর্তিটি অনেক আগের, ১৯৭৪ সালে।
ধনঞ্জয়া-কামিন্দুর জুটিরও রেকর্ড হয়েছে, এটাও টেস্ট ইতিহাসের মাত্র তৃতীয় ঘটনা। এক টেস্টে নির্দিষ্ট দুজন ব্যাটসম্যান টানা দুবার ১৫০ বা তার বেশি রানের জুটি গড়েছেন, এর আগে মাত্র দুটি ঘটনা ছিল। ১৯৩৮ সালে ইংল্যান্ডের এডি পেইন্টার ও পল গিব দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এই রেকর্ড গড়েন। এই রেকর্ডে দুই নম্বরে অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড ওয়ার্নার ও জো বার্নস, ২০১৫ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ইনিংসেই ১৫০ ছাড়ানো জুটি গড়েন তারা।
শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে ২৩৭ বলে ১৬টি চার ও ৬টি ছক্কায় ১৬৪ রানের দারুণ ইনিংস খেলেন কামিন্দু, মাত্র দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামা বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের এটাই ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস। দিমুথ করুনারত্নে ৫২, প্রবাথ জয়সুরিয়া ২৫ রান করেন। বাংলাদেশের মেহেদী হাসান মিরাজ ৪টি এবং নাহিদ রানা ও তাইজুল ২টি করে উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান শরিফুল ইসলাম ও খালেদ আহমেদ।