শঙ্কা উড়িয়ে রোমাঞ্চকর জয়ে বিশ্বকাপ শুরু বাংলাদেশের
ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে গড়পড়তা পারফরম্যান্সের পর যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে সিরিজ হার। প্রস্তুতি ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে নাজেহাল অবস্থা। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে নিয়ে সমালোচনার শেষ ছিল না। এমন একটা আবহ তৈরি হয়, যেন বাংলাদেশকে নিয়ে ভালো কিছু আশা করাটা দুঃসাহসিক কিছু। সব মিলিয়ে চাপের বোঝা মাথায় নিয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলতে নামতে হয়েছিল শান্ত-সাকিবদের। এই লড়াইয়ে অবশ্য বল হাতে অন্য বাংলাদেশের দেখা মিললো। যদিও লঙ্কানদের অল্প রানে আটকে জয়ের পথে থেকেও হারের শঙ্কায় পড়েছিল তারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চাপের বোঝা সরিয়ে, শঙ্কা উড়িয়ে জয় দিয়েই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু করলো নাজমুল হোসেন শান্তর দল।
শনিবার ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে 'ডি' গ্রুপের ম্যাচে রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে শ্রীলঙ্কাকে ২ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে লঙ্কানদের বিপক্ষে এটাই বাংলাদেশের প্রথম জয়, আগের দুই সাক্ষাতে হেরেছিল তারা। সব মিলিয়ে টি-টোয়েন্টিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৭ ম্যাচে এটা বাংলাদেশের ষষ্ঠ জয়। এই জয়ে সুপার এইটে ওঠার পথ সুগম হলো বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কা দুই ম্যাচেই হারলো, পরের দুই ম্যাচে জিতলেও তাদের পথ কঠিনই থাকবে। বাংলাদেশ পরের তিন ম্যাচে দুটিতে জিতলে চলে যাবে সুপার এইটে। তাদের পরের তিন প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা, নেদারল্যান্ডস ও নেপাল।
টস জিতে শ্রীলঙ্কাকে ব্যাটিংয়ে পাঠান শান্ত। অধিনায়কের সিদ্ধান্ত যথার্থ প্রমাণ করে দুর্বার বোলিং করেন বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতা রিশাদ হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদরা। তাদের অসাধারণ বোলিংয়ের সামনে ৯ উইকেটে ১২৪ রানে থামে শ্রীলঙ্কা। ছোট লক্ষ্য তাড়ায় দুঃস্বপ্নের শুরুর পর লিটন কুমার দাস ও তাওহিদ হৃদয়ের গড়া দারুণ জুটিতে সহজেই জেতার পথে ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু নুয়ান থুসারা-ভানিন্দু হাসারাঙ্গার দারুণ প্রত্যাবর্তনে ২২ রানে ৫ উইকেট খুইয়ে হারের শঙ্কাতেই পড়ে যায় তারা। শেষ পর্যন্ত অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ব্যাটে নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের জয়।
ছোট লক্ষ্য তাড়ায় শুরুতেই হোঁচট খায় বাংলাদেশ। দুই ওভারের মধ্যেই ফিরে যান দুই ওপেনার সৌম্য সরকার ও তানজিদ হাসান তামিম। ধনঞ্জয়া ডি সিলভার বল বুঝতে না পেরে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সৌম্য। পরের ওভারে তানজিদের স্টাম্প উপড়ে নেন থুসারা। চেষ্টা করেও চাপ সামলে সামনে এগোনে পারেননি শান্ত। দলীয় ২৮ রানে থামেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, ১৩ বলে ৭ রান করেন তিনি। খেই হারিয়ে বসা দলের হাল ধরেন লিটন ও হৃদয়। চাপ কাটিয়ে চতুর্থ উইকেটে দারুণ একক জুটি গড়েন তারা, যেখানে হৃদয় আসল কাজটি করেন।
৩৮ বলে ৬৩ রানের জুটি গড়েন লিটন ও হৃদয়। এই জুটি গড়ার মাঝে তাণ্ডব চালানো হৃদয়। জুটিতেও তার অবদান বেশি, ২০ বলে ৪০ রান করেন তিনি। শেষ দিকে বাংলাদেশকে চাপে ফেলে দেওয়া হাসারাঙ্গাকে টানা তিনটি ছক্কা মারেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। দলকে ৯০ পেরিয়ে আউট হন হৃদয়, তার ৪০ রানের ইনিংসটি ২০ বলে একটি চার ও ৪টি ছক্কায় সাজানো। তার বিদায়েই ছন্দ হারায় বাংলাদেশ। কিছুক্ষণ আউট হন লিটন, দীর্ঘদিন পর রানের দেখা পাওয়া উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যান ৩৮ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় ৩৬ রান করেন।
টি-টোয়েন্টি মেজাজে রান না করতে পারলেও লিটনের ইনিংসটি কার্যকর ছিল। এক পাশ আগলে রাখার কাজটি করেন তিনি, অন্য প্রান্তে ঝড় তোলেন হৃদয়। লিটন ফেরার পর দ্রুতই আউট হন সাকিব আল হাসান, রিশাদ ও তাসকিন। শেষ ২ ওভারে জয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন দাঁড়ায় ১১ রান, হাতে দুই উইকেট। এমন কঠিন সময়ে অভিজ্ঞতার ছাপ রাখেন মাহমুদউল্লাহ। তানজিম হাসান সাকিবকে সঙ্গে নিয়ে ৬ বল হাতে রেখেই দলের জয় নিশ্চিত করেন তিনি। ১৩ বলে একটি ছক্কায় ১৬ রানে অপরাজিত থাকেন মাহমুদউল্লাহ। শ্রীলঙ্কার পক্ষে দুর্দান্ত বোলিং করা থুসারা ৪ ওভারে ১৮ রানে ৪টি উইকেট নেন। ২টি উইকেট পান হাসারাঙ্গা। একটি করে উইকেট শিকার করেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ও মাথিশা পাথিরানা।
এর আগে ব্যাটিং করা শ্রীলঙ্কার শুরুর পথচলাটা খারাপ ছিল না। তাদের শুরু দেখে মনে হয়েছিল, বড় লক্ষ্য দিতে যাচ্ছে দলটি। ২ উইকেটে পাওয়ার প্লে থেকে ৫৩ রান তোলে প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মানা দলটি। কিন্তু ১৫তম ওভারে টানা দুই উইকেট তুলে নিয়ে লঙ্কানদের দিক ভুলিয়ে দেন ম্যাচ রিশাদ। পরের ওভারে আরেকটি উইকেট নিয়ে প্রতিপক্ষকে আরও চাপে ফেলেন তিনি। এরপর মুস্তাফিজ, তাসকিনরা শ্রীলঙ্কাকে বেশি দূর এগোতে দেননি।
বাংলাদেশের দারুণ বোলিংয়ের সামনে শ্রীলঙ্কার পাঁচজন ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের রান করতে পেরেছেন, রানের খাতা খুলতে পারেননি চারজন ব্যাটসম্যান। শুরুতে শ্রীলঙ্কাকে ঠিক পথে রাখা পাথুম নিসাঙ্কা দারুণ ব্যাটিংয়ে ইনিংসের সর্বোচ্চ রান করেন। মুস্তাফিজের শিকারে পরিণত হওয়া ডানহাতি ওপেনার ২৮ বলে ৭টি চার ও একটি ছক্কায় ৪৭ রান করেন।
২৬ বলে ২১ রান করেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। বাকি কেউ ২০ রানের বেশি করতে পারেননি। কুশল মেন্ডিস ১০, চারিথ আসালাঙ্কা ১৯ ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস ১৬ রান করেন। অভিষেকই আলো ছড়ানো রিশাদ ৪ ওভারে ২২ রান খরচায় ৩টি উইকেট নেন, টি-টোয়েন্টিতে এটাই তার সেরা বোলিং। মুস্তাফিজের শিকারও ৩ উইকেট, তবে তিনি আরও কৃপণ বোলিং করেন। ৪ ওভারে ১৭ রান দেন বাঁহাতি এই পেসার।
চোট কাটিয়ে ফেরা তাসকিন শুরুতে ভালো না করতে পারলেও দ্রুতই ছন্দ খুঁজে নেন। ডানহাতি এই পেসার ৪ ওভারে ২৫ রানে ২টি উইকেট নেন। রিশাদের মতো তানজিম সাকিবেরও আজ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অভিষেক হলো। ঝলমলে না হলেও অভিষেক পর্বটা মনে রাখার মতোই হয়েছে তার। ডানহাতি তরুণ এই পেসার ৪ ওভারে ২৪ রানে একটি উইকেট পান। খরুচে সাকিব আল হাসান ৩ ওভারে ৩০ রান দিয়ে উইকেট পাননি। এক ওভার করা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের খরচা ৪ রান।