স্বপ্নের জয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস
দারুণ, অসাধারণ, অবিশ্বাস্য কিংবা অভূতপূর্ব; কোনো বিশেষণই যেন এখন যথেষ্ট নয়। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের নামের পাশে যোগ করা যেতে পারে, এমন বিশেষণ খুঁজতে সময় খরচ করতে হবে আপনাকে। মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের দ্বিতীয় দিন থেকে দাপট দেখানো শুরু করা মুমিনুল হকের দল শেষ পর্যন্ত থাকলো একই ধারায়। ব্যাটে বলে শাসন করে ঐতিহাসিক জয় তুলে নিল বাংলাদেশ।
সিরিজের প্রথম টেস্টে নিউজিল্যান্ডকে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। অবশেষে ধরা দিল অধরা স্বপ্নের জয়। নিউজিল্যান্ডকে প্রথমবারের মতো টেস্টে হারালো বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে যেকোনো ফরম্যাটে এটা বাংলাদেশের প্রথম জয়। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দুই সাইকেল মিলিয়ে এটা বাংলাদেশের প্রথম জয়। এবারের সাইকেলে তৃতীয় ম্যাচে এসে জয়ের স্বাদ পেলেন মুমিনুলরা। আগের সাইকেলের সাত ম্যাচের ছয়টিতে হারে বাংলাদেশ, একটি ড্র হয়।
কিউইদের বিপক্ষে জয়ের অভিজ্ঞতা হয় ২০১০ সালে। ঘরের মাটিতে ওয়ানডে দিয়ে জয়যাত্রা শুরু, সেবার মিলেছিল হোয়াইটওয়াশের আনন্দ। ১১ বছর পর এসে ঘরের মাটিতেই প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি সিরিজ জেতে বাংলাদেশ। এবার তাদের মাটিতে টেস্টে বিজয় কেতন ওড়ালেন মুমিনুল, এবাদত, তাসকিনরা।
নতুন বছরের শুরুটা এরচেয়ে আর ভালো হতে পারতো না বাংলাদেশের জন্য। গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর ঘরের মাটিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে দুঃস্বপ্নের সময় কাটে তাদের। চট্টগ্রাম টেস্টে হারের পর বৃষ্টি হারার মিরপুর টেস্টে মাত্র আড়াই দিনে ম্যাচ হারে বাংলাদেশ। এমন একটি সিরিজ শেষে ভঙ্গুর অবস্থায় নিউজিল্যান্ডে যান মুমিনুল। সেখানে গিয়ে করোনা, কোয়ারেন্টিনে কঠিন সময় যায় বাংলাদেশের। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে মুমিনুলবাহিনী রচনা করলো নতুন এক অধ্যায়।
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারতের মতো দলগুলোকে টেক্কা দিয়ে টেস্টের মুকুট জিততে হয় তাদের। ঘরের মাঠে খেলা হলে সব দলকেই ক্রিকেট দীক্ষা দেয় তারা। ঘরের মাঠে যেন তারা হারতেই জানে না, সর্বশেষ ২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হারে তারা।
এশিয়ার কোনো দলের জয়ের হিসাব কষলে ফিরতে হবে সেই ২০১১ সালে, সেবার পাকিস্তানের বিপক্ষে হেরেছিল কিউরা। ১১ বছর পর এশিয়ার কোনো দল হিসেবে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট জয়ের কীর্তি গড়লো বাংলাদেশ। যে ম্যাচে চারদিন কর্তৃত্ব দেখালো বাংলাদেশ, চ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ড থেকে গেল দর্শকের ভূমিকায়।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০ বছর ধরে টেস্ট খেলে আসছে বাংলাদেশ। ২২-এ এসে ফুরালো অপেক্ষা। ২০০১ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট খেলে বাংলাদেশ, সেই ম্যাচটি ছিল হ্যামিল্টনে। এরপর কিউইদের বিপক্ষে ১৫টি টেস্ট (এই ম্যাচ বাদে) খেলে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ১২টিতেই হার। তিনটি ড্র ছিল, সবগুলো ম্যাচ ছিল বাংলাদেশের মাটিতে। ১৬তম ম্যাচে এসে রেকর্ডটা বদলে নিলো মুমিনুলবাহিনী।
মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের প্রথম দিনটা সমানে সমান লড়াই হলেও পুরো পাঁচ দিনই ছিল বাংলাদেশের দাপট। দারুণ বোলিংয়ে নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংস ৩২৮ রানে থামিয়ে দেয় বাংলাদেশ। পরে ৪৫৮ রান তুলে প্রথম ইনিংসেই ১৩০ রানের লিড নেয় মুমিনুলবাহিনী।
এই রান পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশকে লিড দিতে গিয়ে ম্যাচসেরা এবাদত হোসেন ও তাসকিন আহমেদের বোলিং তোপের মুখে সুবিধা করতে পারেনি কিউইরা। ১৬৯ রানেই শেষ হয় তাদের ইনিংস। ৪৬ রানে ৬টি উইকেট নেন এবাদত, যা তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। প্রায় ৯ বছর ও ৪৭ ম্যাচ পর বাংলাদেশের কোনো পেসার টেস্টে ৫ বা তার বেশি উইকেটের স্বাদ পেলেন। তাসকিনের শিকার ৩ উইকেট, একটি উইকেট নেন মিরাজ। এরপর ৪০ রানের লক্ষ্য ২ উইকেটে ছাড়ায় বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংস: ৩২৮
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৪৫৮
নিউজিল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস: ৭৩.৪ ওভারে ১৬৯ (ল্যাথাম ১৪, ইয়াং ৬৯, কনওয়ে ১৩, টেলর ৪০, রবীন্দ্র ১৬, বোল্ট ৯*; তাসকিন ৩/৩৬, এবাদত ৬/৪৬)।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: (লক্ষ্য ৪০) ১৬.৫ ওভারে ৪২/২ (সাদমান ৩, শান্ত ১৭, মুমিনুল ১৩*, মুশফিক ৫*; বোল্ট ০/৪, সাউদি ১/২১, জেমিসন ১/১২)।
ফল: বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা: এবাদত হোসেন।
সিরিজ: দুই ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে।